|
|
|
|
জঙ্গিপুরে স্বস্তি, নব উদ্যমে কেন্দ্র-বিরোধিতায় কারাট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
জঙ্গিপুর লোকসভা উপনির্বাচনের ফলাফলে স্বস্তিতে সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের কথায়, “আমাদের ফলাফল খুবই ভাল হয়েছে। কংগ্রেসের জয় এসেছে কোনও মতে। এটাকে টেকনিক্যাল জয় বলা যেতে পারে!”
জঙ্গিপুরে তৃণমূল প্রার্থী দেয়নি ঠিকই। কিন্তু ফলাফল দেখে সিপিএম নেতৃত্বের মত, কংগ্রেস এবং তৃণমূলের তিক্ততা ব্যালট বাক্সে প্রভাব ফেলেছে। অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের এত কম ভোট পাওয়ার পিছনে তৃণমূলের একটি বড় অংশের কংগ্রেসের প্রতি অসহযোগিতাই কারণ বলে মনে করছেন তাঁদের একাংশ। সিপিএম চাইছে, লোকসভা নির্বাচন নির্ধারিত ২০১৪ সালেই হোক অথবা এগিয়ে আসুক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেসের এই বিভাজন যেন বজায় থাকে। ইউপিএ থেকে তৃণমূল নেত্রীর সমর্থন প্রত্যাহারের পরে, দু’তরফের মধ্যে লোকসভা ভোটের আগে শীর্ষ স্তরে সমঝোতা হওয়ার আপাতত সম্ভাবনা নেই। রাজ্য স্তরেও যেন কংগ্রেস-তৃণমূল কোনও সমঝোতায় আসতে না-পারে, প্রকাশ্যে না-বললেও মনেপ্রাণে তেমনই চাইছে সিপিএমের একাংশ। তৃণমূল, বিজেপি এবং কংগ্রেসঅর্থাৎ বাম-বিরোধী ভোট যত ভাগাভাগি হয়, সিপিএমের ততই সুবিধা হবে বলে মনে করছে তারা।
জঙ্গিপুরের ফলাফলে বিজেপি-র উত্থান নিয়ে প্রকাশ্যে অবশ্য আজ সরব হননি কারাট। শুধু বলেছেন, “এর আগের বার সেখানকার নির্বাচনে আমরা ১ লক্ষ ২৫ হাজার ভোটে হেরেছিলাম। |
|
সাংবাদিক বৈঠকে প্রকাশ কারাট। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পি টি আই |
সেই তুলনায় এ বারে মাত্র আড়াই হাজার ভোটের ব্যবধান। ফলাফল যথেষ্ট ভাল হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, সিপিএম প্রার্থী মোজাফ্ফর হোসেনের কাছাকাছি নামেই আর এক জন প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল, ভোটারদের বিভ্রান্ত করার জন্য। সেই ‘নকল মোজাফ্ফর’ পেয়েছেন প্রায় ১১ হাজার ভোট!
গত এক মাসে বিদেশি বিনিয়োগ থেকে শুরু করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি প্রত্যেকটি বিষয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তূঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন মমতা। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রসঙ্গ তুলে বামেদের সাবেকি প্রতিবাদের হাওয়া কার্যত কেড়ে নিয়েছেন তিনি। এই মুহূর্তে সিপিএমের কৌশল, যে ভাবে হোক সেই কেন্দ্র-বিরোধী পরিসর ফিরে পাওয়া, যা নাকি বিগত তিন দশক ধরে তাদের একচেটিয়া ছিল। আর তাই দেশ জুড়ে মনমোহন সরকারের ‘জনবিরোধী’ নীতিগুলির বিরুদ্ধে নতুন উদ্যমে সরব হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। একই সঙ্গে মনমোহনের দলের থেকে মমতাকে দূরে রাখতে কংগ্রেসের সঙ্গেও তলে তলে কিছুটা কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা তৈরি করার চেষ্টা হতে পারে দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত।
কেন্দ্রীয় কমিটির তিন দিনের বৈঠক শেষে আজ কারাট বলেছেন, “আগামী মাসে কেন্দ্রের জন-বিরোধী নীতির প্রতিবাদে গোটা দেশের ছোট-বড় শহরে আমরা প্রতিবাদ-সভা করব। যাতে দেশে একটিও বিদেশি পুঁজির সুপারমার্কেট না-হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য আন্দোলন করা হবে।” রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি হ্রাসের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-ও। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে মনমোহন সরকারকে ‘কোণঠাসা’ করতে অন্য দলগুলির সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন কারাট। মমতা ইতিমধ্যেই ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথা বলেছেন।
কিন্তু তাঁর পথ অনুসরণ অথবা বিজেপি-র সঙ্গে যৌথ ভাবে সরকারকে আক্রমণ করবেন কি না, সে সব এখনই স্পষ্ট করেননি কারাট। একই প্রশ্নে আজ কলকাতায় সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক সুধাকর রেড্ডি বলেছেন, অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করানোর মতো সংখ্যা সংসদে একক ভাবে মমতা, মুলায়ম সিংহ বা মায়াবতী, কারও নেই। তাঁরা অবশ্যই এই প্রশ্নে সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু অনাস্থার বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। বরং, পেনশন ও বিমা বিলের উপরে ভোটাভুটি তাঁদের কাছে আকর্ষণীয় হবে বলে রেড্ডির বক্তব্য। |
|
|
|
|
|