শুধু ‘খোঁজখবর নেওয়া’-য় সীমাবদ্ধ না-থেকে রাজ্য সরকারি কর্মী বা সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত ও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার ক্ষমতা চাইল রাজ্যের সদ্য গঠিত দুর্নীতি দমন শাখা। কী ভাবে তারা কাজ করতে চায়, বিস্তারিত ভাবে সেই বিষয়টি প্রস্তাবাকারে মহাকরণে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী ও সংস্থার ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার মতো একটি পৃথক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ বিভাগ হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা চেয়েছেন রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখার সদ্য নিযুক্ত অফিসারেরা। সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখাকেই ‘মডেল’ হিসেবে দেখানো হয়েছে প্রস্তাবে।
স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, কিছুটা সিবিআইয়ের ধাঁচে যাতে ওই দুর্নীতি দমন শাখা কাজ করতে পারে, সেই জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। সরকারি সূত্রের খবর, নিয়মিত মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ সম্বলিত চিঠিপত্র পৌঁছয়। প্রাথমিক ভাবে ওই সব অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হচ্ছিল। আগামী দিনে সবই নবগঠিত শাখার কাছে পাঠানোর কথা ভাবছে রাজ্য সরকার।
বস্তুত, রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের মনোভাব বুঝেই দুর্নীতি দমন শাখার ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল কারিয়াপ্পান জয়রামন দুর্নীতি দমন শাখাকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চেয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমাদের প্রস্তাব যথাস্থানে পৌঁছেছে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর বিষয়টি দেখছে।” ঘটনাচক্রে জয়রামন নিজেই এক সময়ে চেন্নাইয়ে সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার শীর্ষপদে ছিলেন। স্বরাষ্ট্র দফতর আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই হাতে।
রাজ্য পুলিশ ডিরেক্টরেটের অধীনে নয়, এই দুর্নীতি দমন শাখা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে কাজ করছে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, শেষ মুহূর্তে ‘অঘটন’ না-ঘটলে ১৯৮৮ ব্যাচের আইপিএস রামফল পওয়ার এই দুর্নীতি দমন শাখার শীর্ষে, আইজি পদে বসতে চলেছেন আগামী মাসে। সরকারি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে থাকার মেয়দ তাঁর ফুরোচ্ছে ১৫ নভেম্বর। পওয়ার বর্তমানে স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপের (এসপিজি) আইজি পদে কর্মরত। তিনি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে থাকবেন। শেষ পর্যন্ত এই দুর্নীতি দমন শাখা যদি সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার মতো কাজ করতে পারে, সে ক্ষেত্রে কোনও রাজ্য সরকারি কর্মী মানুষের কাছে উৎকোচ চাইলে গোপনে সরাসরি ওই শাখায় অভিযোগ জানানোর সুযোগ থাকবে। সাধারণ মানুষের কাছে সরকারি দফতরের দুর্নীতির কোনও খবর থাকলে জানানো যেতে পারে তা-ও।
অগস্ট মাসে দুর্নীতি দমন শাখা গঠন ও তার কাজের পরিধি নিয়ে রাজ্য সরকার যে-বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, তাতে দুর্নীতি দমন শাখাকে এতটা ‘স্বাধীনতা ও ক্ষমতা’ দেওয়ার কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছিল, রাজ্য সরকারি সংস্থা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেলে শুধু সেই ব্যাপারে খোঁজখবর (নেহাতই ‘এনকোয়্যারি’, তদন্তও নয়) নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করতে পারবে এই শাখা। নিয়ন্ত্রণ থাকবে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। স্বরাষ্ট্র দফতরের সূত্রের মতে, প্রথমে এক রকম বিজ্ঞপ্তি জারি করলেও পরে বেশি ক্ষমতার প্রস্তাব মেনে নেওয়ার মনোভাবই দেখাচ্ছে সরকার।
এর কারণটা কী? রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, রাজ্য সরকারি সংস্থা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করার ক্ষমতা রয়েছে রাজ্য পুলিশের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ (ইবি)-এর। কিন্তু অভিযোগ না-এলে নিজে থেকে তদন্ত করার ক্ষমতা ইবি-র নেই। তা ছাড়া, কোনও সরকারি কর্মী বা অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে হলে ইবি-কে অভিযুক্তের নিয়োগকর্তার কাছ থেকে অনুমতিপত্র নিতে হয়। দুর্নীতি দমন শাখা স্বয়ংসম্পূর্ণ বিভাগ হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা পেলে নিজে থেকেও তদন্ত করতে পারবে। তা ছাড়া, গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন কারণে ইবি তেমন সক্রিয় নয়। সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার মতো রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখাটি কাজ করতে পারলে সরকারি অফিসার ও কর্মীদের দুর্নীতি কিছুটা কমবে বলে স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তাদের একাংশের ধারণা। আপাতত ডিআইজি জয়রামন ওই শাখার দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর অধীনে দুই স্পেশ্যাল সুপার পদ থাকলেও স্বরাষ্ট্র দফতর এখনও পর্যন্ত মাত্র এক জনকে স্পেশাল সুপার পদে নিয়োগ করেছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দুর্নীতি দমন শাখায় মোট ৩০ জনের দল থাকার কথা। আপাতত নিয়োগ করা হয়েছে ১১ জনকে। মহাকরণে পাঠানো প্রস্তাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কনস্টেবল নিয়োগের কথাও বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে কনস্টেবল নিয়োগের কথা বলা হয়নি। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা এবং লকআপ পাহারার জন্য এই কনস্টেবলদের প্রয়োজন বলে পুলিশকর্তারা মনে করছেন। |