ট্রেন-বাহনেই কাঁচামাল এনে রমরমা হেরোইনের
ষুধ থেকে চর্ম, বস্ত্র, কাগজ প্রভৃতি শিল্পে লাগে অ্যাসেটিক অ্যানহাইড্রাইড। সে-ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিয়ে আইনি পথেই চলে তার কেনাবেচা। আবার ওই রাসায়নিকের অবৈধ ব্যবহারে পাওয়া যায় মারাত্মক মাদক। হেরোইন তৈরির অন্যতম উপাদান ওই অ্যাসেটিক অ্যানহাইড্রাইড। সম্প্রতি শিয়ালদহে অনন্যা এক্সপ্রেস থেকে প্রচুর পরিমাণে ওই রাসায়নিক আটক করেছে নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো।
আগেও বহু বার ওই রাসায়নিক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু এ বারের তুলনায় তা যে কার্যত নস্যি, মানছেন দফতরের কর্তারাও। তাঁদের বক্তব্য, আগে কখনও ১০, কখনও বা বড়জোর ২০ কিলোগ্রাম অ্যাসেটিক অ্যানহাইড্রাইড একসঙ্গে আটক করা হয়েছে। কিন্তু এ বার মিলেছে একেবারে ৩৬০ কিলোগ্রাম! অফিসারদের মতে, এই পরিমাণ অ্যাসেটিক অ্যানহাইড্রাইড ব্যবহার করে ১৫০ কিলোগ্রাম হেরোইন তৈরি করা সম্ভব! আন্তর্জাতিক বাজারে এক কিলোগ্রাম হেরোইনের দাম প্রায় এক কোটি টাকা। আর ভারতের বাজারে দাম ৫০ লক্ষ টাকার মতো।
রাজস্থানের জয়পুর থেকে অনন্যা এক্সপ্রেসে ছ’টি বড় জ্যারিকেনে ওই বিপুল পরিমাণ অ্যাসেটিক অ্যানহাইড্রাইড শিয়ালদহে পৌঁছয় গত ২ অক্টোবর। রাজস্থান থেকে রওনা হওয়ার আগেই খবর পৌঁছে গিয়েছিল কলকাতায়। শিয়ালদহ স্টেশনে অপেক্ষায় ছিলেন অফিসারেরা। জ্যারিকেন-সহ ধরা পড়ে যায় মহম্মদ আশ নামে এক ব্যক্তি। সে মুর্শিদাবাদের লালগোলার বাসিন্দা। নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোর ডিরেক্টর আর কে সাহু বলেন, “ধৃতকে জেরা করে লালগোলায় এক ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছিলাম। কিন্তু তাকে ধরার জন্য আমাদের লোকজন সেখানে পৌঁছনোর আগেই সে পালিয়ে যায়।”
লালগোলা এবং সংলগ্ন এলাকায় মরফিনের সঙ্গে অ্যাসেটিক অ্যানহাইড্রাইড মিশিয়ে দেদার তৈরি হচ্ছে হেরোইন। কন্ট্রোল ব্যুরোর অফিসারদের মতে, সেই হেরোইনের কিছু অংশ ভারতের বাজারে ছড়িয়ে যায়। তবে তার বেশির ভাগই বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে চলে যায় বিদেশে। অফিসারদের কথায়, “এক বার অ্যাসেটিক অ্যানহাইড্রাইডের ‘সাপ্লাই চেন’ বা সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিলে মরফিন পর্যন্ত তৈরি হয়ে প্রক্রিয়াটি আটকে যাবে। হেরোইন আর তৈরিই হবে না।”
কিন্তু অ্যাসেটিক অ্যানহাইড্রাইড তৈরি একেবারে বন্ধ করার ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধাও আছে। কারণ, ভারতে ওষুধ এবং অন্যান্য শিল্পের প্রয়োজন মেটাতে আইনি পথেই তৈরি হচ্ছে এই রাসায়নিক। তাই এর ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করা মুশকিল বলে দফতরের অফিসারেরা জানান।
ইদানীং কলকাতারও বেশ কয়েকটি জায়গায় লুকিয়েচুরিয়ে অ্যাসেটিক অ্যানহাইড্রাইড তৈরি করা হচ্ছে বলে খবর এসেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর কাছে। ঘিঞ্জি বস্তির ভিতরে বা অন্যান্য রাসায়নিক (আইন মেনেই যা তৈরি করা হয়ে থাকে) তৈরির কারখানায় গোপনে এই রাসায়নিক তৈরি হচ্ছে। খবর পেয়ে সেই সব জায়গায় হানা দিয়েও খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে অফিসারদের।

মাদকের কিস্সা
অ্যাসেটিক অ্যানহাইড্রাইড
• জলের মতো। ঝাঁঝালো গন্ধ।
• ইথাইল অ্যালকোহল ও ফসফরাস পেন্টক্সাইড মিশিয়ে তৈরি।
• লাগে ওষুধ, চর্ম, বস্ত্র, কাগজ শিল্পে।
• লাইসেন্স নিয়ে বিক্রি হয় ৯৫ টাকা কেজি দরে।
• হেরোইনের জন্য বিক্রি হলে দাম বেড়ে যায় ৫০ গুণ।
কী ভাবে তৈরি হয় হেরোইন
• পোস্তগাছের আঠা থেকে তৈরি হয় আফিম। তার সঙ্গে
চুন অথবা বেঞ্জিন মিশিয়ে পাওয়া যায় মরফিন।
• মরফিনে অ্যাসেটিক অ্যানহাইড্রাইড মেশালে
হয় ‘ক্রুড হেরোইন’ বা ব্রাউন সুগার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.