র্যান্টি, ওডাফা, টোলগে। বর্তমান ভারতীয় ফুটবলের ‘অমর-আকবর-অ্যান্টনি’-রা ছিলেন। কিন্তু তাঁদের ছাপিয়ে শুক্রবার বিকেলের যুবভারতীতে নায়ক কোস্তারিকার বিশ্বকাপার কার্লোস হার্নান্ডেজ। মাঝমাঠে বাদশার মতো তাঁর ৯০ মিনিটের কর্তৃত্ব প্রশ্ন তুলে দিল, ময়দান কি নতুন মজিদ বাসকর পেল?
কেন এই প্রশ্ন? মজিদের মতোই মাঝমাঠের রিমোট কন্ট্রোল কার্লোসের মুঠোয়। আঠার মতো পায়ে লেগে রয়েছে বল। পায়ে দুরন্ত শট। যা দেখে প্রাক্তন ফুটবলার সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “ছেলেটার পাসগুলো অনেকটাই মজিদের মতো।”
যদিও আশির দশকের মানস-বিদেশ-প্রসূনরা এই প্রশ্ন মানতে নারাজ। যার হাত ধরে মজিদের কলকাতায় আসা সেই জামশিদ নাসিরি বললেন, “আগে বছর দুই খেলুক। তার পরে মন্তব্য করা যাবে।”
|
ময়দানে যিনি ‘দুটো ফুসফুস’ নিয়ে খেলতেন বলে কিংবদন্তি সেই গৌতম সরকার অবশ্য বলছেন, “কার্লোস জাত ফুটবলার। সত্যিই ওর বল ধরা এবং ছাড়া মজিদের কথা মনে করিয়ে দেয়। তবে মজিদ হতে গেলে ওকে অনেক পথ হাঁটতে হবে।”
কার্লোস কতটা পথ হেঁটে গেলে মজিদ হবেন, সময় বলবে। ফেড কাপে সে ভাবে সাড়া জাগাতে না পাড়া কোস্তারিকান কার্লোস কিন্তু শুক্রবারের প্রথম হাই ভোল্টেজ ম্যাচের পর বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন তিনি ময়দানে থাকতেই এসেছেন।
ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল রয়েছে। গোল করেছেন দেল পিয়েরোর জুভেন্তাসের বিরুদ্ধেও। ভারতীয় ফুটবলে এ রকম ঝলমলে বিদেশি এই প্রথম।
শুক্রবারের ম্যাচে কী এমন করলেন কার্লোস যে রাতারাতি তাঁকে নিয়ে মজিদের সঙ্গে তুলনা? প্রথম ১৫ মিনিট যখন মোহনবাগানের দখলে ম্যাচ, তখন কার্লোসই তাতালেন সতীর্থদের। তারপর সেই সব ঠিকানা লেখা পাস বাড়ানো। তিনি যে জুভেন্তাস এবং ফ্রান্সের বিরুদ্ধে গোল করে কলকাতা মাতাতে এসেছেন তা বুঝতে ভিনসেন্টের জয়সূচক গোলের পাসই যথেষ্ট। মাঝমাঠে সুখেনের থেকে বল পেয়ে যখন মোহনবাগান বক্সের কোনাকুনি জায়গায় কার্লোস পৌঁছলেন, তখন সামনে মোহনবাগানের তিন জন। রাজীব, ডেনসন, নির্মল। |
|
ময়দানে নতুন মজিদ
বাসকর কি এসে গেল? |
|
মানস ভট্টাচার্য
এখনই তুলনা টানা বাড়াবাড়ি। মজিদ বাসকর একাই ম্যাচের রঙ বদলে দিত। দু’টো পা-ই সমানে চলত। কার্লোস ভাল, তবে ইস্টবেঙ্গল, ডেম্পো আর চার্চিলের বিরুদ্ধে কী রকম খেলে, সেটা দেখে মন্তব্য করব। |
সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়
মজিদের সঙ্গে খেলিনি, খেলা দেখেছি। আমার দেখা সেরা বিদেশি ফুটবলার। কার্লোসের খেলা দেখার পর বলব, মজিদের সঙ্গে ওর পাসিংয়ের অনেক মিল রয়েছে। |
গৌতম সরকার
মজিদের বিপক্ষে খেলেছি। আর কার্লোসের খেলা দেখলাম। মজিদের খেলায় অনেক বৈচিত্র্য ছিল। আর কার্লোসের বল ধরা, বল ছাড়া, বডি মুভমেন্ট অসাধারণ। দু’জনের ঘরানা আলাদা। |
|
কিন্তু আলতো টার্নে তাঁদের বোকা বানিয়ে হিল করে ভিনসেন্টকে যে বল বাড়ালেন তা গৌতম সরকারের কথায়, “কোটি টাকার পাস।”
ময়দানের বড় ক্লাবের কর্মকর্তাদের কাছে শিক্ষণীয় প্রয়াগ কর্তা নবাব ভট্টাচার্যের উদ্যোগ। যিনি ‘বহু রাতের ঘুম নষ্ট করে’ ব্র্যাডম্যানের দেশ থেকে খুঁজে এনেছেন কার্লোসকে। আর নবাব দেখাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের অর্চি থমসনকে। যিনি নিজে না এসে কার্লোসকে নেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন তাঁর কাছে। নবাবের কথায়, “অর্চির পরামর্শেই ইউটিউবে দেখলাম মেলবোর্ন ভিকট্রিতে ওর সব গোল এই কার্লোসের পাস থেকে। কেবল পাস বাড়িয়েই বহু ম্যাচের সেরা কোস্তারিকান বিশ্বকাপার।”
যাঁকে নিয়ে এত কথা, সেই কার্লোস ম্যাচের পরে প্রশ্ন তুললেন, “এখানে গোল করলেই বুঝি ম্যাচ সেরা হওয়া যায়? যে গোটা ম্যাচ জুড়ে ঠিকানা লেখা পাস বাড়ায় সে কি বঞ্চিতই থাকে?” মজিদের সতীর্থ মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বলছেন, “বাসকর কিন্তু টিমম্যান ছিল।”
মনোরঞ্জন-জামশিদদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়াই এখন কার্লোসের পথের পাঁচালি। |