মাত্র চোদ্দো বছর বয়সেই তাকে নিয়ে তালিবানে-মানুষে টানাটানি।
এক দিকে চিকিৎসকেরা গত মঙ্গলবার থেকে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তাকে বাঁচানোর। অন্য দিকে, ইতিমধ্যেই তার উপর ফের প্রাণঘাতী হামলার হুমকি দিচ্ছে তালিবানি জঙ্গিগোষ্ঠী। এবং সেই হুমকি-তালিকায় এ বার সামিল ‘প্রতিবাদিনী’ মালালা ইউসুফজাইয়ের সমর্থনে এগিয়ে আসা তাবড় পাক সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও। তাঁদের অপরাধ? তালিবানি-দর্শন বিরোধী মালালার উপর সাম্প্রতিক হামলার সমালোচনায় মুখর হওয়া। অতএব সংবাদমাধ্যমকেও তাদের আক্রমণের লক্ষ্য করতে চায় তালিবানি জঙ্গিরা।
গত মঙ্গলবার সোয়াট উপত্যকার বৃহত্তম শহর মিঙ্গোরাতে প্রকাশ্য দিবালোকে মালালার উপর গুলি চালায় জঙ্গিরা। গুরুতর জখম হয় সে। আহত তার দুই সহযাত্রী স্কুলছাত্রীও। পুরো ঘটনার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালিবান জঙ্গিগোষ্ঠী। তাদের মতে, বাবার ‘প্রশিক্ষণে’ তালিবান-বিরোধী পশ্চিমী ভাবনাচিন্তার সমর্থনে মুখ খুলেছিল মালালা। তাই তাকে এবং তার বাবাকে খতম তালিকার শীর্ষে রাখে জঙ্গিরা।
সেই তালিকাতেই সাম্প্রতিক সংযোজন সংবাদমাধ্যম। পাক-গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে খবর, তালিবান প্রধান হাকিমুল্লা মেহসুদ এবং তাঁর অধস্তন নাদিম আব্বাস ওরফে ইনতিকামির মধ্যে একটি গোপন টেলিফোন কথোপকথন উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে নাদিমকে করাচি, লাহৌর, ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডির মতো শহরে সংবাদমাধ্যমগুলির দফতরে হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছে মেহসুদ। এর পরেই সংবাদমাধ্যমের দফতরে নিরাপত্তা আঁটোসাটো করার নির্দেশ দেয় পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক। একই সঙ্গে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যাঁরা প্রকাশ্যে মালালার উপর হামলার নিন্দা করেছিলেন, তাঁদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে পাক প্রশাসন।
কিন্তু নিরাপত্তা তো যথেষ্ট কড়া ছিল মিঙ্গোরাতেও। ২০০৯ সালে সেখানে অভিযান চালিয়ে তালিবান উৎখাতের পরেও বেশ জোরদার নিরাপত্তা রেখেছিল পাক সেনাবাহিনী। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের নাকের ডগা দিয়ে কী ভাবে আঘাত হানল তালিবান? প্রশ্ন থাকলেও আপাতত নিরুত্তর পাক সেনা।
তবে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরফ, বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার-সহ পাকিস্তানের গণ্যমান্য সকলেই। মালালার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তার ভারতীয় বন্ধুরাও। এ দিন মুম্বইয়ের শহরতলি মুম্বরায় মিছিল করে ছাত্র-ছাত্রীদের দল। পাক প্রশাসনের কাছে তাদের অনুরোধ, প্রয়োজনে ভারতে এনে চিকিৎসা করা হোক মালালার। কোনও কিছুর বিনিময়েই তাকে হারাতে রাজি নয় এই কিশোর-কিশোরীরা।
সেনা সূত্রে খবর, মালালার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। যদিও এখনও হাত-পা ঠিক ভাবে নাড়াতে পারছে না সে। চিকিৎসকদের ধারণা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই এর কারণ।
এ সব সত্ত্বেও ৪৮ ঘণ্টার আগে কিছুই নিশ্চিত বলতে পারছেন না তাঁরা। কারণ, হাসপাতালে এখনও লড়ছে মালালা। ঠিক যেমন ভাবে সোয়াট উপত্যকায় এত দিন লড়ে এসেছে তালিবানি-রক্তচক্ষুর বিরুদ্ধে।
তখনও ‘জীবনের’ জন্য। এখনও সেই জীবনের জন্যই। |