|
|
|
|
পাহাড় থেকে সমুদ্র, থিম ডানা মেলেছে বনগাঁ-হাবরায় |
সীমান্ত মৈত্র • বনগাঁ |
আধুনিকতা ও থিমের মিশেলে উত্তর ২৪ পরগনার এই সীমান্ত শহর ও তার পাশ্ববর্তী এলাকার পুজো অনেক আগেই রাজ্যে একটা জায়গা করে নিয়েছে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি তা বিভিন্ন পুজো কমিটির উদ্যোগ দেখে বোঝা গেল।
কোথাও মণ্ডপ সেজে উঠছে কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ রকের আদলে। কোথাও বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের আদলে। কোনও পুজো কমিটি থিম হিসাবে তুলে ধরছে দার্জিলিংকে। রয়েছে হীরক রাজার দেশে বা বৃদ্ধাশ্রম। মণ্ডপ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বোতাম থেকে চট, হোগলাপাতা, প্লাস্টিকের কাপ, খেজুর গাছের আঁশ প্রভৃতি। প্রতিমা এখানে গৌণ, মণ্ডপই প্রধান আকর্ষণ।
বনগাঁ শহরের বুক চিরে চলে গিয়েছে ইছামতী নদী। অধুনা স্রোতহীন এই নদীর দু’পারের পুজোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রাণপণ প্রতিযোগিতা। বনগাঁর বড় পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম রামনগর রোডের ধারে ১২-র পল্লি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো। এ বার উদ্যোক্তাদের পছন্দ মহারাষ্ট্রের নারায়ণ মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। ফাইবার স্টোন দিয়ে তৈরি হচ্ছে কয়েকটি ওভারগেট। পাশেই রামনগর স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর এ বার ৫০ বছর। রাইসানা হিলসে রাষ্ট্রপতি ভবনের আদলে মণ্ডপে থাকছে কুমোরটুলির প্রতিমা। কোড়ারবাগানের নোবেল স্পোর্টিং ক্লাব তাদের ২৫তম বর্ষে রাজস্থানের একটি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে। উপকরণ হোগলা পাতা। প্রতিমার থিম বিশ্বে উষ্ণায়নের (গ্লোবাল ওয়ার্মিং) প্রভাব। যশোহর রোডের পাশে ঐতিহ্যবাহী ক্লাব অভিযান সঙ্ঘ। এ বার তাদের উপহার বেঙ্গালুরুর শিবমন্দির। মণ্ডল তৈরির উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে নান রঙের, নানা সাইজের বোতাম। আনা হচ্ছে কৃষ্ণনগরের প্রতিমা। আলোয় তুলে ধরা হচ্ছে বিভিন্ন মডেল। |
|
ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য। |
প্লাস্টিকের রঙিন কাপ দিয়ে কেরলের কাদম্বরি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে বনগাঁ রেল স্টেশনের কাছে বৈজয়ন্তী ক্লাবের। থিম হচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা হীরক রাজার দেশে। থাকবে রাজা, পাঠশালা, গুপী, বাঘা। সুভাষনগর সেবা সমিতির থিম বৃদ্ধাশ্রম। জীবন্ত মডেল দিয়ে সাজানো হবে মণ্ডপ। মুস্তাফীপাড়া যুবগোষ্ঠীর মণ্ডপ কাল্পনিক মন্দিরের আদলে। রেটপাড়া স্পোর্টিং ক্লাব তাদের মণ্ডপ তৈরি করছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আদলে। অন্দরসজ্জা প্লাইউডের। মণ্ডপের ভিতরে থাকবে রানি ভিক্টোরিয়ার মূর্তি। প্রতাপগড় স্পোর্টিং ক্লাবের থিম কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ রক। দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে আদলে ওভার গেট। মণ্ডপ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে প্লাইউড ও মাদুরকাঠি। জাগ্রত সঙ্ঘ ২৫ তম বর্ষে মণ্ডপ তৈরি করছে দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের আদলে। থাকবে পেল্লায় বড় ঝাড়বাতি। শ্রীশ্রী আনন্দময়ী মাতৃমন্দিরের থিম বাংলার কুঁড়েঘর। বাঁকুড়ার জমিদার বাড়ির আদলে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে গাঁধীপল্লি বিবেকানন্দ স্পোর্টিংয়ের। আলোয় থাকবে স্বামীজির জন্ম সার্ধশতবর্ষ।
ইছামতীর অন্যপারে অনেক বছর ধরেই বড় পুজো ঐক্য সম্মিলনীর। মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ রকের আদলে। মণ্ডপে দর্শকেরা সমুদ্র দেখতে পাবেন। এগিয়ে চল সঙ্ঘের থিম এ বার দার্জিলিং। দেখা যাবে চা বাগানে মহিলাদের চা পাতা তোলার দৃশ্য। টয়ট্রেন। চড়কতলা, জ্ঞানবিকাশিনী সঙ্ঘ, ডায়মন্ড ক্লাবের পুজো নজর কাড়বে। গোপালনগরের ফ্রেন্ডস কর্নার তাদের দ্বিতীয় বছরে মণ্ডপ তৈরি করছে বিধানসভা ভবনের আদলে। আলোয় তুলে ধরা হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাবলী। পাল্লা দক্ষিণপাড়া পুজো কমিটির থিম মেদিনীপুরের গ্রাম-সংস্কৃতি। এখানে থাকবে নবদুর্গা।
দর্শক টানার দৌড়ে গত কয়েক বছর ধরে সমানে সমানে পাল্লা দিয়ে চলেছে হাবরা, অশোকনগরের পুজো কমিটিগুলি। গোবরডাঙা গড়পাড়া বিধান স্মৃতি ক্লাব এ বছর থিম হিসাবে হাজির করেছে শিবের দশাবতার। পাট, সুতো ইত্যাদি দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করছেন পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির শিল্পীরা। অশোকনগরের উল্লেখযোগ্য পুজোগুলির মধ্যে ভারতী ক্লাবের পুজোয় দেখা যাবে কর্নাটকের গোবিন্দ মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। ব্যবহার করা হচ্ছে প্লাই, থার্মোকল। মহীশূর রাজপ্রসাদের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে শক্তিসাধনা ক্লাব। ৪-এর পল্লি উত্তর অঞ্চলের মণ্ডপ আবার রাজস্থানের কোনও এক রাজপ্রাসাদ। মণ্ডপ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ছোট শিশি। দুর্গা এখানে তিনমূর্তি। থিম হল স্বর্গ, মর্ত, পাতাল। থাকবে ৩৮টি মূর্তি।
উত্তর হাবরা ইউনাইটেড ক্লাবের পুজোয় এ বার রাজস্থানের মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। তৈরি হচ্ছে ঝিনুক, পাট দিয়ে। আমরা সবাই ক্লাবের পুজো উদ্যোক্তাদের ভাবনায় এ বার ঠাঁই পেয়েছে বিহারের বুদ্ধমন্দির। হোগলাপাতা ও খেজুর গাছের অংশ দিয়ে তা ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত শিল্পীরা। মণ্ডপে থাকবে বুদ্ধমূর্তি। মণ্ডপ তৈরির চিন্তা-ভাবনায় উত্তর হাবরা সেবা সংঘ এ বার আন্তর্জাতিক। তাদের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে অস্ট্রিয়ার বিষ্ণুমন্দিরের আদলে। তৈরি হচ্ছে চট, কাঁসা, পিতল দিয়ে। থাকছে চন্দননগরের আলো।
বড় বড় পুজো উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সামাজিক কাজের মধ্যে দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে পিছিয়ে নেই ছোট ছোট পুজোগুলিও। প্রতিবছরের মতো এ বছরও প্রকাশিত হতে চলেছে বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকা, পুজোসংখ্যা। আবহাওয়া দফতর পুজোর সময় বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়ে দিলেও বনগাঁ, হাবরা, অশোক নগরের কোথাও পুজোর আয়োজনে তা প্রভাব ফেলতে পারেনি। |
|
|
|
|
|