জঙ্গিপুর অতীত। জোটের জের কাটিয়ে এ বার ভোটের ময়দানে মুখোমুখি হতে প্রস্তুত প্রাক্তন দুই শরিক তৃণমূল ও কংগ্রেস। রাষ্ট্রপতি-পুত্রের শূন্য আসনেই সেই লড়াইয়ের প্রথম মহড়া হওয়ার সম্ভাবনা।
অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় সাংসদ হয়ে যাওয়ায় নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন এখন অনিবার্য। বীরভূমের ওই আসনে তৃণমূল এবং কংগ্রেস, দু’পক্ষই প্রার্থী দেবে বলে কোমর বাঁধছে। জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমর্থন তুলে নেওয়ার পরেই। কিন্তু রাষ্ট্রপতি-পুত্র কংগ্রেসের প্রার্থী বলে সৌজন্য দেখিয়ে পাল্টা লড়াইয়ে যাননি তৃণমূল নেত্রী। পরবর্তী কালে তাঁর মনোভাবে কোনও নাটকীয় পরিবর্তন না-এলে নলহাটিতে আর কোনও সৌজন্যের আড়াল থাকছে না। জোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সেখানে ত্রিমুখী লড়াইয়েরই সমূহ সম্ভাবনা। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, ইউপিএ থেকে তৃণমূল বেরিয়ে আসার পরে রাজ্যের রাজনৈতিক চালচিত্র ঠিক কী রকম, জঙ্গিপুরে তার পরীক্ষায় বসেননি মমতা। নলহাটিই সেই অর্থে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৃণমূলের প্রথম সরাসরি লড়াই।
জঙ্গিপুরের সৌজন্য ছাপিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল সম্পর্কে তিক্ততাই যে এখন বাস্তব, তার প্রকট ইঙ্গিত রবিবার ধরা পড়েছে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মন্তব্যে। সিপিএমের পরে এ বার কংগ্রেসের সঙ্গেও মেলামেশা বন্ধ করার নিদান দিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়! বনগাঁ স্টেডিয়াম থেকে এ দিন হাবরার বাণীপুর পর্যন্ত তৃণমূলের মোটর বাইক মিছিলের উদ্বোধন করতে গিয়ে জ্যোতিপ্রিয় বলেছেন, “সিপিএমের পাশাপাশি কংগ্রেসও এখন আমাদের রাজনৈতিক শত্রু। পঞ্চায়েত ভোটে মাথায় ঘোল ঢেলে এদেরকে উৎখাত করতে হবে! পঞ্চায়েত ভোটেই বোঝা যাবে, এই জেলায় ওদের কত ধানে কত চাল!” সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসকেও তাঁরা এক পংক্তিতে বসিয়ে মেলামেশা বন্ধ করতে বলছেন বলে ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশিই খাদ্যমন্ত্রীর দাবি, তৃণমূল নেত্রীর ‘কৃপা’ ছাড়া জঙ্গিপুরে অভিজিৎবাবুর জেতা সম্ভব হত না।
এই আবহেই তপ্ত হয়ে উঠতে পারে নলহাটি বিধানসভার লড়াই। যে আসনটি ১৯৬৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা বামেদের দখলে ছিল। পরিবর্তনের হাওয়ায় এবং জোটের সুবাদে গত বছর বিধানসভা ভোটে অভিজিৎবাবু হারিয়েছিলেন ফ ব-র দীপক চট্টোপাধ্যায়কে। মহাকরণে পরিবর্তনের পরে রাজ্যে এখন বিজেপি আগের চেয়ে বেশি ভোট পাচ্ছে। মূলত সংখ্যালঘু-প্রধান কিছু ছোট দলও কিছু ভোট কাটছে। সদ্যই জঙ্গিপুর যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই অবস্থায় নলহাটিতে কংগ্রেস এবং তৃণমূল আলাদা প্রার্থী দেওয়া মানে প্রকৃতপক্ষে বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি শুরু করতে চাইছে ফ ব। বাম-বিরোধী ভোটের ভাগাভাগি মানে তাদের লাভ, এই অঙ্ক তাদের মাথায়।
রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী তথা তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “জঙ্গিপুরে যা হওয়ার, হয়ে গিয়েছে। নলহাটিতে আগের বার জোট ছিল বলে কংগ্রেস লড়েছিল। এ বার ওখানে আমরা প্রার্থী দেব। তবে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আমাদের দলনেত্রী।” নলহাটিতেও যদি রাষ্ট্রপতির পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত কেউ প্রার্থী হন? ওই নেতার বক্তব্য, “সে সব নিয়ে ভাবছি না। আমরা লড়ব, কংগ্রেস থাকবে, বিজেপি বা অন্য কেউ, যারা থাকার থাকবে!” পক্ষান্তরে, কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতা রবিবার বলেন, “জোটই যখন নেই, আমরা প্রার্থী দেব। শুধু নলহাটিই নয়, তৃণমূলের দখলে-থাকা কোনও আসনেও উপনির্বাচন হলে আমরা সেখানে লড়ব!”
নলহাটিতেই আপাতত জোট-বিচ্ছিন্ন দুই প্রাক্তন শরিকের সম্মুখ সমর! |