থিমে পটচিত্র আর ভিন্
রাজ্যের শিল্পের মিশেল
বাতাসে ভেসে আসা শিউলি ফুলের গন্ধ আর মাঠ ভরা কাশ ফুল দেখলে চোখে ভাসে সেই ত্রিনয়ন। যাঁর জন্য বাঙালির বছরভর প্রতীক্ষা। বাস্তবে, শহরমুখী মানুষের আবাসনের চাপে শিউলির গন্ধ আর কাশের গুচ্ছ শহর থেকে বেশ খানিক দূরে। তবুও পুজোকে ঘিরে ঘুরপাক খাওয়া আড্ডা আর লড়াইটা আজও আছে। পাড়ার রকের কালচার এখন ফেসবুক আড্ডায়। দেওয়ালে যুক্তি-তক্কো লিখে পুজোয় মাতছে শহর।
লড়াইটা তো বজায় আছে কয়েক শতাব্দী ধরেই। একটা সময় ছিল, যখন দুর্গাপুজো ছিল জমিদারের পেশীশক্তি প্রদর্শনের লড়াই। ইংরেজ শাসনে বিধ্বস্ত দেশবাসীর মনে ঐক্য জাগাতে ‘বারো-ইয়ারি’র সূচনা। জমিদারি গিয়েছে, উঠেছে রাজ-পাটও। পেশির খেলা আজও আছে। পাড়ায় পাড়ায়, ক্লাবে ক্লাবে। প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌঁড়ে সামিল শহরবাসীও বছরের পাঁচটি দিনের জন্য বরাদ্দ করেন কিছু মূল্যবান মুহূর্ত।
‘সিউড়ি বোলস্’ এমনই এক হারানো প্রাপ্তি। বীরভূমের দুবরাজপুর গ্রামের এই শিল্পে ব্যবহার হয় তাল গাছের গুঁড়ি অথবা কদম গাছের কাঠ। কাঠের বাটির গায়ে পিতলের পাত বসিয়ে ‘সের পাই’ নামের বাটি তৈরির সঙ্গে যুক্ত বর্তমানে মাত্র একটি পরিবার। এ বছর এই শিল্প উঠে আসছে লেকটাউনের ‘নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাব’-এর হাত ধরে। মণ্ডপ জুড়ে তৈরি হচ্ছে দেড় ফুট থেকে ছ’ফুটের বিভিন্ন মাপের কাঠের বাটি। প্রতিমায় নতুনত্ব। চার সন্তান কোলে সিংহাসনে আসীন দুর্গা। পায়ের কাছে করজোড়ে দুই অসুর।
যামিনী রায়ের ১২৫তম জন্মবর্ষ উপলক্ষে এ বারের পুজোয় তাঁরই শিল্পের আদল দেখাচ্ছে ‘পূর্ব কলিকাতা সর্বজনীন দুর্গোৎসব’। প্রায় তিরিশটি প্লাইয়ের উপরে কাগজের মণ্ড দিয়ে তৈরি হবে যামিনী রায়ের শিল্পের অনুকরণে কিছু দ্বিমাত্রিক ছবি। রঙ দিয়ে ভরিয়ে তোলা হবে সেই সব ছবি। নারকেলডাঙ্গা মেন রোডের ৬৬ বছরের পুরনো এই পুজো। বাঁশ, শীতলপাটি, চাঁচড়, কঞ্চি আর শোলার ফুলে সাজবে গোটা মণ্ডপ। প্রতিমাতেও থাকছে যামিনী রায়ের দুর্গার আদল। অন্যান্য প্রতিমায় থাকবে শিল্পীর কল্পনায় যামিনী রায়ের শিল্প।
কেষ্টপুরের ‘কৃষ্ণপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব’ বয়সে যদিও তরুণ। এ বারে তাঁদের ভাবনা বাবা-মা। অবহেলা নয় সম্মানই তাঁদের প্রাপ্য। তাঁরই দৃষ্টান্তে কার্তিক ও গণেশের বিশ্ব পরিক্রমার গল্প শোনাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। বিশ্ব পরিক্রমায় বেরোন কার্তিক। মণ্ডপে হাজির শিব-পার্বতীর কোলে বসে গণেশ।
কেষ্টপুরের অন্য পুজো ‘সমরপল্লী সর্বজনীন’। আলো-আঁধারির খেলার পাজ্লড রুম, ডায়মন্ড আকৃতির ঘর। অবশেষে সাধনায় সিদ্ধিলাভের পরে জ্যোতির্ময়ী প্রতিমা দর্শন। এখানে এলে সবটাই চাক্ষুষ করবেন দর্শকরা, এমনটাই বলছেন উদ্যোক্তারা। কাচ, প্লাই, মাটি আর প্যারিসে তৈরি হচ্ছে আধ্যাত্মিক পরিবেশ।
উল্টোডাঙ্গা হাডকোর পিছনের পুজো ‘উল্টোডাঙ্গা বি আর এস ৩’-এর পুজো এ বার পা রাখছে পঞ্চাশে। অসুর বধের শেষে দেবতাদের আনন্দ উল্লাস এখানে দেব-দেবীর প্রতিমায়। তাই সমস্ত প্রতিমার হাতের মুদ্রায় উল্লাসের ভঙ্গিমা। দুর্গার হাতে কোন অস্ত্র নেই। চালনির বেড়ের গায়ে চাইনিজ কাপড় সেঁটে প্রায় পাঁচশো পট চিত্রে আঁকা হয়েছে দশমহাবিদ্যা, অষ্টসখী, দশাবতার প্রভৃতি। শিল্পীরা এসেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা গ্রাম থেকে। বিশেষ এই চাইনিজ কাপড়ের থেকে প্রতিফলিত আলো মণ্ডপে মায়ার পরিবেশ তৈরি করবে বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। দেব শক্তি ও দেবী শক্তির প্রতিষ্ঠায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মিশেল থাকছে এখানে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.