বহু দিন ধরেই নানা দুষ্কর্মের অভিযোগ উঠছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষ আগে নজর দিলে এমন ঘটনা ঘটত না, ছাত্র সংসদ অফিসে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পরে এমনটাই দাবি রূপনারায়ণপুরে পলিটেকনিক কলেজের পড়ুয়া ও আশপাশের বাসিন্দাদের।
কলেজে এক দল পড়ুয়া নানা রকম অপকর্ম করে বলে অনেক দিনের অভিযোগ ছাত্রছাত্রীদের। কিন্তু প্রকাশ্যে মুখ খুলতে ভয় পান তাঁরা। এই সুযোগ নিয়ে কিছু ছাত্র এক দল বহিরাগতকে সঙ্গে নিয়ে দিনের পর দিন দুষ্কর্ম করে চলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সব ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, কলেজ চত্বরে প্রায়ই বিকেল-সন্ধ্যায় মদ্যপানের আসর বসত। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেননি। |
এই সব পড়ুয়াদের অভিযোগ, এই সব অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ছাত্র সংসদের সহ-সম্পাদক সাম্য মণ্ডল। রূপনারায়ণপুর এলাকার যুবক মিথিলেশ ওঝাও দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত। ঘটনাচক্রে, দু’জনই গণধর্ষণের মামলায় মূল অভিযুক্ত। পুলিশ জেনেছে, সাম্য কাঁকসার বাসিন্দা। তিনি কলেজের পাশে একটি মেসে থাকেন। ছাত্রনেতা হওয়ার সুবাদে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছাত্র সংসদ অফিসেই থাকতেন। রূপনারয়ণপুর লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের হাসিপাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মিথিলেশ প্রতি দিন দুপুরে কলেজে চলে আসত। রাত পর্যন্ত সে এলাকাতেই থাকত। তার বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
গণধর্ষণের মামলা পরে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে কলেজের অধ্যক্ষ ঋতুপর্ণ বসুকে। কলেজে যে বহিরাগতদের যাওয়া-আসা ছিল, সে কথা স্বীকার করেছেন ঋতুপর্ণবাবুও। কলেজে নিরাপত্তারক্ষী রয়েছে। বিকাল সাড়ে ৪টায় কলেজ বন্ধ হওয়ার পরে চত্বরে কারও থাকার কথা নয়। ছাত্র সংসদ অফিসও বন্ধ থাকার কথা। সবাইকে বের করে দিয়ে তালা দেওয়ার কথা নিরাপত্তারক্ষীদের। তা হলে দিনের পর দিন এ সব অনিয়ম কী ভাবে হচ্ছিল? ঋতুপণর্বাবু বলেন, “আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বহিরাগতেরা ও অভিযুক্ত ছাত্রেরা নিরাপত্তারক্ষীদের নানা রকম ভয় দেখিয়ে গেটের তালা খোলাত।” কিন্তু এর পরেও তাদের বিরুদ্ধে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তার কোনও সদুত্তর ঋতুপর্ণবাবুর কাছ থেকে মেলেনি। তিনি নিজে কলেজ চত্বরেই আবাসনে থাকেন। অথচ কিছুটা দূরে ইউনিয়ন রুমে দিনের পর দিন এমন সব ঘটছে, তা তিনি কেন টের পেলেন না, তার জবাবও মেলেনি। কারিগরি শিক্ষা দফতরের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটিও এ সব প্রশ্নের ঠিক মতো উত্তর পাননি বলে জানা গিয়েছে।
অভিযোগ পাওয়ার পরে তিন দিন পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেফতার করা ছাড়া পুলিশ বিশেষ এগোতে পারেনি। বাকি অভিযুক্তেরাও অধরা। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দের অবশ্য দাবি, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ জানালে পুলিশ তৎক্ষণাৎ তদন্তে নামতে পারত। অভিযুক্তেরাও পালিয়ে যাওয়ায় সুযোগ পেত না। তবে তাঁর আশ্বাস, শীঘ্রই অভিযুক্তদের ধরে ফেলা হবে। |