মধুর প্রতিশোধ! লিয়েন্ডার পেজ প্রথমে খানিকটা সে রকম ইঙ্গিত দিতে চাইলেও পরক্ষণেই কি নিজেকে সামলে নিলেন? স্বাভাবিক আবেগকে চাপা দিলেন সতর্ক পেশাদারি মন্তব্য করে!
অবশেষে সত্যের জয়! ভেস পেজ সরকারি ভাবে বলছেন, ওই ভাবে ব্যাপারটা এত দিন পরে তাঁরা আর দেখছেন না, অলিম্পিক-মহাবিতর্ক এখন অতীত। কিন্তু মহেশ ভূপতির হাতে ‘লাঞ্ছিত’ হওয়ার দুঃস্বপ্ন কি মাত্র তিন মাসেই ভুলে যাওয়া সম্ভব লিয়েন্ডার বা তাঁর বাবার পক্ষেও?
ডাবলস সঙ্গী বাছাই নিয়ে ম্যারাথন অলিম্পিক-কাজিয়ার পরে রবিবারই লি-হেশ প্রথম বার মুখোমুখি হয়েছিলেন কোর্টে। এবং সাংহাই মাস্টার্স ফাইনালে লিয়েন্ডার পেজ-রাদেক স্টেপানেক জুটি এক সেট পিছিয়ে পড়েও সুপার টাইব্রেকে ৬-৭ (৭-৯), ৬-৩, ১-০ (১০-৫) হারান মহেশ ভূপতি-রোহন বোপান্না জুড়িকে। যে দুই দেশজ সতীর্থ অলিম্পিকে তাঁর পার্টনার হতে সরাসরি অস্বীকার করেছিলেন। এবং ফেডারেশনকে রীতিমতো চাপ দিয়ে নিজেদের জুটির অলিম্পিক-টিকিট জোগাড় করে নিয়েছিলেন। লিয়েন্ডার মিক্সড ডাবলসে সানিয়া মির্জাকে সঙ্গী পেলেও ডাবলসে তাঁকে দুর্বল পার্টনার বিষ্ণু বর্ধনকে নিয়েই অলিম্পিকে খেলতে হয়েছিল। |
“আজকে ম্যাচটা আমাদের তিন জন ভারতীয়ের মধ্যে খানিকটা ব্যক্তিগত লড়াই ছিল,” ম্যাচ শেষে লিয়েন্ডার প্রথমে বললেও পরক্ষণেই ব্যাপারটাকে হালকা করতে যোগ করেন, “তবে সেটা তো চার জন ডাবলস প্লেয়ারের মধ্যে তিন জন একই দেশের হলে সে রকম হয়েই থাকে। বরং রাদেক আমাদের তিন জনের ভেতর হাজির থেকে কোর্টে মজা, ম্যাচটাকে উপভোগ করার মশলা এনেছিল। রিল্যাক্সড রেখেছিল। জোক করেছে। হাসিয়েছে।”
টেনিসমহলে কেউ কেউ এমনও ভেবেছিল যে, এই ম্যাচে লিয়েন্ডার না মহেশ কিংবা বোপান্নার শরীর তাক করে একটা-দু’টো সার্ভিস করে বসেন। কারণ গত বছর ওয়ার্ল্ড টিম টেনিসে জন ম্যাকেনরোর সঙ্গে কোর্টে বিবাদের পরে টেনিস কিংবদন্তির শরীর লক্ষ করে একটা সার্ভিস করে আমেরিকায় তীব্র বিতর্ক তৈরি করেছিলেন লিয়েন্ডার। কলকাতার সেই ডাকাবুকো ৩৯ বছরের টেনিস তারকার বাবা ভেস পেজ মুম্বই থেকে মোবাইলে বললেন, “অলিম্পিক অনেক মাস হল হয়ে গিয়েছে। ওদের মধ্যে ঝগড়াও এখন অতীত। এটা ঠিক যে, ওদের মধ্যে আবার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠা আর হয়তো কোনও দিন সম্ভব নয়। কিন্তু সত্যের জয় কিংবা প্রতিশোধ-টোধের মতো বাচ্চা-বাচ্চা, নাটকীয় কোনও বিশেষণ দেওয়ারও মানে হয় না লিয়েন্ডারের আজকের জয়কে।” |
সিনিয়র পেজ আরও বললেন, “গতকাল ও এই ফাইনালটা নিয়ে ফোনে আমায় বলেছিল, ‘ওদের (মহেশ-বোপান্না) এ বছরটা মামুলি গেলেও সাংহাইয়ে খুব ভাল খেলছে। অনেক দিন পর কোনও মাস্টার্স ফাইনালে ওদের দেখতে পেয়ে ভালই লাগছে। লন্ডনে পরের মাসে ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনালসে নামার জন্য এই টুর্নামেন্টে খুব ভাল করাটা ওদের ভীষণ দরকার। কিন্তু আমার কাছে এটা আর একটা ম্যাচ ছাড়া কিছু নয়। আমরা (লিয়েন্ডার-রাদেক) তো লন্ডনের টিকিট আগেই পেয়ে গিয়েছি।’ লিয়েন্ডারের কথা শুনে তখনই বুঝেছিলাম, ও কোনও টেনশন নিয়ে ম্যাচটা খেলছে না।” ভেস পেজ নিজেও দাবি করলেন, অলিম্পিক-কাজিয়ার পরে লন্ডনে লিয়েন্ডারের ম্যাচ নিয়ে তিনি যতটা টেনশনে ছিলেন, সে রকম কোনও অবস্থা এ দিন তাঁর মোটেই ছিল না।
পিতা-পুত্রের এহেন কথাবার্তায় ভারতীয় টেনিসমহলে কেউ কেউ ভাবছেন, তা হলে কি লি-হেশ পেশাদারি সম্পর্ক আরও একবার জোড়া লাগতে পারে? যদিও সাংহাইয়ে এ দিনই লিয়েন্ডার ২০১৩-য় রাদেক স্টেপানেককে নিয়েই এটিপি সার্কিটে বছরভর ডাবলস খেলার কথা সরকারি ভাবে ঘোষণা করেছেন। পরের বছর মহেশেরও সার্কিটে নতুন পার্টনার হচ্ছেন ড্যানিয়েল নেস্টর। তবে জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, “ডেভিস কাপ নির্বাচকেরা তরুণ প্রজন্মের দলই পরের বছরও রাখবে ঠিকই করে রেখেছে। লি-হেশ সেক্ষেত্রে ভারতীয় ডেভিস কাপ দলে পেনশনভোগী হয়ে গিয়েছে। এখন লি-হেশ ডেভিস কাপ নিয়ে অন্য কিছু ভেবে থাকলে আলাদা কথা।” |