এক বধূর অভিযোগের ভিত্তিতে চার তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করল বর্ধমান থানার পুলিশ। অক্টোবরের গোড়ায় বর্ধমানের নাড়িগ্রামে ওই চার কর্মী-সহ মোট ১৯ জনের বিরুদ্ধে মারধর ও এক বধূর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। ঘটনাস্থল থেকেই ধরা হয় কার্তিক বাগ, গণেশ বাগ, রাজেশ বাহাদুর ও আতিকুর রহমান নামে ওই চার তৃণমূল কর্মীকে। কিন্তু বর্ধমানের তৃণমূল নেতা তথা কাউন্সিলর খোকন দাস তাদের গ্রেফতার করতে দেননি অভিযোগ। পরে অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দারা থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখালে ওই দিনই পুলিশ ওই চার জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হচ্ছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত ৪ অক্টোবর বর্ধমানের নাড়িগ্রামের দাসপাড়ায় শরৎচন্দ্র দাস নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ঢুকে রাস্তায় বালি ফেলার জন্য টাকা দাবি করেছিলেন স্থানীয় তৃণমূলের কর্মীরা। সেই বক্তি টাকা দিতে অস্বীকার করে রাস্তায় পড়ে থাকা বালি তুলে নেন। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই কর্মীরা তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এর পরে শরৎচন্দ্রবাবু বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানতে যান। সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেশী রামপ্রসাদ রাজ, তাঁর স্ত্রী পুষ্প রাজ, বুচ মাল ও খোকন আচার্য।
গত ১২ অক্টোবর বর্ধমান থানায় দায়ের করা লিখিত পুষ্পদেবী জানিয়েছেন, পাড়ায় ঢোকার মুখেই এক দল লোক লাঠি, লোহার রড, টাঙ্গি, তরোয়াল নিয়ে তাঁদের আক্রমণ করে। তাঁর স্বামী, বুচা মাল ও খোকন আচার্য গুরুতর জখম হয়। তাঁরও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। পুষ্পদেবীর দাবি, ওই ঘটনায় জড়িত মোট ১৯ জনই তৃণমূলের বর্ধমান শহর কমিটির সভাপতি খোকন দাসের অনুগামী। ঘটনাস্থল থেকেই চার জন তৃণমূল কর্মীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু খোকনবাবু থানায় গিয়ে তাদের গ্রেফতারে বাধা দেন বলে অভিযোগ। পরে তাঁর হস্তক্ষেপেই ওই চার জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রতিবাদে ১২ তারিখ বাসিন্দারা থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিক্ষোভের জেরে পুলিশ ওই চার জনকে গ্রেফতার করে।
ঘটনাস্থল আটক করেও ওই চার জনকে গ্রেফতার কেন করা হয়নি তার সদুত্তর দিতে পারেননি বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “১২ অক্টোবর পুষ্পদেবী অভিযোগ দায়ের করার পরে ওই চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্য অভিযুক্তদের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা চলছে।”
যদিও তৃণমূল নেতা খোকন দাসের দাবি, “ওই এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই দলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট চলেছে। ওই চার জনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলে আমি আইসি-কে বলেছিলাম, দু’পক্ষকে মুখোমুখি বসিয়ে সমস্যার সমাধান করুন। পুলিশ এই কথা শুনে ওঁদের থানা থেকেই জামিনে ছেড়ে দেয়। আমি ওঁদের ছাড়াতে যাইনি।” কিন্তু ফের তাদের গ্রেফতার করা প্রসঙ্গে খোকনবাবুর বক্তব্য, ‘‘সেটাই তো বুঝতে পারছি না। দলের বড় মাপের নেতারা এ ব্যাপারে আইসিকে জিজ্ঞাসা করবেন।” |