|
|
|
|
ভোট নিয়ে বিতর্ক কংগ্রেস-তৃণমূলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রঘুনাথগঞ্জ |
তৃণমূলের বিরুদ্ধে জঙ্গিপুরের ভোটে জেলা কংগ্রেসের আনা ‘বিশ্বাসঘাতকতার’ অভিযোগ খারিজ করে দিলেন মৎস্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেসের সুব্রত সাহা। তিনি সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত বিধায়ক। জঙ্গিপুরে নামমাত্র ভোটে কংগ্রেস প্রার্থীর জয়ের পর থেকে জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বার বার অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূল প্রার্থী না দিলেও তাদের কর্মী-সমর্থকরা কংগ্রেসকে সমর্থন করেননি। মূলত সাগরদিঘির দিকে ইঙ্গিত করেই তাদের অভিযোগ, তারা কোথাও সিপিএমের সঙ্গে, কোথাও বা বিজেপি বা অন্য কোনও দলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তাদের হয়েই ভোট দিয়েছেন। খোদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “তৃণমূল, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যাকে যেখানে খুশি সুবিধে মতো ভোট দিয়েছে। জঙ্গিপুরে তাদের প্রার্থী না দেওয়ার কারণ তাদের প্রার্থী হওয়ার মতো ক্ষমতাই নেই সেখানে।”
কংগ্রেসের আনা ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুব্রতবাবু বলেন, ‘জোট ভেঙে ২০১১ সালে সাগরদিঘিতে জেলা কংগ্রেস তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়। কংগ্রেসের নির্দল প্রার্থী পেয়েছিলেন ২২ হাজার ভোট। অর্থাৎ ১৫.৫৭ শতাংশ। এবারে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছে ৪৪ হাজার ভোট অর্থাৎ ৩৮.৮৭ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ দ্বিগুণের বেশি। এই বাড়তি ভোট পেয়েছে কংগ্রেস তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকদের কাছ থেকেই।”
সুব্রত বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে কথা দিয়েছিলেন জঙ্গিপুরে তাঁর ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় প্রার্থী হলে তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল কোনও প্রার্থী দেবে না। সৌজন্যবশত তাই জঙ্গিপুরে প্রার্থী দেয়নি তৃণমূল। দলের কর্মীরাও সেই সৌজন্যকে মর্যাদা দিয়ে কাজ করেছেন কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে। কারণ নেত্রীর নির্দেশ ছিল জঙ্গিপুরে কোনও মতেই সিপিএমকে জিততে দেওয়া যাবে না। তাই অভিজিৎবাবুর এই জয় তৃণমূলের জন্যই সম্ভব হয়েছে। বলা যায় রাষ্ট্রপতিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘উপহার’ এই জয়।”
সুব্রতবাবুর ওই দাবিকে অবশ্য এক কথায় উড়িয়ে দিয়েছেন সাংসদ মান্নান হোসেন। জঙ্গিপুরের ভোট গণনার দিন শনিবার দিনভর গণনাকেন্দ্রে হাজির ছিলেন তিনি। মান্নানের কথায়, “২০১১ সালে সাগরদিঘিতে যে সব কংগ্রেস কর্মী জোটের ভোট করার নামে তৃণমূলে চলে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে বহু কর্মী আবার কংগ্রেসে ফিরে এসেছেন। তারাই কংগ্রেস প্রার্থীকে সাগরদিঘিতে বাড়তি ভোট দিয়েছেন। সুব্রতবাবুর যুক্তি যদি মানতে হয় তবে সাগরদিঘিতে ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ও আমিনুলের মিলিত ভোট ছিল ৫৩.৫৯ শতাংশ। অথচ এবারে কংগ্রেস পেয়েছে সেখানে মাত্র ৩৮ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার, ফিরে আসা দলীয় কর্মীরা ছাড়া বর্তমান তৃণমূল সমর্থকরা ভোট দিয়েছেন হয় বিজেপিকে, নতুবা অন্য কাউকে। এমনকী সিপিএমকে তৃণমূল কর্মীরা ভোট দেওয়ার কারণেই ২০১১ সালে সাগরদিঘিতে সিপিএমের পাওয়া ৩৪.৮৫ শতাংশ ভোট এক লাফে এক বছরের মধ্যে ৪১.১৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। কারণ সিপিএম এই সময়ের মধ্যে এমন কোনও ভাল কাজ করেনি যে, তারা এ বারে বেশি করে ভোট পাবে।” মান্নানের দাবি, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দেখবেন আরও বহু তৃণমূল কর্মী সমর্থক কংগ্রেসে ফিরে আসবেন।”
২০১১ সালে সাগরদিঘিতে অধীর চৌধুরীর অনুগত প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন আমিনুল ইসলাম। তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা যে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন, বুথ ভিত্তিক ফলাফলই তার প্রমাণ। ৮৪ নম্বর বংশিয়া বুথে সুব্রতবাবু পান ৫৭৩টি ভোট, বিজেপি পায় ৩১টি ভোট। এবারে ওই বুথে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ১৭০টি ভোট, বিজেপি পেয়েছে ৩৭০টি ভোট। ৮৫ নম্বর রামনগর বুথে ২০১১ সালে তৃণমূল পায় ৪৫০টি ভোট। এবারে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ১০৯টি ভোট। সেখানে বিজেপি’র ভোট ২৯ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩১৫ এবং সিপিএমের ভোট বেড়েছে ১৬৮ থেকে ২১৫। একই ছবি উলাডাঙার ৮৯এ বুথে। তৃণমূল সেখানে ৪০২টি ভোট পেলেও এবারে কংগ্রেস পেয়েছে ১৩২টি ভোট। বিজেপি’র ১২টি ভোট বেড়ে হয়েছে ২২৩। বালিয়ার ৮১ নম্বর বুথে কংগ্রেস এবারে পেয়েছে ১৩৩টি ভোট, যেখানে তৃণণূল পেয়েছিল ৩৬১টি ভোট। বিজেপি’র ভোট সেখানে ৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৪৯। এরকম অজস্র হিসেব দেখলে স্পষ্ট হবে তৃণমূল, কংগ্রেসকে এবারে ভোট দেয়নি। তৃণমূল ছেড়ে যারা কংগ্রেসে ফিরেছে, এবারে কংগ্রেসকে তারাই ভোট দিয়েছে এবং তাতেই কিছুটা ভোট বেড়েছে কংগ্রেসের।” |
|
|
|
|
|