মোহনবাগানের এমন দুর্দশা নিয়ে যে কখনও লিখতে বসতে হবে, কোনও দিন ভাবিনি। ক্লাবের সদস্য, প্রাক্তন ফুটবলার, টেকনিক্যাল কমিটির এক সময়কার চেয়ারম্যান হিসেবে নয়। আজ যুবভারতীতে গিয়েছিলাম মোহনবাগানকে মন থেকে ভালবাসি বলে। কপালে যে এই জিনিস জুটবে কে জানত!
কষ্ট হচ্ছে বললে কিছুই বলা হয় না। সন্ধে থেকে অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগছি। এ কোন মোহনাবাগানকে দেখে এলাম? কারা খেলছে ঐতিহ্যশালী ক্লাবে? আমাকে ক্ষমা করবেন। আজন্ম মোহনাবাগান সমর্থক হয়েও আমার পক্ষে নব্বই মিনিট ম্যাচ দেখা সম্ভব হয়নি। হাফটাইমে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। ভয় লাগছিল, ১-২ নয়, যে ভাবে চলছে তাতে ১-৪ গোলে হেরে যাব!
কয়েকটা ব্যাপার এখন আমার বলার সময় হয়েছে। আমাকে ফেডারেশনের এক কর্তা বলেছিল, আপনারা টোলগেকে পাওয়ার জন্য এত ঝামেলায় জড়াচ্ছেন। ও কী এমন ফুটবলার? কথাটা তখন বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু আজ মোহনবাগান সমর্থকদের কাছে আমার অনুরোধ, টোলগেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন। ও একজন অতি, অতি সাধারণ মানের স্ট্রাইকার। যে জানে না বল কখন ধরতে হয়, কখন ছাড়তে হয়। জানে না কী ভাবে ওডাফার মতো স্ট্রাইকারের সঙ্গে ওয়াল খেলতে হয়। একজন জাত স্ট্রাইকারের বল-কন্ট্রোল থাকে। জায়গা বদলে বদলে বিপক্ষকে কাঁদিয়ে ছাড়ে। টোলগে সে সব কিছুই পারে না। এখন আর বিশ্বাস হয় না ও অস্ট্রেলিয়ার কোনও ডিভিশনে ফুটবল খেলেছে বলে। এর জন্যই কি না ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে এত ঝামেলায় গেলাম! যার কি না ক্লাবের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতাই নেই। সামান্য দায়বদ্ধতা থাকলে আজ একটা প্রশ্ন করতাম টোলগেকে। জিজ্ঞেস করতাম, তুমি মোহনবাগানে কী করছ? মনে হচ্ছে না তুমি এখানে মিসফিট? |
আর এটাই বা কোন মোহনবাগান টিম? ডিফেন্স, অ্যাটাক, মিডফিল্ড সবই তো সহারা মরূভূমি! আজ মোহনবাগানের জার্সি গায়ে যারা মাঠে ছিল, দু’একজন ছাড়া কেউ ফুটবলের অ-আ-ক-খ জানে বলে মনে হয়নি। স্পষ্ট বলে রাখছি, এই কোচ দিয়ে হবে না। আমি কোচ তাড়ানোর কর্মসূচিতে বিশ্বাসী নই। কিন্তু মোহনবাগানের ভাল করতে গেলে সন্তোষ কাশ্যপকে সরাতেই হবে। নিয়ে আসতে হবে সুব্রত ভট্টাচার্য বা করিম বেঞ্চারিফাকে। কাশ্যপকে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করতে চাই না। শুনেছিলাম ও মুম্বইয়ে কোচিং করাত। কিন্তু বড় দলের চাপ হয়তো নিতে পারছে না। তোমার টিম যদি ঠিকঠাক ম্যাচ প্র্যাক্টিস না পায়, তোমার স্ট্র্যাটেজি হবে রক্ষণ সামলে আক্রমণে যাওয়া। মন্ত্রটা হওয়া উচিতজিততে না পারি, গোল খাব না। কিন্তু কাশ্যপ তো রক্ষণই গোছাতে পারেনি। সুব্রত-করিম এলে ম্যাচ প্র্যাক্টিস করিয়ে এই টিমকেই কিন্তু দাঁড় করিয়ে দেবে।
বরং আজ কার্লোস হার্নান্ডেজকে দেখে বেশ ভাল লাগল। মজিদ বাসকরের সঙ্গে তুলনা এখনই করছি না। কিন্তু ও বেটোর মানের ফুটবলার। পেনদের চেয়ে অনেক ভাল। ওডাফাকেও মন্দ লাগেনি। ম্যাচ ফিট নয় এখনও। ওকে ঠিকঠাক ব্যবহার করতে হবে। ওডাফার দায়বদ্ধতা আছে। ও টোলগে নয়। আর একটু ফিট হলে ও কাঁপিয়ে দেবে।
ম্যাচের পর অনেকেই দেখলাম জিজ্ঞেস করছেন, আমি টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম। কেন ভাল একটা টিম গড়ার কথা ক্লাবকে বলিনি? কেন এই সব অযোগ্য প্লেয়াররা ভিড় করছে? যাঁরা প্রশ্নটা করছেন তাঁদের বলি, টেকনিক্যাল কমিটি বলে কিছুর অস্তিত্বই আর নেই। এই টিমের একটা প্লেয়ারও আমার টেকনিক্যাল কমিটির বেছে দেওয়া নয়।
সব শেষে একটা কথা। এই বয়সে পৌঁছে আর কিছু পাওয়ার নেই। তাই ক্লাব কর্তাদের হয়ে ভাল ভাল কথা বলা সম্ভব নয়। তবু বিদ্বেষে না গিয়ে একটা শুধু অনুরোধ করব। দশা তো দেখছেন, এ বার একটু সচেতন হন আপনারা। এই টিম দিয়ে কিন্তু আই লিগ জিততে পারবেন না। |
বিক্ষোভ কী ভাবে তৈরি হল |
বিক্ষোভের লক্ষ্য |
২৭ মিনিট: প্রয়াগের গোল শোধের পর গ্যালারিতে
মোহনবাগান কর্তাদের লক্ষ্য করে গালিগালাজ শুরু।
৪৩ মিনিট: প্রয়াগের দ্বিতীয় গোলের পর ভিআইপি
গ্যালারি লক্ষ্য করে উড়ে এল হাওয়াই চপ্পল।
বিরতিতে: সচিবকে লক্ষ্য করে গালিগালাজের সঙ্গে
উড়ে এল জলের বোতল, মদের বোতল, ইঁট।
৪৬ মিনিট: বাইরে এলেই মার খাবি
কর্তাদের লক্ষ্য করে গ্যালারির তোপ।
৪৯ মিনিট: পুলিশি ঘেরাটোপে সচিবকে মাঠ
থেকে বার করে গাড়িতে তুলে দেওয়া হল।
৬৭ মিনিট: মোহনবাগান রিজার্ভ বেঞ্চের দিকে
উড়ে এল ইট। গ্যালারিতে পুলিশি তৎপরতা।
৯০ মিনিট: ম্যাচ শেষ। টোলগেদের লক্ষ্য
করে মাঠে ফের ইঁট-বোতল বৃষ্টি। |
টোলগে: গোলকিপারকে একা পেয়ে সুযোগ নষ্ট।
বাকি সময় অতি সাধারণ।
ম্যাচ শেষে বাইপাসে গাড়ি থামিয়ে
খোঁজ মারমুখী সমর্থকদের।
কোচ: বেহিসাবি দল নির্বাচন।
ভুল স্ট্র্যাটেজি-ট্যাকটিক্স। ক্রদ্ধ
সমর্থকরা ‘গো ব্যাক’ আওয়াজ তুললেন।
মোহনবাগানের রিক্রুটাররা: কেন রক্ষণের জন্য
ভাল বিদেশি নয়। মাঝমাঠে পাসার কোথায়?
প্রশ্ন তুলে ক্ষোভের বিস্ফোরণ।
লক্ষ্য সচিবসহ উপস্থিত কর্তারা। |
|