বর্ন গুয়ান মোয়ে। বইয়ের পাতায় ছদ্মনামে ইনিই হলেন ‘মো ইয়ান’। যার অর্থ ‘চুপ, কথা বোলো না’। কিন্তু সদ্য নোবেল সাহিত্য পুরস্কারজয়ী এই ইয়ানই এ বার মুখ খুললেন, দেশের বিরুদ্ধে, ‘দেশদ্রোহীর’ হয়ে। বললেন, “আশা করি খুব শিগগিরি মুক্তি দেওয়া হবে লিউ জিয়াওবোকে।”
সময়ের কী অদ্ভুত পরিহাস! দু’বছর আগে এই লিউ জিয়াওবোর নোবেল শান্তি পুরস্কার মেনে নেননি তিনি। চিনের কমিউনিস্ট সরকার যখন লিউকে পুরস্কার নিতে যাওয়ার অনুমতি পর্যন্ত দেয়নি, অগ্রাহ্য করেছিল তাঁর প্রাপ্য
|
মো ইয়ান |
|
লিউ জিয়াওবো |
সম্মান, তখন দেশের হয়েই গলা ফাটিয়েছিলেন তিনি। তা হলে আজ হঠাৎ?
লিউ তো চিনের সমালোচক। দেশের কারাগারে বন্দি। আর মো হলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। সরকারি ‘রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র সদস্য। হঠাৎ তাঁর মুখে কেন লিউ-এর মুক্তির প্রসঙ্গ?
মো ইয়ানের নোবেল-জয়ের পরেও চিন বলেছে, এটাই দেশের প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্মানে’ গর্বিত চিন। অথচ একুশ শতকের গোড়াতেই সাহিত্যে নোবেল ছিনিয়ে নিয়েছিলেন দেশত্যাগী গাও ঝিংজিয়ান। তাঁকে স্ব-দেশীয় বলে মেনে নেয়নি চিন। আবার জীবনের একটা বড় অংশ চিনে কাটিয়েও মার্কিন লেখিকা পল এস বার্ক ‘বিদেশিনি’। এ হেন সরকারের নেকনজরে থাকা মো হঠাৎ কেন এই ভূমিকায়? প্রশ্ন অনেক।
উত্তরও আছে। জনৈক এক শিল্পী যেমন বলছেন, “যে দিকে যখন পাল্লা ভারী, মো তখন সে দিকেই।” সমালোচকদের তোপ দেগেছেন তিনিও “অনেক ঝুঁকি নিয়েই আমিও বই লিখেছিলাম।” তাঁর লেখনীর ছত্রে ছত্রে রাজতন্ত্র থেকে চিনের মাও-পরবর্তী সময়, এক সন্তান নীতি, দুর্নীতি নানা ছবি উঠে এসেছে। মো-এর ক্ষোভ, যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁরা আমার উপন্যাস পড়েননি। না পড়েই এ সব বলছেন। তাঁর কথায়, “যদি পড়তেন, বুঝতেন কত চাপের মধ্যে লিখেছিলাম। সমাজের কালো দিকটা উঠে এসেছিল বইয়ের পাতায়।” এক সময় নিষিদ্ধ হয়েছিল তাঁর ‘বিগ ব্রেস্টস অ্যান্ড ওয়াইড হিপ্স’ উপন্যাসও। ইয়ানের নোবেল জয়ের পর বারবার উঠে এসেছিল আরও একটি বইয়ের নাম। ‘গার্লিক ব্যালাডস’।
এ দিন ইয়ান সাংবাদিকদের বলেন, “কত সীমাবদ্ধতার মধ্যে যে লিখতে হয়, তা আমরা লেখকেরা জানি। সেই সীমাবদ্ধতাটাই আমরা ভাঙার চেষ্টা করছি।” তিনি আরও বলেন, “আমার রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে নোবেলের কোনও বিরোধিতা নেই। আমার লেখা উপন্যাস, এ সব দেশীয় রাজনীতির অনেক ঊর্ধ্বে। সরকারের সঙ্গে সহাবস্থানের জন্য এই সম্মান মেলেনি।”
ইয়ানের ক্ষোভ, “রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য নয়, সাহিত্যকীর্তির জন্যই আমাকে নোবেল দেওয়া হয়েছে।” |