তিনি ভেসে আছেন। কিন্তু ডুবে গিয়েছেন তাঁর বিপক্ষ কোচ। মোহনবাগান কোচের পদত্যাগের খবর শুনে তাঁর পাশেই প্রয়াগ কোচ সঞ্জয় সেন। “এখনই পদত্যাগ করতে গেল কেন? আরও সময় পেতেই পারত কাশ্যপ।”
থাকেন মোহনবাগান সমর্থকদের ডেরা চেতলায়। বাড়ির সকলেই সবুজ-মেরুন সমর্থক। ক্লাস নাইনের ছেলে সোহনও ওডাফার দল জিতলে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে হইচই শুরু করে দেয়। অথচ ধর্মেন্দ্রর ভক্ত সঞ্জয়ের মস্তিষ্ক মোহনবাগানকে দেখলেই ‘শোলে’-র বীরুর মতোই ‘ম্যায় তেরা খুন পি যাউঙ্গা’ মনোভাব নিয়ে এত সক্রিয় হয়ে ওঠে কেন?
প্রশ্নটা শুনে মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার জীবনী হাতে হাইভোল্টেজ হাসি র্যান্টি মার্টিন্স-কালোর্স হার্নান্ডেজদের কোচের মুখে। হাসি সামলে উত্তরটা অবশ্য দার্শনিকসুলভ দিলেন। “আজ সাফল্য পাচ্ছি। কাল ব্যর্থতা আসতেই পারে। অতীত না ঘেঁটে এখন সামনে তাকানোর সময়। আর পাড়ায় তো মোহনবাগান সমর্থকরা দেখলেই হাত মিলিয়ে যাচ্ছে। ফুটবল কোচের এ সব মানসিকতা নিয়ে চলতে নেই।” ‘সামনে’ বলতে সঞ্জয় দেখছেন আই লিগ খেতাব পকেটে পোরা। তাঁর সাফ কথা, “কার্লোস এখনও পুরো ম্যাচফিট নয়। ওকে পুরো ফিট হতে দিন। তার পরে আমাদের র্যান্টি-কার্লোস-দীপক-গৌরমাঙ্গী-সুব্রতদের সামনে পড়লে অনেক দলেরই হাঁসফাঁস অবস্থা হবে।” কলকাতা ময়দানের অনেক প্রাক্তন কার্লোসের মধ্যে আশির দশকের মজিদের ছায়া দেখতে পেয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি কার্লোসের কোচের মুখে। বললেন, “সময়ই উত্তর দেবে।” |
১৯৮২ থেকে ’৯৫ রেলওয়ে এফসি-র স্টপারে খেলেছেন সুদর্শন সঞ্জয়। ’৮৯- তে রেলের চাকরি ছাড়ার ঝুঁকি থাকায় ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তাব পেয়েও বড় দলে খেলা হয়নি। সেই আক্ষেপ সুদে-আসলে পুষিয়ে নিতেই আই লিগ চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ হওয়ার স্বপ্ন একদা অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দলের কোচ সঞ্জয়ের চোখে। যার একটা বড় ধাপ হিসেবে শুক্রবার মোহনবাগানকে হারাতে তিন তাস খেলেছিলেন সঞ্জয়।
এক) নবি ওভারল্যাপে এলেই টুলুঙ্গা এগিয়ে যাবেন। পাণ্ডুয়ার ছেলের বিষ মাখানো ক্রস কিছুতেই যেন প্রয়াগ বক্সে ভেসে না আসে।
দুই) ওডাফা বল পেলেই চার্জ করবেন গৌরমাঙ্গী। সেই লুজ বল ধরে র্যান্টি-ভিনসেন্টকে জোগানোর দায়িত্ব নেবেন কার্লোস, আসিফ বা বিনীথ।
তিন) টোলগেকে নিজেদের মাঝখানে স্যান্ডউইচ করে রাখবেন অনুপম আর সুখেন।
তিনটে পরিকল্পনাই একশোয় একশো হওয়ার জয়ের পর যুবভারতীর সাজঘরে এসে হাত মিলিয়ে গিয়েছেন টিম স্পনসর বাসুদেব বাগচি। জামশেদপুরে সালগাওকর ম্যাচের পরে যিনি নাকি প্রয়াগ কোচকে হেনস্থার ব্যাপারে ইন্ধন জুগিয়েছিলেন। আই লিগে সঞ্জয়কে আর কোচ চাননি। যা নিয়ে এই প্রথম একটু সতর্ক সঞ্জয়। প্রথমে বললেন, “আমি তো তেমন কিছু দেখিনি।” পরক্ষণেই নিজের ‘অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যান’ ইমেজে সোজাসাপটা জবাব, “উনি তো স্পনসর। স্পনসরের কথায় আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। অনেক সিঁড়ি ভেঙে আজ এখানে পৌঁছেছি। আমার ভিত টাটা সেন্টারের মতো শক্ত। শিবালিক অ্যাপার্টমেন্টের মতো ঠুনকো নয়।”
ওডাফা-টোলগেদের বিরুদ্ধে জিতলেও ম্যারাথন লিগে এক বার প্রয়াগ পরপর হারতে শুরু করলে যদি ফের কোচকে সরানোর তোড়জোড় শুরু হয়? শুনে প্রয়াগ কোচ আওড়ালেন প্রাক্তন লিভারপুল কোচ জেরার হোলিয়ারের কথা। “দু’ একবার চাকরি যদি না হারাও, তা হলে ভাল কোচের স্বীকৃতি পাবে কী ভাবে?” শনিবার টিমের বিশ্রাম। স্ত্রী সবিতার সঙ্গে পুজোবাজার করে কাটিয়েছেন কোচ। রবিবার ছুটি কাটিয়ে সোমবারই ফের পুরোদমে নেমে পড়বেন আই লিগ জয়ের লক্ষ্যে। যে দৌড়ে তাঁর তিন প্রধান চ্যালেঞ্জার হিসেবে সঞ্জয় দেখছেন ইস্টবেঙ্গল, ডেম্পো, চার্চিল ব্রাদার্সকে।
কার্লোস-র্যান্টি-ভিনসেন্টের মতো বিদেশি তারকাদের সঙ্গে ঘর করেও তাঁর কোনও সমস্যা নেই। উল্টে তিন জনই কোচের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। যদি টোলগে-ওডাফাদের সামলাতে হত? “ওদের বলতাম, “তোরেসও এক সময় গোল পাচ্ছিল না। সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে। তোমরা তো ভারতসেরা স্ট্রাইকার। গোল পাবেই।”
ম্যান-ম্যানেজমেন্টের এই ব্যাঙ্ক ব্যালান্সের দৌলতেই সন্তোষ-বিসর্জনের দিন কোচের পদে দিব্যি ভেসে রইলেন মরসুমের গোড়াতেই বিপদে পড়া সঞ্জয় সেন। |