|
|
|
|
জরুরি ছিল এফডিআই, চিঠি সুব্বারাওয়ের |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নিয়ে বাম-বিজেপি-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা যতই এককাট্টা হোন, দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে এ ছাড়া পথ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও। গত ৮ অক্টোবর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে লেখা এক চিঠিতে সরকারের এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়ে সুব্বারাওয়ের বক্তব্য, শেষ পর্যন্ত সরকার খুচরো ব্যবসা, পেনশন ও বিমা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারায় বিনিয়োগকারীদের কাছে সঠিক বার্তা গিয়েছে।
ইতিমধ্যেই খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় পথে নেমেছে প্রায় সব বিরোধী দলই। প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি চালু-সহ একগুচ্ছ সংস্কারের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে সরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি সম্প্রতি দিল্লির রামলীলা ময়দানে সভাও করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। নভেম্বর জুড়ে বিদেশি লগ্নি-বিরোধী নানা কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছে সিপিএম। সরকারের নীতির প্রতিবাদে সরব বিজেপি-ও। কিন্তু সংস্কার প্রশ্নে অনড় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ-সহ কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, দেশের যা আর্থিক অবস্থা, তাতে দ্রুত সংস্কার চালু করতে না পারলে পরিস্থিতি মোকাবিলা কঠিন হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকেই সমর্থন জানালেন সুব্বারাও।
চিঠিতে সুব্বারাও জানান, ২০১০-১১-তে ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি কেন কম এসেছিল, তা নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সুব্বারাওয়ের বক্তব্য, অনেক দেশই ওই সময়ে আর্থিক সঙ্কটে ভুগছিল। তুলনায় ভারতের অভ্যন্তরীণ আর্থিক হাল ছিল ভাল। কিন্তু তা সত্ত্বেও অন্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় ভারতে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের হাল খারাপ ছিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সমীক্ষা, সরকারি নীতির অনিশ্চয়তার ফলেই ভারতে বিনিয়োগ করা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছিল আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে অনিশ্চয়তা, শ্রম খাতে বেশি খরচ ও অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে উদ্বেগ।
সুব্বারাও জানান, ২০১২-এর এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে মূলধনের প্রবাহ খতিয়ে দেখেছেন তাঁরা। লগ্নি টানতে এখন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ আর্থিক সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। সুব্বারাওয়ের বক্তব্য, সে কারণেই নীতিপঙ্গুত্ব কাটিয়ে কেন্দ্রকে বিনিয়োগকারীদের পক্ষে উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে কেন্দ্রকে বার বার অনুরোধ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
ভারতে বিদেশি প্রত্যক্ষ লগ্নি ও বিদেশে ভারতীয় সংস্থাগুলির লগ্নির তুলনামূলক চিত্রও দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তাতে মোটের উপরে ভারতে বিদেশি লগ্নির বেহাল দশাই ধরা পড়েছে। তবে চিদম্বরমের মতে, ভারতীয় সংস্থাগুলির বিদেশে বিনিয়োগ সে সব দেশের পরিস্থিতির উপরে নির্ভরশীল। আর ভারতের অর্থনীতির স্বাস্থ্যের উপরে নির্ভরশীল এ দেশে বিদেশি লগ্নির অবস্থা। তবে নীতিপঙ্গুত্বই যে ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির পথে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তা প্রকারান্তরে স্বীকারই করে নিয়েছেন তিনি।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের মতে, ২০১২-তে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৬.৫%। ২০১৩-এ ৭.৩%। গড় অভ্যন্তরীণ জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি)-র বৃদ্ধি নিয়েও আশা জাগিয়েছে অর্থ মন্ত্রকের সমীক্ষা। কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার কথায়, “কোনও কোনও ক্ষেত্রে ১০০% প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির ব্যবস্থাও করতে চায় কেন্দ্র। বণিকসভা ফিকির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করতে ‘ইনভেস্ট ইন্ডিয়া’ নামে একটি কোম্পানিও তৈরি করা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|