|
|
|
|
শান্তির পরশ অদীক্ষিত শিল্পীর হাত ধরে |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
বাকি রাজ্যে যখন থিমের পুজো ভাল করে আড়মোড়াই ভাঙেনি, তখনই বড়োভূমির এক যুবক, গত ১২ বছর ধরে নাগাড়ে থিমের ঠাকুর বানিয়ে চলেছেন! গত এক দশকে, কত কী বদল দেখেছে বড়োভূমি। বড়ো চুক্তি হল। বড়ো রাজ্যের জন্য আন্দোলন মিটল, ফের ফিরে এল। গোষ্ঠী সংঘর্ষ বদলে দিল জেলার মানবকাঠামো। তবু, সেই সব অশান্তির মধ্যেই বাসুগাঁওয়ের বাসিন্দা বছর কুড়ির এক যুবক কোনও প্রথাগত শিক্ষাদীক্ষা ছাড়াই একদিন মূর্তি গড়তে শুরু করেন। সেই শুরু। হাটুরে বাবার ছেলে সঞ্জয় চন্দ বনে গেলেন প্রতিমাশিল্পী। তাঁর হাত ধরেই, অশান্ত চিরাং থেকে অভয়া মায়ের পরশ ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়।
সংঘর্ষক্লান্ত চিরাং জেলায়, হাতাহাতি, হিংসা আপাতত শিকেয় তোলা। পুজো এসে গিয়েছে যে! তাই আপদ-বালাই দূরে ঠেলে বড়োভূমির শিল্পীরাও আপাতত মাটির কাজ শেষ করতে ব্যস্ত। তাদের মধ্যে সঞ্জয় চন্দের মতো থিম-শিল্পীদের তো আরও নাজেহাল দশা। আপাতত রাজমা, ঝিনুক, ডিংডিঙা ফুলের পাপড়ি নিয়ে মেতে আছেন তিনি। এই বছরের ছ’টি ‘সঞ্জয়-স্পেশ্যাল’ প্রতিমায় ফিনিশিং টাচ দেওয়ার পালা চলছে।
সঞ্জয়ের নিজের মুখেই শোনা গেল, “বংশে কেউ কখনও ঠাকুর গড়েননি। ১২ বছর আগে প্রথমবার নিজের খেয়ালেই, মুগডাল দিয়ে সরস্বতী ঠাকুর গড়েছিলাম। সকলেরই খুব পছন্দ হয়ে গেল। তারপর, প্রথম দুর্গা প্রতিমা গড়লাম শলা-কাঠি দিয়ে। সেটাও হিট। আর থামাথামি নেই। তবে এখনও এটা আমার পেশা নয়, নেশাই।” |
|
নিজের গড়া প্রতিমার সঙ্গে সঞ্জয়। উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি। |
পরপর, সিডি, তার, বেত, চুমকি, খেজুর গাছের ছাল, কড়ি, ময়ুরপুচ্ছ, পাট, শোলা, বোতাম, ঝিনুক, নানা বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, বোতলের ছিপি, কাঠ, কড়ির দুর্গা তৈরি হয়েই চলেছে।
গুয়াহাটি সঞ্জয়বাবুকে চিনেছে ২০০৯ সাল থেকে। সৌজন্যে রেহাবাড়ি বিলপাড়ের পুজো। গত বছর ছিল রাজমা। তার আগের বছর ঝিনুক। এই বছরের তুরুপের তাস হাজার বাক্স চক। বিলপাড়ও থিম পুজোর দিশারি। ইস্পাত, পশম, বাঁশ, কাঠের গুঁড়ো, দেশলাই, ময়ুরের পাখা, কাচ কীসের প্রতিমা না বানিয়েছে বিলপাড়। গত বছর প্রতিমা গড়তে বিলপাড়ের সঞ্জয় চন্দ প্রায় ৫০ কিলেগ্রাম রাজমা খরচ করেছেন। সেই প্রতিমার ছবি দেখে, বহু কমিটির পছন্দ হয়ে যায়। ফলে, এই বছর, রাজমার প্রতিমা গড়ছে বরপেটা রোড শ্যামা পল্লি, বঙ্গাইগাও সূর্য সেন রোড এবং বাসুগাঁও সুভাষনগর। নিউ বঙ্গাইগাঁও রোডের রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম রোড বরাত দিয়েছে শঙ্খ-ঝিনুক-কড়ির প্রতিমার। আর মুক্তো রংয়ের ডিংডিঙা ফুলের পাপড়ি দিয়ে বাসুগাঁও টাউন কমিটি রোডের প্রতিমা বানাচ্ছেন সঞ্জয়। তাঁর ভাই রাজা চন্দ ভাই, ভাগ্নে শুভ মোদক, ভাইপো কিরণ চন্দ, ছোটন দাস ও শালা সোনাই দাসও হাতে হাতে সঙ্গত করছেন।
প্রতিমা বানিয়ে পেট চলে না। তাই, ওষুধের হোলসেলারের আড়তে মাস মাইনের চাকরি করতে হয়। কিন্তু বৈশাখ থেকেই শুরু হয়ে যায় কমিটি ধরার কাজ। আর পুজোর আগের তিনমাস পুরোপুরি প্রতিমার কাছে কেটে যায়। কালীপুজোর বরাতও আসতে শুরু করেছে। গোপালগঞ্জে রাজমা আর বঙ্গাইগাঁও থেকে কড়ি-ঝিনুকের মা কালী গড়বেন সঞ্জয়। থিম-ঠাকুর নির্মাতার মাথায় একটাই চিন্তা, এরপর, কীসের ঠাকুর? |
|
|
|
|
|