টানা তিন দিন বৃষ্টি চলেছে। আজ, শনিবারেও কলকাতা ও উপকূলবর্তী এলাকায় বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। সেই সঙ্গেই তাদের আশ্বাস, সোমবার, মহালয়ার দিন থেকে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার আবহাওয়া পরিষ্কার হয়ে যাবে। অর্থাৎ দেবীপক্ষের সূচনা হবে শরতের স্বাভাবিক আবহাওয়াতেই।
আরও আশার কথা হল, অনেক দেরিতে হলেও পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলি থেকে বর্ষা পাকাপাকি ভাবে বিদায় নিতে চলেছে আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে। আর কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকা
থেকে তার বিদায় নেওয়ার কথা আগামী সপ্তাহে। তবে বর্ষা চলে যাওয়ার পরে বৃষ্টি যে একেবারেই হবে না, সেই গ্যারান্টি দিচ্ছেন না আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, স্থানীয় ভাবে মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়ে বৃষ্টি হতে পারে। তবে সেই বৃষ্টি হবে নিতান্তই সাময়িক। বৃষ্টি বিদায় নিলেই উঠবে রোদ।
হাওয়া অফিস কিছুটা আশ্বস্ত করলেও পুজোর উদ্যোক্তারা যে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না, তার কারণ লাগাতার বর্ষণ। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপের ফলে বুধবার থেকে কলকাতা এবং রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায় দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার কলকাতা, ডায়মন্ড হারবার ও বসিরহাটে ৩০ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবারেও ওই তিন এলাকায় গড়ে ১০ মিলিমিটার করে বৃষ্টি হয়। আজও বৃষ্টি থেকে রেহাই পাবে না কলকাতা।
গভীর নিম্নচাপটি বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছিল বৃহস্পতিবারেই। শুক্রবার তা শক্তি কমিয়ে ঢোকে অসমে। তবু কলকাতায় বৃষ্টি হয়েই চলেছে কেন?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, “নিম্নচাপটি বাংলাদেশে ঢুকে গেলেও তার প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে। তার দাপটেই কলকাতা এবং সংলগ্ন অবস্থায় বৃষ্টি হচ্ছে।” তবে তাঁর আশ্বাস, অসমের উপরে থাকা নিম্নচাপটি আরও দুর্বল হয়ে গেলে নিম্নচাপ অক্ষরেখাও বিদায় নেবে। পরিষ্কার হয়ে যাবে আকাশ।
পুজোর বাকি আট দিন। কলকাতার মণ্ডপগুলিতে চলছে শেষ মুহূর্তের তুলির টান। প্রতিমাও পৌঁছতে শুরু করেছে বিভিন্ন মণ্ডপে। মহালয়ার মধ্যে সব কাজ শেষ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অনেক পুজো কমিটিই। কিন্তু শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে মূর্তিমান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃষ্টি। কোথাও কোথাও মণ্ডপের মধ্যে কাদা। এখানে-ওখানে জমে রয়েছে জল। রোদের তেজ না-থাকায় জল শুকোচ্ছে না। শেষ বেলায় বিপদে পড়েছেন কুমোরটুলির শিল্পীরাও। তাঁদের অনেকের কাজ এখনও শেষ হয়নি। মহালয়ায় কী ভাবে মণ্ডপে প্রতিমা পাঠানো যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা।
শুক্রবার বিকেলে যাঁরা পুজোর বাজার করতে বেরিয়েছিলেন, নাছোড় বৃষ্টিতে ভুগেছেন তাঁরাও। ভিজতে ভিজতেই বাজার করেছেন অনেকে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে নাগরিকদের অনুযোগ, গোটা বর্ষাকালে যে-বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল, উৎসবের মুখে তার দাপট কেন! আশ্বিনের শেষ বেলায় বঙ্গোপসাগরে দু’-দু’টি নিম্নচাপ তৈরি হওয়ায় রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মানুষ। এ দিন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু আশঙ্কা পুরোপুরি কাটছে না। দেবীপক্ষে নতুন কোনও নিম্নচাপ কিংবা নিম্নচাপ অক্ষরেখা ঝামেলা পাকাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তা থাকছে যথেষ্টই।
গোকুলবাবু অবশ্য বলেন, “নতুন কোনও নিম্নচাপ তৈরির পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত চোখে পড়ছে না।” |