নাট্যকর্মী বিমল চক্রবর্তীর হেনস্থার ঘটনায় প্রতিবাদ সভা আর পাল্টা সভাকে কেন্দ্র করে নাট্যজগতের রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও প্রকট হয়ে গেল।
৫ই অক্টোবর ওই ঘটনার প্রতিবাদে আকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনে প্রতিবাদ সভা করেছিলেন নাট্যব্যক্তিত্বদের একাংশ। শনিবার ওই একই জায়গায় পাল্টা জমায়েত করলেন আর এক দল নাট্যব্যক্তিত্ব। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু পরিষ্কার বললেন, “তুমি সিপিএমত্ব দেখালে, আমিও তৃণমূলত্ব দেখাব।”
সভা এবং পাল্টা সভার এই আবহে অনেকেরই স্মৃতিতে ফিরে এসেছে নন্দীগ্রাম-পর্বের কথা। সে বারেও বিশিষ্ট জনেদের মিছিল, পাল্টা মিছিলে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। চিত্রপরিচালক মৃণাল সেনের মতো কেউ কেউ দু’টি মিছিলেই যোগ দিয়েছিলেন। এ বারেও সেই ধারার ব্যতিক্রম দেখা গেল না। ৫ তারিখের সভায় হাজির থাকা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত বা বিভাস চক্রবর্তীরা এ দিন সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও চিঠি দিয়ে তাঁদের সমর্থন জানান। এমনকী আগের দিনের সভায় ভুলক্রমে যোগ দিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন। মনোজ মিত্রকে দু’দিনই উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এ দিন তিনি আগের দিনের সভা প্রসঙ্গে বলেন, “বিমলকে নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে আকাডেমির সামনে সভা ডেকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি অপ্রাসঙ্গিক, অসংযত বাক্যবাণ প্রয়োগ করে ব্যক্তিগত স্তরে আক্রমণ করা হল, তা অনভিপ্রেত।” |
‘আক্রান্ত’ নাট্যকর্মী বিমল চক্রবর্তী নিজে অবশ্য কোনও সভাতেই ছিলেন না। সে কথা উল্লেখ করে এ দিন শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, “বিমলবাবু হয়তো বুঝেছেন, তাঁকে শিখণ্ডী করা হয়েছে একটা রাজনৈতিক খেলায়। সে কারণেই আগের দিনের সভায় তাঁকে দেখা যায়নি। শোনা যায়নি তাঁর বক্তব্যও।”
এ দিনের মঞ্চ থেকে ‘নাট্যস্বজন’ নামে নতুন সংগঠন গড়ার কথা জানানো হয়। সভায় অন্যদের সঙ্গে ছিলেন শাঁওলী মিত্র, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা ঘোষ। শাঁওলী বলেন, “নাট্যকর্মীরা কোনও দিনই এক হতে পারেননি। বাম আমল থেকেই বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে আমি সিপিএম, তুমি প্রতিপক্ষ, মানে এখন তৃণমূল।” বিভাস চক্রবর্তীর চিঠি পড়ে শোনান অর্পিতা। তাতে বিভাসবাবু লিখেছেন, ‘‘আগের দিন যে সংগঠন সভা ডেকেছিল, সেটি সিপিএম প্রভাবিত সংস্থা। সভাটা যে রাজনৈতিক হবে, তা টের পাইনি। সঙ্গ চিনে নিতে ভুল করেছিলাম। বিমলের উপর আক্রমণ নাট্যজগতের উপর হামলা নয়। তবে সরকারের উচিত ওই ঘটনার সঠিক তদন্ত করা। কর্মক্ষেত্রেও তাঁকে শাস্তি দেওয়া উচিত হয়নি।” সরকারি কর্মচারী বিমলকে ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’য়ে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ। এ প্রসঙ্গে অর্পিতা ঘোষ বলেন, “উনি ২২ বছর ডেপুটেশনে অন্য দফতরে ছিলেন। তাঁকে নিজের দফতরে ফিরিয়ে আনা যেতেই পারে। কম্পালসরি ওয়েটিং-এ রাখাও অস্বাভাবিক কিছু নয়।”
মঞ্চের পিছনে এ দিন ব্যানারে লেখা ছিল, ‘বন্ধ হোক এই নোংরা রাজনীতি, মুক্ত হোক নাট্যাঙ্গন’। যদিও সদস্যদের মুখে এ দিন বারবারই শোনা গিয়েছে রাজনৈতিক বক্তব্য। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রতি বদান্যতা দেখাতে নাট্যজগতের কয়েক জন যে কোনও ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীকে জড়িয়ে দেওয়া চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন ব্রাত্যবাবু। তিনি বলেন, “ওই বিদ্বজ্জনেরা কী কী সুযোগসুবিধা আগের সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন, তার তালিকা তৈরি করুক নাট্যস্বজন।”
বিরোধীদের উদ্দেশে ব্রাত্যবাবু আরও বলেন, “জনাদেশে হেরে ক্ষমতা হারিয়েছেন। এ বার পঞ্চায়েতে হারবেন।” |