ফসল নষ্ট ভুলে হাতি বাঁচাতে ঝাঁপ ক্যানালে
যারা তাঁদের খাবারে ভাগ বসায় বছরভর, যাদের হামলায় তাঁদের জীবন বিপর্যস্ত, যাদের তাড়াতে বন দফতরে তাঁদের নিত্য বিক্ষোভ ও ধর্নাসেই হাতি বাঁচাতেই প্রাণপাত করলেন গ্রামবাসীরা।
শুক্রবার এমনই এক মানবিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকল বাঁকুড়ার সোনামুখী থানার ধানসিমলা গ্রাম।
এক মাস গড়াতে চলল মাঠে পাকা ফসলের স্বাদ পেয়ে বাঁকুড়ার জঙ্গল থেকে নড়তেই চাইছে না দলমার শতাধিক হাতির একটি দল। তাদের উপদ্রবে মাথায় হাত পড়েছে সোনামুখীর জঙ্গল লাগোয়া ধানসিমলা, রাজদহ, রানি, গুমসরা, মাস্টারডাঙ্গা প্রভৃতি গ্রামের লোকের।
ক্যানালে আটকে পড়া একটি হাতিকে উদ্ধারের চেষ্টায় গ্রামবাসীরা।
এ দিন কাকভোরে ডিভিসি-র সেচ ক্যানাল পেরিয়ে বর্ধমানের পথ ধরার চেষ্টা করছিল দলমার হাতির দলটি। ধানসিমলার কাছে ক্যানালের জলে ভেসে যায় তিনটি হাতি। কোনও ভাবেই দলের অন্য হাতিরা তাদের উদ্ধার করতে না পেরে তর্জন-গর্জন শুরু করে। ঘুম ভেঙে যায় ক্যানাল লাগোয়া ধানসিমলা গ্রামের সিরাজপল্লির বাসিন্দাদের। সকালের আলো কিছুটা ফুটতেই সঙ্গীদের ফেলে পাশের রাজদহ জঙ্গলে ঢুকে যায় বাকি হাতিরা। সেখান থেকেও আওয়াজ দিতে থাকে তারা। হইহই করে প্রথমে সিরাজপল্লির বাসিন্দারা ক্যানালের পাশে এসে দাঁড়াতেই নজরে পড়ে ১০ নম্বর লক গেটে ৮ ফুট উপর দিয়ে যাওয়া জলের তোড়ে আটকে পড়ে হাঁকপাক করছে দু’টি হাতি। সেখান থেকে কিছুটা দূরে ওই ক্যানালেরই স্লুইসগেটের নীচে আটকে রয়েছে আরও এক হাতি। খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভিড় জমে যায়। পৌঁছন বনকর্মীরা। ডিভিসি-র কর্তাদের ঘটনার কথা জানিয়ে জলের চাপ কমানোর ব্যবস্থা করেন ডিএফও (বাঁকুড়া-উত্তর) এস কুলন ডেইভাল।
বাঁচানোর প্রবল চেষ্টা। সোনামুখীর সেচখালের জলে হাবুডুবু খাওয়া হাতিকে
উদ্ধার করতে নেমে পড়েন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা। ঝুঁকি নিয়ে জলে নেমে
দড়ি দিয়ে হাতিগুলিকে বেঁধে পাড়ে তোলা হয়। পাড়ে উঠেই জঙ্গলে দৌড়।
সিরাজপল্লির শেখ রাজু, বাবুলাল কবিরাজ, বদরুল মিদ্যারা বলেন, “জল বিপদসীমার সামান্য নীচে পাঁচ ফুটে নামতেই আর অপেক্ষা করিনি। দড়ি নিয়ে জলে নামি। কোমরে-পায়ে-গলায় জড়িয়ে টেনে তোলা হয় এক দাঁতালকে। পরে ওঠানো হয় আরও একটিকে।” তাঁদের আফসোস, “কমবয়সি হাতিটাকে বাঁচাতে পারলাম না। কাজ শুরু করার আগেই ও মারা যায়।” সামান্য জখম হাতি দু’টি জঙ্গলে ফিরে গিয়েছে। একটির গলায় থেকে গিয়েছে দড়ি। বন দফতরের অনুরোধে দড়ি দিয়ে বেঁধে মৃত হাতিটিকে পাড়ে তোলেন গ্রামবাসী। ডিএফও বলেন, “কয়েকশো বিঘা ধানের ক্ষতির পরও যে ভাবে হাতিদের উদ্ধারে ওঁরা সহযোগিতা করেছেন, কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।”

ছবি: শুভ্র মিত্র।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.