পরপর দু’বছরই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। ফলে বহু গরিব মানুষই স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে সরকারি অর্থ সাহায্য থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এ বার গত দু’বছরের তুলনায় স্বাস্থ্যবিমার লক্ষ্যমাত্রাও বেড়েছে। প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, যাতে সব গরিব মানুষকে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমা যোজনার (আরএসভিওয়াই) আওতায় নিয়ে আসা যায়, তার চেষ্টা চলছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম দত্ত বলেন, “দ্রুত গতিতে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে জেলায়। আশা করা যায়, উপযুক্ত প্রতিটি ব্যক্তিকেই বিমার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।”
পাশাপাশি সরকারি অর্থ যাতে নয়ছয় না হয় সে জন্যও উদ্যোগী হচ্ছে প্রশাসন। বিভিন্ন সময় অভিযোগ ওঠে, উপভোক্তাদের ভুল বুঝিয়ে বা সামান্য অর্থের লোভ দেখিয়ে কিছু নার্সিংহোমের মালিক সরকারি অর্থ নয়ছয় করেন। যাতে সে ধরনের কোনও ঘটনা না ঘটে সে জন্য ‘সারপ্রাইজ ভিজিটে’র নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। আরএসভিওয়াই প্রকল্পে নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক হরিশ দে বলেন, “সরকারি সুযোগের একশো শতাংশই যাতে সাধারণ গরিব মানুষের কাজে লাগে, সেই লক্ষ্যেই ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’। এতে পরিষেবার মানোন্নয়ন হয়।”
২০১০-১১ আর্থিক বছর থেকে আরএসভিওয়াই প্রকল্প চালু হয় জেলায়। এই প্রকল্পে কেন্দ্র দেয় ৭৫ শতাংশ অর্থ। বাকি ২৫ শতাংশ অর্থ দেয় রাজ্য সরকার। প্রতিটি গরিব পরিবারকে একটি করে ‘স্মার্ট কার্ড’ দিয়ে বিমার আওতায় নিয়ে আসা হয়। উপভোক্তাকে দিতে হয় মাত্র ৩০ টাকা। বিনিময়ে বছরে ৩০ হাজার টাকার চিকিৎসা পরিষেবা মেলে বিভিন্ন নার্সিংহোমে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নার্সিংহোমের তালিকাও দেওয়া হয়েছে। প্রতি পরিবারের ৫ জন সদস্য এই চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ পাবেন। ২০১০-১১ আর্থিক বছরে জেলায় বিমার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লক্ষ ১০ হাজার। কিন্তু ৩ লক্ষ ৬০ হাজার জনকে বিমার আওতায় আনা গিয়েছিল। ২০১১-১২ আর্থিক বছরে লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে হয় ৫ লক্ষ ৭২ হাজার। কিন্তু ৩ লক্ষ ৬৯ হাজারের বেশি মানুষকে বিমার আওতায় নিয়ে আসা যায়নি।
প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণেই প্রকল্পের এই দশা বলে অভিযোগ। যদিও প্রশাসনের ব্যাখ্যা, যে কোনও প্রকল্পে প্রথম বছরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন। মানুষকে সচেতন করতেই সময় চলে যায়। তা ছাড়া, প্রথম বছরে বিপিএল তালিকা নিয়ে জটিলতার জেরে সবং ব্লককে এর আওতায় আনা যায়নি। পরবর্তীকালে অবশ্য সবংয়েও প্রকল্প চালু হয়। এ ক্ষেত্রেও জটিলতা হয়েছিল। জেলায় স্বাস্থ্যবিমার দায়িত্বে রয়েছে ‘ন্যাশনাল ইনসিওরেন্স’। তাঁরা আবার একটি স্বীকৃত সংস্থাকে দিয়ে কাজ করায়। কিন্তু সেই সংস্থার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ নয়ছয়-সহ নানা অভিযোগ ওঠে। একটা সময় নার্সিংহোমগুলিকে টাকা দেওয়াও বন্ধ করে দেয়। ফলে নার্সিংহোমগুলি রোগী ফেরাতে শুরু করে। পরে অবশ্য ‘ন্যাশনাল ইনসিওরেন্স’ নতুন সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছে। প্রশাসনও জেলার চারটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।
এ বার একটি কার্ড করলে তিন বছর নতুন কার্ড লাগবে না। শুধু তার পুনর্নবীকরণ করতে হবে। চলতি বছরের ৭ লক্ষ ৪৭ হাজার লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩৬ হাজার জনকে বিমার আওতায় নিয়ে আসা গিয়েছে। দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। যাতে নভেম্বরের মধ্যেই এই কাজ শেষ করা যায়। গত দু’বছরে ১৫ হাজার ৬০৮টি পরিবার চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন বলে প্রশাসনের দাবি। যার জন্য ৮ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছিল।
এ বার আরও বেশিসংখ্যক পরিবারকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়াই প্রশাসনের লক্ষ্য। |