সম্মেলন-শৃঙ্খলার হাল দেখে প্রশ্ন উঠছে সিপিএমে
ক্ষেপ বিমানেরও ফাইনাল ম্যাচ হয়ে বিজয়ীর হাতে ট্রফি উঠে যাওয়ার পরে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যায় শুরু হল! এমনই উল্টো কাণ্ড ঘটছে সিপিএমের সংগঠনে!
রাজ্য, এমনকী সর্বভারতীয় সম্মেলন হয়ে যাওয়ার পরে কয়েকটি জেলায় সম্মেলন হচ্ছে যুব সিপিএমে! দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা ডিওয়াইএফআইয়ের সম্মেলন হয়ে যাওয়ার পরে এ বার আসর বসছে নদিয়ায়। রাজ্য এবং সর্বভারতীয় স্তরে কমিটি তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে জেলা সম্মেলন সম্পন্ন করতে দেখে বিস্ময় তৈরি হয়েছে সিপিএমেরই একাংশে! সংগঠিত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ দল বলে পরিচিত সিপিএমে এমন প্রবণতা যে সাংগঠনিক দুর্বলতারই পরিচায়ক, মেনে নিচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ। ঘটনাচক্রে, সম্মেলনে ভাল ভাল সিদ্ধান্ত নিয়ে তা রূপায়ণ করার দুর্বলতা নিয়ে এ বারের একটি পুজোসংখ্যাতেই আক্ষেপ ধরা পড়েছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর কলমেও।
সেপ্টেম্বরের সর্বভারতীয় সম্মেলনে ডিওয়াইএফআইয়ের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে বিদায় নেওয়া এক নেতার কথায়, “রাজ্য এবং সর্বভারতীয় সম্মেলনের আগেই জেলাগুলির সম্মেলন শেষ করার জন্য নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল। সময়ে সেই প্রক্রিয়া শেষ করতে না-পারা অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যর্থতা এবং বিচ্যুতি। তা ছাড়া, জেলা সম্মেলন থেকেই রাজ্য সম্মেলনের প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। সম্মেলন না-করতে পেরে ওই জেলাগুলিকে সাংগঠনিক কনভেনশন করে প্রতিনিধি পাঠাতে হয়েছে।” সিপিএমেরই একাংশ এমন ঘটনায় সুবিধাবাদী রাজনীতির গন্ধও পাচ্ছেন। যুব সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “সম্মেলন আগে না-হলে রাজ্য স্তরের কমিটিতে আগের জেলা কমিটির প্রতিনিধিদেরই থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা কখনওই হওয়া উচিত নয়। শীর্ষ নেতৃত্ব তা আগাম আন্দাজ করে কমিটিতে শূন্য স্থান রেখে দিলে এই ধরনের ঘটনা কিছুটা আটকানো যায়। তবে সময়ের পরে সম্মেলন করার এই ঘটনায় সংগঠনের মধ্যে ভুল বার্তা যাচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই।” সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব কেন আরও কড়া হাতে পরিস্থিতি আটকানোর চেষ্টা করলেন না, তা নিয়েও দলে প্রশ্ন উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতেই দলের রাজ্য কমিটির পাক্ষিক মুখপত্রের পুজোসংখ্যায় বিমানবাবু লিখেছেন, ‘সম্মেলনে মিলিত হয়ে নিজেদের কাজের পর্যালোচনা করে, ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে জনগণের স্বার্থে পার্টি ও গণফ্রন্টে ভাল ভাল সিদ্ধান্ত নিলে তা আপনা আপনি কার্যকরী হয়ে যাবে না। ভাল সিদ্ধান্তসমূহ সুষ্ঠু ভাবে কার্যকরী করতে প্রয়োজন হয় সচেতন, দক্ষ ও রাজনৈতিক বিচারবুদ্ধি-সম্পন্ন এক বিরাট ক্যাডার বাহিনীর’। দলের কর্মীদের এই রাজনৈতিক বিচারবুদ্ধিরই অভাব রয়ে যাচ্ছে বলে আক্ষেপ করে বিমানবাবু দাওয়াই দিয়েছেন, জেলায় জেলায় পার্টি স্কুল করে রাজনৈতিক শিক্ষার প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। রাজ্য পার্টি স্কুল গড়ে তোলার কাজে হাত দেওয়া হয়েছে বলেও রাজ্য সম্পাদক উল্লেখ করেছেন। তবে তাঁরা ধারাবাহিক ভাবে আত্মসমালোচনার কথা বলে গেলেও দল যে সমস্যার বাইরে বেরোতে পারছে না, তা-ও মেনে নিয়েছেন বিমানবাবু। ‘যে কাজে আমাদের গুরুত্ব দিতেই হবে’ শীর্ষক ওই নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘কাজ করলে ভুল হতে পারে কিন্তু ভুলকে ভুল হিসাবে স্বীকার করে তার থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগ্রহণ করতেই হবে। তা না-হলে ত্রুটি সংশোধনের প্রক্রিয়ায় আমরা আমাদের যুক্ত করতে পারব না’। বিমানবাবু ব্যাখ্যা করেছেন, কমিউনিস্ট পার্টিতে ‘নিষ্ক্রিয়তা’র কোনও জায়গা নেই বলে তাঁরা বলে আসছেন। অথত আবহমান কাল ধরে দলের মধ্যে নিষ্ক্রিয় সদস্য রয়ে যাচ্ছেন! নিষ্ক্রিয়তার কারণ জেনে ওই সদস্যদের সক্রিয় করার চেষ্টা করা এবং না-পারলে তাঁদের দলের ‘বন্ধু’ হিসাবে রাখার পরামর্শ ফের উঠে এসেছে বিমানবাবুর লেখনীতে।
নেতারা যা-ই বলুন, সাংগঠনিক শৃঙ্খলার হাল দেখে দলের মধ্যে বিস্ময় এবং ক্ষোভ বেড়েই চলেছে!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.