অকাল ভোট ধরে নিয়ে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন মমতা
গামী বছরই লোকসভার অকাল নির্বাচন হবে ধরে নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে নিজের ভূমিকা ঠিক করে ফেলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মনে করেন, দেশ জুড়ে কেন্দ্র-বিরোধী অসন্তোষ রয়েছে। আর তাকে মূলধন করেই এগোতে চান তিনি।
ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রের বাজেট। মমতা মনে করছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে বাজেটের পরেই লোকসভার ভোট হয়ে যেতে পারে। এটা ধরেই তিনি দ্রুত দিল্লির ঘুঁটি সাজাচ্ছেন।
চলতি মাসের প্রথম দিনেই দিল্লির যন্তর-মন্তরে সভা করে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির সমালোচনা করেছেন মমতা। ২১ নভেম্বর দিল্লির রামলীলা ময়দানে ফের তাঁর জনসভা। অতীতে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন জ্যোতি বসু। রামলীলা ময়দানে সভা করেছিলেন তিনিও।
কিন্তু মমতা যখন দিল্লির রাজনীতিতে উৎসাহী, তখন কোনও জয়প্রকাশ নারায়ণ নেই। অণ্ণা হজারে বা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আন্দোলনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও মমতা সন্দিগ্ধ। পাশাপাশি, তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, আমজনতার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়ে কংগ্রেস দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। আর তাই মমতা নিজেই দিল্লিতে শাসক দল বিরোধী একটি ‘ফেডারেল ফ্রন্ট’ গঠনে সচেষ্ট। তৃণমূল সূত্র বলছে, নবীন পট্টনায়ক, নীতীশ কুমার, জয়ললিতা, মায়াবতী, মুলায়ম এমনকী শরদ পওয়ারও তলে তলে চাইছেন কংগ্রেস-বিরোধী মঞ্চ তৈরি হোক। কিন্তু নানা কারণে তাঁরা নিজেদের রাজ্য নিয়েই ব্যস্ত। মমতাই এ ব্যাপারে সব চেয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। ফেসবুকের মাধ্যমে তিনি জাতীয় বিষয় নিয়ে নিয়মিত বক্তব্য রাখছেন। এ দিনও যেমন ফেসবুকে তৃণমূল নেত্রী ফের বলেছেন, “ডিজেল-সারের মূল্যবৃদ্ধি-সহ ইউপিএ-২ এর একাধিক জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিব্বল অবশ্য বলেন, “ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি থেকে বিদেশি লগ্নি সংস্কারের যে সিদ্ধান্তগুলি সরকার নিয়েছে, তা আমজনতার পক্ষে। এগুলি জনকল্যাণকর।” কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব জানান, এ ভাবে ডিজেল-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকিরাজ চলতে থাকলে আখেরে সাধারণ মানুষেরই ক্ষতি। ভর্তুকি কমাতে না পারলে মূল্যবৃদ্ধির রাশও নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন। বরং সংস্কার ঠিক পথে চললে বিনিয়োগ আসবে, কর্মসংস্থান বাড়বে, পরিস্থিতিও বদলাবে।
ঘুঁটি সাজানোর ক্ষেত্রেও কংগ্রেস চুপ করে বসে নেই। জয়রাম রমেশ লখনউয়ে মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের সঙ্গে বৈঠক করছেন। রাজ্যসভার সদস্য এন কে সিংহের মাধ্যমে নীতীশ কুমারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখছে কংগ্রেস। নবীনের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ রয়েছে। কংগ্রেস মনে করছে নবীন-মুলায়মের পক্ষে বিজেপি শিবিরে যাওয়া কঠিন। নীতীশের সঙ্গেও বিজেপি-র চূড়ান্ত টানাপোড়েন চলছে। এরা প্রত্যেকেই কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনা পোষণ করেন। মমতা অবশ্য এই আঞ্চলিক নেতাদের বোঝাচ্ছেন যে, আপনারা ভুল পথে হাঁটছেন। কংগ্রেসকে বিশ্বাস করবেন না। কেননা কংগ্রেস ডুবছে। সেই ডুবন্ত জাহাজে সওয়ারি হওয়া রাজনৈতিক মুর্খামি।
রামলীলা ময়দানের পাশাপাশি হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশে যথাক্রমে ২ ও ১৭ নভেম্বর সভা করবেন মমতা। তাঁর পরিকল্পনা, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের আগেই দেশ জুড়ে কংগ্রেস-বিরোধী হাওয়া তৈরি করা। গুজরাতে বিধানসভা ভোট ডিসেম্বরে। তাই সংসদের অধিবেশন পিছিয়ে যেতে পারে, এমনও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু বাজেট অধিবেশনে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এসে মমতা এমন একটি রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চান, যেখানে অন্য আঞ্চলিক দলগুলি সমর্থন করতে বাধ্য হয়। সমর্থন না করলে দলগুলি দেশবাসীর সামনে আরও বেশি করে বেআব্রু হয়ে পড়বে। তবে মমতার একার পক্ষে অনাস্থা প্রস্তাব আনা অসম্ভব। তাঁকে অন্য আঞ্চলিক দলের সাহায্য নিতে হবে।
সেই জোট গড়ার চেষ্টাতেই মমতা ব্যস্ত। তিনি ঠিক করেছেন,
• এনডিএ-তে যোগ দেবেন না l লোকসভা নির্বাচনে একা চলার কৌশল নেবেন।
• সমাজবাদী পার্টি, এসইউসি এমনকী এনসিপি-র মতো দলের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখবেন। এ দিন ফেসবুকে তিনি ইউপিএ-র শরিকদের ডাক দিয়েছেন: “যাঁরা ইউপিএ-২-র সমর্থকদের অনুরোধ করছি, রুখে দাঁড়ান যাতে জনবিরোধী সিদ্ধান্তগুলির প্রয়োগ আটকানো যায়।”
কেন তাঁর এই কংগ্রেস-বিরোধিতা, তার ব্যাখ্যায় মমতা বলেন, “আমি মানুষের সঙ্গে চালাকি করি না। অনেকে বলেছিলেন মন্ত্রীদের সরিয়ে নিলেও সমর্থন প্রত্যাহার করো না। কিন্তু তাতে মানুষ ভাবত, ক্ষমতার লোভে আমি আপস করছি। মানুষকে আমি এটাই বোঝাতে চাই যে, তৃণমূল ‘সংস্কার-বিরোধী’ নয়। কিন্তু বিদেশের কাছে দেশকে বেচে দেওয়ার বিপক্ষে।” বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মমতার এই বক্তব্যকে সমর্থন করছেন। দলের নেতা রাজনাথ সিংহ বলেছেন, “দেশকে বেচে দেওয়ার অভিযোগই হয়ে উঠবে প্রচারের প্রধান বিষয়।”
কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশে স্পষ্ট করেছেন, পাল্টা কৌশল নিতে তৈরি তাঁরা। তিনি বলেন, “বিদেশের কাছে দেশকে বেচে দেওয়া হবে বলে যে অপপ্রচার চলছে, তার জবাব দেব।” জয়রামের বক্তব্য, “বিশ্বায়নের ফলে সার্বভৌম রাষ্ট্রের মাথার চাল উড়ে গিয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় সকলকেই অংশ নিতে হবে।” এফডিআই নিয়ে তাঁর যুক্তি, “শোষণ তো দেশি পুঁজিপতিরাও করতে পারেন। একমাত্র প্রতিযোগিতাই পারে আমজনতার কল্যাণ করতে।”
এই টানাপোড়েনের মধ্যেই কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব মমতাকে বার্তা পাঠান, মতবিরোধ যা-ই হোক, বাজেট অধিবেশনের আগে বোঝাপড়ার চেষ্টা শুরু করা যেতে পারে। মমতা এখনও এই প্রস্তাবে রাজি হননি। তিনি মনে করছেন পেনশন, বিমা, নিয়ে কংগ্রেস যতই অকুতোভয় মনোভাব দেখাক না কেন, সংসদে, বিশেষ করে রাজ্যসভায় তৃণমূলের সমর্থন ছাড়া কোনও বিল পাশ করানো তাদের পক্ষে কঠিন হবে। আর সেই কারণেই কংগ্রেস বোঝাপড়ার চেষ্টা শুরু করছে।
জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের পরে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, যে ভাবে সেখানে বিজেপির শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে তাতে আসন্ন লোকসভা ভোটে আরও ভাল ফল করতে চাইলে মমতার উচিত কংগ্রেসকে সঙ্গেই নিয়ে চলা। যদিও তৃণমূল নেত্রী তা মনে করেন না। তাঁর বক্তব্য, জঙ্গিপুর আসন থেকে যে ভাবে কষ্ট করে জিততে হয়েছে কংগ্রেসকে, তাতেই বোঝা যায়, তাদের বিরুদ্ধে জনমত কতটা তীব্র। এর থেকে তাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
তবে মনমোহন সিংহ লোকসভা ভেঙে দিয়ে ভোটে যেতে পারেন, তা-ও মমতা খারিজ করছেন না। আর সেই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরের রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করে দিতে চাইছেন তিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.