|
|
|
|
গুরুত্ব হান্নানকেও |
সংগঠন দেখতে আলাদা বিভাগ খুলছেন কারাটরা |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
সংগঠনের হাল ফেরানোর চেষ্টায় এ বার আলাদা বিভাগ খোলার সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম।
আন্তর্জাতিক শাখা, গবেষেণা শাখার মতো নানা বিভাগে সিপিএম নিজেদের কাজ ভাগ করে রাখে। এ বার তারা খুলছে পৃথক সাংগঠনিক বিভাগ। প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে কেন্দ্রীয় স্তরেই ওই বিভাগ খোলা হচ্ছে। দায়িত্ব পাচ্ছেন প্রকাশ কারাটের ঘনিষ্ঠ পলিটব্যুরোর সদস্য এস রামচন্দ্রন পিল্লাই। তাঁর সঙ্গেই ওই বিভাগে রাখা হচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটির তিন সদস্যকে। এত দিন নীতিগত বিষয়ের সঙ্গেই সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখভাল করতেন সিপিএম নেতৃত্ব। এ বার সাংগঠনিক বিষয়ে দলকে আলাদা পরামর্শ দিতে পারবে এই নতুন বিভাগ। নতুন নতুন এলাকায় সংগঠন বিস্তারের ক্ষেত্রেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। |
|
|
|
এস রামচন্দ্রন পিল্লাই |
প্রকাশ কারাট |
হান্নান মোল্লা |
|
নতুন সাংগঠনিক বিভাগ খোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত পাকা হয়ে গিয়েছে পলিটব্যুরোয়। দিল্লিতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির চলতি বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক কারাট নোট দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, চার সদস্যের ওই বিভাগ কেন্দ্রীয় স্তরে শীঘ্রই কাজ শুরু করবে। কেন্দ্রের পরে এ বার রাজ্য ও আরও নিচু স্তরে একই ধরনের বিভাগ খোলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দলে আলোচনা চলছে। কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “এত দিন পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটিই দলের নীতিগত অবস্থান ঠিক করত, আন্দোলন কর্মসূচি চূড়ান্ত করত আবার সাংগঠনিক বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিত। এ বার থেকে সংগঠনের দিকটা আলাদা ভাবে এই বিভাগের হেফাজতে আসবে। তারা অবশ্যই পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবে।” সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, কারাটের পৃষ্ঠপোষকতায় এস আর পিল্লাই-ই কেন্দ্রীয় স্তরে দলের সংগঠনের দিকটি ইদানীং দেখে আসছেন। কোঝিকোড়ে বিগত পার্টি কংগ্রেসে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ এবং বিতর্ক শেষে জবাবি বক্তৃতার দায়িত্ব তাঁর উপরেই ছিল। কমিউনিস্ট পার্টিতে সংগঠন যে হেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই তার জন্য আলাদা বিভাগ খুলে পিল্লাইকে
দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তে কারাটের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক (তিন বারের মেয়াদ ফুরোলে) হিসাবে তাঁরই পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশ!
সাংগঠনিক বিভাগে কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের হান্নান মোল্লা, অন্ধ্রপ্রদেশের ভি শ্রীনিবাস রাও এবং ঝাড়খণ্ডের জ্ঞানশঙ্কর মজুমদার কেন্দ্রীয় কমিটির এই তিন সদস্যকে। এ রাজ্যের প্রাক্তন সাংসদ হান্নান রাজস্থানে দলের সংগঠন বাড়িয়ে তোলার পিছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন। হিন্দি বলয়ের ওই রাজ্যে সিপিএমের তিন জন বিধায়ক হয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনেও সাফল্যের মুখ দেখছে দল। এই প্রেক্ষাপটে হান্নানকে পলিটব্যুরো দলের অন্দরে বিশেষ স্বীকৃতি দিল বলেই সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা।
সংগঠনের জন্য বিভাগ খুলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও কারাটের মাথাব্যথা অবশ্য কমছে না! কুডানকুলাম পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কারাট হাত ধুয়ে ফেললেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে তা-ই নিয়ে বিতর্ক বসাতে তাঁকে বাধ্য করেছেন ভি এস অচ্যুতানন্দন! কেরলের বিরোধী দলনেতা কারাটকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, মহারাষ্ট্রের জৈতাপুরে এক রকম অবস্থান আর তামিলনাড়ুর কুডানকুলামে আর এক রকম, এ জিনিস কমিউনিস্ট পার্টিতে চলতে পারে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকা ও বাসস্থান (কুডানকুলামে মৎস্যজীবী) এবং জীব-বৈচিত্র্য মাথায় রেখে তামিলনাড়ুর ওই পরমাণু চুল্লি সম্পর্কে অবস্থান পুনর্বিবেচনা করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে অবিলম্বে আলোচনা চেয়েছেন ভি এস। পরমাণু প্রযুক্তি সরবরাহকারী রাষ্ট্রগুলির কাছে নতিস্বীকার করে মনমোহন সিংহ পরমাণু নীতি ঠিক করবেন আর সিপিএমকে তা-ই মেনে নিতে হবে কেন, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর এই বক্তব্যের নির্যাস কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের অবহিত করেছেন সাধারণ সম্পাদক। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ভি এসের এই অবস্থানের জন্য শনিবারই তাঁর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন বহিষ্কৃত তাত্ত্বিক নেতা প্রসেনজিৎ বসু! প্রসঙ্গত, দলের আনুষ্ঠানিক অবস্থানের তোয়াক্কা না-করে ভি এস নিজেই কুডানকুলামে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়াতে যাচ্ছিলেন। তামিলনাড়ু সীমানায় পুলিশ তাঁকে আটকে দেয়।
কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কুডানকুলামে আপাতত নীতির প্রশ্ন তুললেও ভি এস-কে নিয়ে সিপিএমে সাংগঠনিক সমস্যা কিছু কম নয়। পিল্লাইয়ের নতুন বিভাগের সামনে পথও তা-ই বন্ধুর! |
|
|
|
|
|