কে জানত, জন্মদিনে আমার জন্য এমন একটা অশুভ উপহার অপেক্ষা করে আছে!
সত্যি বলতে, আমার এত দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনে কখনও এমন হয়নি। ১৪ অক্টোবর আমার জন্মদিন। আর এই সময়টায় বরাবর দেখে এসেছি, মন আপনা-আপনি কেমন যেন ভাল হয়ে যায়। জীবনে ভাল ভাল ঘটনা ঘটে। আপনাদের মতো আমিও জন্মদিনে উপহার পেতে প্রচণ্ড ভালবাসি। কিন্তু আলগা ভাল লাগার ব্যাপারটা হয় অন্য কারণে। অক্টোবর থেকে আস্তে আস্তে শীত পড়ে। নতুন ক্রিকেট মরসুমের গন্ধ, ভোরের শিশির, হাওয়ায় শিরশিরে ভাব, উৎসবের প্রস্তুতিতে কোমর বেঁধে নেমে পড়া, বিকেলের বাতাসে ভুট্টার গন্ধ উত্তর ভারতে শীতের আগমনী এ ভাবেই হয়। আর এই সময়ে দেখেছি, ক্রিকেটমাঠে আমার পারফরম্যান্স কখনও খারাপ হয় না। ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মোহালিতে দু’টো ইনিংসে ৬৭ আর সেঞ্চুরি করেছিলাম। সবচেয়ে বড় কথা, আমার টিম জিতেছিল তিনশোরও বেশি রানে। তার পর ধরুন গত বছরের ১৪ অক্টোবর। ইংল্যান্ডকে আমরা ওয়ান ডে-তে একশোরও বেশি রানে হারালাম। ৩২ বলে ৩৩ করেছিলাম আমি। তিন দিন পর দিল্লিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আবার রান পেলাম। এ বার ৮৪।
কিন্তু এই বছরেই সব কেমন যেন পাল্টে গেল!
১৩ অক্টোবর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের বিরুদ্ধে এ বার নামলাম। আর কপালে শুধু হারই যে জুটল তাই নয়, নিজে করলাম শূন্য!
জন্মদিন হোক চাই না হোক, কোনও টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৫২ রানে হারলে নিজেকে হতভাগ্য ছাড়া কিছু মনে হয় না। সবচেয়ে বড় কথা ম্যাচটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আর হারের যাবতীয় দায় শুধু বালাজির চাপিয়ে দেওয়াটা অন্যায় হবে। বালাজিকে দুর্দান্ত বোলার বলেই আমি মনে করি। ওর শুধু একটা দিন খারাপ গিয়েছে। যা ক্রিকেটের এই ফর্ম্যাটে অনেক তাবড়-তাবড় বোলারের ভাগ্যেও ঘটে থাকে।
আসলে এই উইকেটে আমাদের ব্যাটিং আরও ভাল হওয়ার দরকার ছিল। আমার নিজের উচিত ছিল, এই পরিবেশে একটু কপিবুক ক্রিকেট খেলা। ঝুঁকি কম নিয়ে উইকেটে পড়ে থাকা। মানে বলতে চাইছি, নতুন বলটা ঠিকঠাক সামলে অঙ্ক করে আক্রমণে যাওয়া। আসলে চার রানের মধ্যে তিন উইকেট, কালিসের চোট এ সবের পর পরই ম্যাচটা ওদের মুঠোয় চলে গেল। কপাল ভাল যে, কালিসের আঙুলের হাড় ভাঙেনি। সোমবার ঠিক করব, অকল্যান্ড এসেস-এর বিরুদ্ধে ওকে নামাব কি না। দিল্লি বোলাররা সত্যি ভাল বল করেছে। সেই কৃতিত্বটা তো ওদের দিতেই হবে। ইরফানের সুইং আর মর্কেলের বাউন্সই মোটামুটি আমাদের বারোটা বাজিয়ে দিল। আসলে দু’জনে দু’রকম চ্যালেঞ্জ এনে হাজির করল আমাদের সামনে। তবে ইরফানের জন্য বেশ ভাল লাগছে। ও নিজের সুইং, ছন্দ দু’টোই খুঁজে পেয়েছে।
কেকেআরের কথায় ফিরি। সুনীল নারিন আবার বোঝাল ওর জাতটা কেন আলাদা। ওকে দুর্ধর্ষ দেখাল এমন একটা পিচে যা কি না স্পিনারদের সাহায্যই করে না। কৃপণ বোলিং করে ব্রেট লি-ও নিজেকে চেনাল। এই ইতিবাচক দিকগুলো পরের ম্যাচগুলোতে কাজে দেবে নিশ্চয়ই। তবে আমি একটু দুশ্চিন্তায় সাকিব আল হাসানকে নিয়ে। ওকে কোথায় খেলাব ভেবে পাচ্ছি না। সাকিবের মতো একজন ক্রিকেটারকে ডাগ আউটে বসিয়ে রাখাটা খুব কঠিন কাজ। আমি তো চাই সাকিব আর নারিন দু’জনেই টিমে থাকুক। স্পিনটা দেখে নিক। আপনাদের কী মনে হয়? দেখি, টিমের সতীর্থরা কী বলে এটা নিয়ে। যাই হোক, সেঞ্চুরিয়ন থেকে কেপ টাউন পৌঁছেছি। জন্মদিন এখনও পর্যন্ত চুপচাপই কেটেছে। গত রাতে টিমের সঙ্গে কেক কাটলাম। আশা করছি, অকল্যান্ড ম্যাচ থেকেই আমার ভাল সময় শুরু হবে। ওহ, আরও একটা কথা বলি। স্যান্ডটন সান মল থেকে পার্স আর কেনা হয়নি। আমার একটা পছন্দ হল। নাতাশার আর একটা। এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত মতের মিল হয়নি। কী করা যাবে, এ সব তো হয়েই থাকে! |