|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
আদতে আত্মপরিচয়ের আখ্যান |
শিলাদিত্য সেন |
নুন চা/ চায়ের দেশের নুনকথা, বিমল লামা। সপ্তর্ষি, ৪০০.০০ |
গোর্খাল্যান্ড হুনে ছৈ ন। এ হবার নয়। কে দেবে তোকে গোর্খাল্যান্ড?... আধি বাঙালি ভাবে আমরা চিনা, আরশোলা খাই। কেউ ভাবে আমরা জাপানী, সাপ খাই। কেউ ভাবে না আমরা ইন্ডিয়ান।’ এ শুধু একটা সংলাপ নয়, উত্তরবঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফ থেকে ডুয়ার্সের সবুজ জুড়ে বাঁচে যে জনজাতি, তাদের গভীর দুঃখ আর দীর্ঘশ্বাস। কথাগুলো বলে যে চরিত্রটি তেমন আরও চরিত্র নুন চা উপন্যাসে, শেষ হওয়ার মুখে যেমন একটি চরিত্র বলে ‘গোর্খা মানে ওয়াচম্যান, এটাও তো বড়লোকের কাছে নিয়ম... ।’ উল্টো দিকে উরগেন, এ উপন্যাসের মূল ব্যক্তিমানুষটি, পাল্টা জবাব দেয় ‘এখানেই আমাদের লড়াই। এ নিয়ম আমরা বদলে দেব।’
কোনও আন্দোলনের উপন্যাস লেখেননি বিমল লামা, কিংবা প্রকট রাজনীতির। কিন্তু পার্বত্য জনজাতির অস্তিত্ব যে তলানিতে এসে ঠেকেছে, তারই আখ্যান তাঁর লেখনীতে। যে সব ব্যক্তিমানুষকে নিয়ে লেখেন বিমল, তাদের সংজ্ঞা বা জটিলতা খুঁজতে গিয়ে চরিত্রগুলির জীবনযাপন হয়ে ওঠে ইতিহাসের মতোই তথ্যনির্ভর।
নিসর্গনন্দিত এ-উপন্যাসে একই সঙ্গে ঠাঁই পেয়েছে পেশাযুক্ত ও পেশাহীন মানুষ, তাদের ভিতরকার সম্পর্কের ভাঙচুর ও নানান নকশা। সেখানে যাপনের দৈনন্দিন যেন জীবনের নিয়ন্ত্রক সামাজিক ব্যবস্থার প্রতিস্পর্ধী। ছোট ছোট বৃত্ত ফুঁড়ে এগোয় আখ্যান, কিন্তু বৃত্তান্তের মায়ামৃগে ভোলায় না।
দীর্ঘকাল উপনিবেশের প্রজা হয়ে থাকার ফলে আমাদের স্বাদেশিকতার বোধ বড্ডই অখণ্ডতার ছাঁচে আটকে গেছে, সামাজিক বহুবৈচিত্র সম্পর্কে অভিজ্ঞতালব্ধ ধারণাগুলিও নষ্ট হতে বসেছে, বিমল তাঁর উপন্যাসে সেই লুপ্ত বোধগুলিকে পুনরুদ্ধার করেছেন। তাঁর ভাষার খর চলিষ্ণুতায় মিশে আছে লোকায়তের পৌরুষ। শ্বাসেপ্রশ্বাসে, ঘামেরক্তে, প্রতি মুহূর্তের নিজস্ব বাঁচার কঠিন আনন্দে স্পন্দমান এই উপন্যাস আদতে আত্মপরিচয়ের আখ্যান।
আর তাতেই তাঁর সম্পর্কে দেবেশ রায় লিখেছেন ‘গত কয়েক বছরের সবচেয়ে ভাল বাংলা উপন্যাস লিখেছেন একজন নেপালি-বাঙালি।’ আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: ‘লেখক কি সত্যিই আমাদের পাহাড় অঞ্চলের নেপালি, না কি কোনও বাঙালি লেখকের ছদ্মনাম?’ |
|
|
|
|
|