একজন দুই যমজ সন্তানের জননী বিশ্বের মঞ্চে তাঁর লড়াই ও সাফল্যে, গর্বিত দেশ। টানা ১১ বছর ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন দ্বিতীয়জন তাঁর প্রতিবাদে সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে বাধ্য হয়েছে সরকারও।
প্রথমজন ভারতীয় মহিলা বক্সার মেরি কম। আর অন্য জন সমাজকর্মী ইরম শর্মিলা চানু।
দু’জনে সম্পূর্ণ আলাদা জগতের মানুষ হলেও তাঁদের মধ্যে একটি সাধারণ মিল আছে। দু’জনেই মণিপুরের বীর সন্তান। দু’জনেই বিশ্বের কাছে মণিপুরকে নতুন পরিচিতি দিয়েছেন।
হাজার কিমি দূরে থাকলেও বীরভূমের রামপুরহাটে এ বার সে দূরত্ব এক অর্থে মুছেই গিয়েছে। কারণ, ওই দুই মণিপুরী-কন্যার অদম্য মানসিক শক্তিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে রামপুরহাট নবীন ক্লাবে এ বারের পুজোর থিম কিন্তু উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মণিপুরই। |
কেন?
আজকের দিনেও বহু ক্ষেত্রেই মেয়েদের অবহেলার চোখে দেখা হচ্ছে। রাজ্য, রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ সর্বত্রই ধর্ষণ, নারী নির্যাতন-সহ নানা সামাজিক ও মানসিক অত্যাচারের শিকার তাঁরাই। পাশাপাশিই আবার আছে দুই মণিপুরী কন্যার লড়াইয়ের ছবি। পুজোর উদ্যোক্তারা জানালেন, তাঁদের সেই লড়াইয়ের প্রতীকী রূপকেই মা দুর্গার সঙ্গে মিশিয়ে সারা বিশ্বে ঘটে চলা নারী নির্যাতনের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে নবীন ক্লাব।
সারা মণ্ডপ জুড়ে রয়েছে মণিপুরী সংস্কৃতির নিদর্শন। মণিপুরী আদিবাসী সংস্কৃতির আদলে তৈরি হয়েছে মহিষাসুর। দুর্গা ও অন্যান্য মূর্তির আভরণে ও অলঙ্কারেও পড়েছে মণিপুরী সংস্কৃতির ছাপ। মণ্ডপের ভেতরে স্থান পেয়েছে মেরি কম ও ইরম শর্মিলা চানুর ছবি। পাশাপাশি রয়েছে নানা যুগের নারী নির্যাতনের টুকরো মডেল। দর্শক টানতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে দৃশ্যায়নের ব্যবস্থাও থাকছে।
নবীন ক্লাবের পুজো এ বারে পড়ল বারো বছরে। গত চার বছর থেকে থিম পুজো শুরু করেছে এই ক্লাব। উদ্যোক্তাদের পক্ষে উজ্বল ধীবর বলেন, “মহিলাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সারা বিশ্বেই ক্রমবর্ধমান। নারীরা এখনও অবহেলিত, নির্যাতিত। সেখানে মণিপুরের এই দুই বীরকন্যা আজ সারা বিশ্বে বন্দিত।” তিনি আরও জানালেন, ওই দুই কন্যার ‘মূর্তি’কে প্রতিমার মধ্যে এনে দেবীর মানবী সত্তা জাগানোর প্রয়াস নেওয়ার পাশাপাশি নারী নির্যাতন বন্ধের আবেদনও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আর সামগ্রিক রূপায়ণে নিরলস ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় মগ্ন ক্লাবের অধিকাংশ খেটে খাওয়া দিনমজুর পরিবারের সদস্যেরাই।
মণিপুরের শিল্পসংস্কৃতিকে আশ্রয় করে নারী নির্যাতন রোধে, এ বার পুজোয় নবীন ক্লাবের হাতিয়ার ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের এক ছোট্ট রাজ্যের দুই বীর কন্যাসন্তানই। |