মাঠ থেকে তখন সবে বেরোচ্ছি। দেখলাম, বেশ কিছু সবুজ-মেরুন সমর্থক ওদের রহিম নবিকে তুমুল গালিগালাজ করছে। নবিও দেখলাম উত্তেজিত হয়ে পাল্টা বলে চলেছে। আমি তখন নবির পিছনেই ছিলাম। ওকে ডেকে বললাম, এ ভাবে মেজাজ হারালে কী ভাবে হবে? তোমারই তো দায়িত্ব এখন সবচেয়ে বেশি। টিমটাকে তো টেনে তুলতে হবে।
আমি মোহনবাগান সমর্থকদের একটাই কথা চাই। আপনাদের ক্লাব অনেক বড় ক্লাব। অনেক বড় বড় ফুটবলার এখানে খেলে গিয়েছে, এখনও খেলছে। আজ কিন্তু আপনাদের ক্লাব খারাপ খেলেনি। আমরা ওদের চেয়ে ভাল খেলেছি। সেটা মেনে নিন। আর ওডাফা-নবিদের বলব, হারের যন্ত্রণায় ডুবে থেকে লাভ নেই। বরং কাটাছেঁড়া করো। বিশ্লেষণে বসো।
টোলগেও শুনলাম সমর্থকদের বিক্ষোভের সামনে পড়েছে। একটা ম্যাচ দেখে ওর মতো ফুটবলারকে বিচার করতে যাওয়া ঠিক হবে না। টোলগে যথেষ্ট বিপজ্জনক স্ট্রাইকার। যে কোনও সময় কালঘাম ছুটিয়ে দেবে। টোলগে আজ পারেনি, কারণ আমাদের ডিফেন্ডাররা ওকে খেলতে দেয়নি। আর একজন স্ট্রাইকার তো ইচ্ছেমতো সব সময় খেলতে পারে না। বিপক্ষের ডিফেন্ডাররা কেমন, সেটার উপর নির্ভর করে অনেক কিছু। আমি বলব, আমাদের ডিফেন্ডাররা ওর চেয়ে আজ অনেক ভাল খেলেছে! |
তুমুল উচ্ছ্বাসকে পিছনে রেখে ট্র্যাজিক প্রস্থান। ছবি: উৎপল সরকার |
মোহনবাগান আজ একটা অদ্ভুত স্ট্র্যাটেজিতে খেলতে গেল। ওদের মাঝমাঠের ব্যর্থতা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আসলে টোলগেদের আজ স্ট্র্যাটেজি ছিল ম্যাচটাকে ওপেন করে দেওয়া। ও ভাবে হয় নাকি? নব্বই মিনিট ধরে ও রকম ওপেন ফুটবল খেলা সম্ভব নয়। তবে ম্যাচটা মোহনবাগান হারার পরই দেখছি, চার দিকে গেল গেল চিৎকার উঠে গিয়েছে। আরে বাবা, আইলিগে তো সবে দু’টো ম্যাচ হেরেছে ওরা। এক দিনে টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যাচ্ছে এমন তো নয়।
মোহনবাগানের কথা অনেক হল। নিজেদের কথায় ফিরি। আমাদের কার্লোসকে আপনাদের কেমন লাগল? এর মধ্যেই তো ওর সঙ্গে বেটোর তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি এখনই অতটা বলব না। তবে হ্যাঁ, কার্লোস অসাধারণ ফুটবলার। আমার মতোই টিমগেমে বিশ্বাস করে। আমি আজ নীচ থেকে নেমে অপারেট করছিলাম, সেটা নিশ্চয়ই আপনারা খেয়াল করেছেন। আসলে মোহনবাগানের মতো বড় টিমের সঙ্গে খেলতে নামলে, এগারো জনের মধ্যে যোগাযোগ থাকাটা খুব জরুরি। যাকে ‘লিঙ্ক’ বলে। আমি স্রেফ স্ট্রাইকার হিসেবে খেলে গেলে মোহনবাগানকে এতটা চাপ হয়তো দেওয়া যেত না। তা ছাড়া ওরা যে স্ট্র্যাটেজিতে খেলছিল, তাতে মনে হয়েছিল একটু নীচে নেমে খেললে সেটা বেশি কাজে আসবে।
সব শেষে ওডাফার কথায় আসি। ওর সঙ্গে আমার যুদ্ধ আজকের নয়। সেই গোয়া থেকেই চলছে। এক সময় দু’জনেই গোয়ার ক্লাবে আলাদা আলাদা খেলেছি। দু’জনই এখন কলকাতায়। আর কলকাতায় এটাই আমাদের প্রথম লড়াই ছিল। লড়াইয়ে আপাতত আমিই এগিয়ে। বলতে পারেন, ওডাফাকে হারিয়ে আমি তৃপ্ত। কিন্তু শুধু আমার একার ভাল খেলায় জিতিনি। জিতেছি পুরো টিমটা একসঙ্গে ভাল খেলেছে বলে। ফুটবল ওয়ান ম্যান শো নয়। এগারো জনের খেলা। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আজ আমরা পুরো পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছি।
অনেকেই জানতে চান ওডাফার সঙ্গে কথা হলে ওকে আমি কী বলতাম। আমি বলতাম, তুমি দারুণ প্লেয়ার। জানি খুব খাটছো। চালিয়ে যাও বন্ধু। গুড লাক! |