পশ্চিমবঙ্গে জমি তৈরি হচ্ছে, আশায় বিজেপি
জেতার আশা কখনওই ছিল না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রাক্তন নির্বাচনী কেন্দ্র জঙ্গিপুরে ভোট বৃদ্ধিতে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী মনে করছেন, রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংখ্যালঘু-নীতির বিরোধিতা করে অদূর ভবিষ্যতে আরও ভাল ফল সম্ভব। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটেও এই মডেলকে তুলে ধরে ভোটে লড়তে রাজ্য নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
সভাপতি হওয়ার পরেই গডকড়ী দলকে বলেছিলেন, বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্ক ১০% বাড়াতে পারলেই পরের লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির তখ্ত দখল করা সম্ভব। জঙ্গিপুর লোকসভা উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরেই বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ যে রিপোর্ট কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে পাঠিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে গত লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় সিপিএম ও কংগ্রেসের ভোট কমেছে। আর বিজেপি-র ভোট বেড়েছে ৮%-এর বেশি। গত বার বিজেপি-র ভোট যেখানে ছিল ২.৩৩%, এ বারে তা দু’অঙ্ক পেরিয়ে হয়েছে ১০.১%।
বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে ইমাম ভাতা চালু, সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণ, তাঁদের জন্য হাসপাতাল গড়া থেকে ‘জুম্মাবারে’ মন্ত্রীদের ইস্তফা দেওয়ানোর ঘোষণার মতো ধারাবাহিক ঘটনা মমতার ‘সংখ্যালঘু তোষণে’র রাজনীতিকে প্রকাশ্যে এনে ফেলেছে। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কৃষকদের কাছ থেকে দেড়শো একর জমি নেওয়ার সিদ্ধান্তে রাজ্যের তৃণমূল সরকার যে ভাবে সিলমোহর দিয়েছে, তা নিয়ে অসন্তোষকেও এ বার উপনির্বাচনে পুঁজি করতে পেরেছে বিজেপি।
স্বাভাবিক ভাবেই রাহুলবাবুর দাবি, রাজ্যে তাঁদের দলের প্রাসঙ্গিকতা বাড়ছে। তিনি শনিবার বলেছেন, “আমাদের প্রচুর সমর্থক এখন ঘরছাড়া। তাঁরা থাকলে ভোটের ফল অন্য রকম হত।”
কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল সিংহ। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র
তাঁদের ভোটবৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাহুলবাবুর আরও বক্তব্য, “১৯৯১ সালে জঙ্গিপুরে বিজেপি-র প্রার্থী ১ লক্ষ ৬৭ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। পরে প্রণববাবু প্রার্থী হওয়ায় সেই ভোট তাঁর দিকে চলে যায়। সেটাই এ বার ফের বিজেপির দিকে ফিরে এসেছে।” ১৯৯১ সালে অবশ্য রামমন্দির গড়ার প্রচারকে হাতিয়ার করতে পেরেছিল। যা এ বার নেই এবং সে জন্যও তাদের এই ভোটবৃদ্ধি তাৎপর্যপূর্ণ।
বিজেপি সূত্রের মতে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে ধীরে ধীরে সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল তিন দলের প্রতিই আশাহত হচ্ছেন এবং অন্য বিকল্পের সন্ধান করছেন, ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করেই তা বোঝা যাচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি ও ডিজেল-রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ার মতো মনমোহন সিংহ সরকারের নীতির বিরুদ্ধে মানুষের আক্রোশও যে বাড়ছে, ভোটবাক্সে তার প্রতিফলন ঘটেছে। শুধু হিন্দু ভোটই নয়, সংখ্যালঘুদের ভোটও জঙ্গিপুরে পড়েছে বিজেপি-র ঝুলিতে।
তৃণমূলের ভোট বিজেপি কেটে নিলে তাতে আখেরে লাভ বামেদেরই।
কিন্তু রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের অভিমত, তৃণমূলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বিজেপি এখন প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোট কাটলে বিরোধী দল হিসাবে সিপিএমের অসুবিধাও আছে। তা ছাড়া, তত্ত্বগত ভাবে বিজেপি-র উত্থান মেনে নেওয়া সিপিএমের পক্ষে সম্ভব নয়। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব তা-ই এ দিন প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, “বাঁকুড়া বিধানসভা উপনির্বাচনেও বিজেপি-র ভোট বেড়েছিল। অন্য ছোটদলগুলিও জঙ্গিপুরে ভোট পেয়েছে। এই সবই আমাদের পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। গরিব মানুষের ভোট বিজেপি পেল কি না, খতিয়ে দেখতে হবে।”
বিজেপি জানে, ইউপিএ থেকে মমতার সমর্থন প্রত্যাহারকে কংগ্রেস বিরোধিতায় প্রচার করা হলেও পশ্চিমবঙ্গে মমতার বিরোধিতায় ছাড়পত্র দিতেই হবে রাহুলবাবুদের। কারণ, কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করতে হলে বিজেপি-কে সব রাজ্যেই ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতে হবে। তাই পশ্চিমবঙ্গকে এ বার লাভের খাতায় ধরতে চায় তারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.