পুস্তক পরিচয় ৩...
কীসের ব্রাত্য, রুদ্ধ কোথায়
৯৬১ সাল। রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষ। আমার বয়স তখন বারো। ৭৮ আর পি এম গ্রামোফোন রেকর্ডে শুনছি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘মনে কি দ্বিধা রেখে গেলে চ’লে’ আর অন্য পিঠে ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’। আমি হেমন্তপন্থী। এক দিন রেডিয়োয় শুনলাম ‘আকাশভরা সূর্যতারা’। গানটা শুরু হল মহাগম্ভীর এক ধাক্কা দিয়ে। দাদা ভারি রসিক। বলে উঠল, এ যে গানের নামে বকুনি দিচ্ছে রে। মা-ও শুনছিলেন। বলে উঠলেন, বকুনি কী রে! ও যে কী মজার লোক আর কী দুর্দান্ত গাইয়ে তোরা আজ বুঝতে পারছিস না। দেবব্রত বিশ্বাস। তোদের বাবা আর আমার কাছে জর্জ। হাঁপানিতে ভোগে। ওর অল্প বয়সে ও যা গাইত সে তোরা কল্পনাও করতে পারবি না।
তা হবে। আমাদের কিন্তু খুব ভাল লাগল না। কিন্তু এটা টের পেলাম যে আওয়াজটা আলাদা আর নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদার গল্পে পড়া ‘বিরাশি শিক্কার থাপ্পড়ের’ মতো। গান শুনছি আর মালুম হচ্ছে পড়ছে। একের পর এক। কোনও কিছুকে নরম করে তোলার কোনও ইচ্ছেই নেই। এই দিকটা বেশ লাগল। অন্যদের থেকে আলাদা।
দু’দিন পরেই রেডিয়োয় দেবব্রত বিশ্বাসের গাওয়া ‘যেতে যেতে একলা পথে’ শুনে ফেললাম। সঞ্চারিতে ‘যে পথ দিয়ে যেতেছিলেম ভুলিয়ে দিল তারে’ গাইতে গিয়ে ‘ভুলিয়ে’ আর ‘দিল’তে ওই ভারি গলাটাকে যে ভাবে খেলালেন তিনি, চমকে উঠলাম। নিজে গাইতে চেষ্টা করে দেখলাম হল না। সেই থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি। বারো থেকে তেষট্টি। আজও হচ্ছে না। যা বুঝছি, আর হবেও না এ জীবনে। তেমনি, কিছু কিছু গান গাইতে গিয়ে আমার আজও পছন্দ হল না। বেশিরভাগ বাঙালির আবার ঔইটাই ভাল লাগে। বিশ্বভারতীর সঙ্গীত-বোর্ড তাঁর রেকর্ড করা রবীন্দ্রনাথের একটি গানকে ‘মেলোড্রামাটিক’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করে দিয়েছিলেন।
দেবব্রত বিশ্বাসের গানের রেকর্ড কিন্তু প্রথম থেকে আটকে দেওয়া হয়নি। অনেকগুলি গানই অনুমোদন পেয়েছিল। তার পর আসে কয়েকটি গানের ব্যাপারে বাধা। সঙ্গীত-বোর্ডের এই বাধা কিন্তু হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কেও সইতে হয়েছিল। সইতে হয়েছে আরও অনেককে। কোনও কোনও রেকর্ডিং-এ এই আপত্তিটাকে দেবব্রত বিশ্বাস কেন যে এত গুরুত্ব দিলেন। তিনি ব্রাত্য? মানুষ তাঁকে মাথায় করে রেখেছিল, আজও রাখে। তাঁর জন্মশতবর্ষে প্রকাশিত ঝড় যেতোমারজয়ধ্বজা (শ্যামল চক্রবর্তী, অক্ষর পাবলিকেশন্স, ৪০০.০০) এবং দেবব্রতবিশ্বাসশতবর্ষস্মরণগ্রন্থ:আমিব্রাত্যআমিমন্ত্রহীন(ডান্সার্স গিল্ড ও দেবব্রত বিশ্বাস শতবর্ষ উদ্যাপন কমিটি, ৪০০.০০) এই দুটি সংকলনে কত লেখা। সবই প্রশস্তিমূলক। আমাদের এই এক বৈশিষ্ট্য: কাউকে ভাল বলতে হলে তাঁর আগাপাস্তালা সব কিছুকেই ভাল বলে বলে একঘেয়ে বানিয়ে তবে ছাড়ি। দেবব্রত বিশ্বাস কিন্তু না ছিলেন ব্রাত্য, না ছিলেন একঘেয়ে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.