দুই খুদে পড়ুয়াকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন তাদের মায়েরা। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুটা যেতেই ঘটল বিপত্তি। আচমকা তাঁদের রিকশার সামনে চলে এল লড়াইয়ে ব্যস্ত দুই প্রকাণ্ড ষাঁড়। কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের ধাক্কা খেয়ে উল্টে গেল রিকশা। রাস্তায় পড়ে ষাঁড়ের খুরের আঘাতে রক্তাক্ত হল দুই পড়ুয়া। বাঁচাতে গিয়ে শিঙের গুঁতোয় জখম দুই মা। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বেলুড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় চার জনকেই এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন সকালে জিটি রোডের বেলুড় বাজার এলাকায় তিন রাস্তার মোড় আটকে লড়াই করছিল ষাঁড় দু’টি। তার জেরে থমকে যায় যান চলাচল। বালি, লিলুয়া ও বেলুড়ের লালাবাবু সায়র রোড তিন দিকের গাড়িই আটকে যায় সেই যানজটে। কিন্তু কোনও ভাবেই ষাঁড়গুলিকে রাস্তা থেকে সরাতে পারছিলেন না কর্তব্যরত পুলিশকর্মী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। প্রায় আধ ঘণ্টা চেষ্টা চালানোর পরে অবশ্য ষাঁড় দু’টিকে রাস্তার উপর থেকে যা-ও বা সরানো গেল, তার পরেই এই বিপত্তি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জিটি রোড থেকে তাড়া খেয়ে ষাঁড় দু’টি শিবচন্দ্র চ্যাটার্জি স্ট্রিটে ঢুকে পড়ে। বাজার সেখানে তখন যথেষ্ট ভিড়। সেই সময়েই ওই রাস্তা দিয়ে একটি রিকশায় ছেলেদের স্কুলে পৌঁছতে যাচ্ছিলেন বেলুড়ের পিয়ারীমোহন মুখার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দা সুমনা ঘোষ ও পিয়ালী দাস। ইতিমধ্যে লড়াই করতে করতেই বাজারের দিকে এগোচ্ছিল ষাঁড় দু’টি। আচমকা সুমনাদের রিকশাটি চলে আসে তাদের সামনে। চালক ও আরোহীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ষাঁড়ের ধাক্কায় উল্টে যায় রিকশাটি। ছিটকে পড়েন সুমনা ও পিয়ালী। তিন বছরের অগ্নিপ্রভ ঘোষ ও ত্রিপর্ণ দাস গিয়ে পড়ে ষাঁড় দু’টির পায়ের নীচে। খুরের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে যায় দুই খুদে। চোখে, মাথায়-সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত লাগে। ছেলেদের বাঁচাতে গেলে এর পরে মায়েদেরও গুঁতোতে শুরু করে ষাঁড়েরা। দুই মহিলারই হাতে, বুকে, পিঠে গুরুতর চোট লাগে।
ভয়ঙ্কর এই দৃশ্য দেখে কিছুক্ষণের জন্য স্তম্ভিত হয়ে যান বাজারে আসা মানুষ। দোকান ছেড়ে বাইরে চলে আসেন ব্যবসায়ীরা। শেষমেশ তাঁরাই কোনও মতে ষাঁড়েদের কবল থেকে চার জনকে উদ্ধার করেন। তাড়িয়ে দেওয়া হয় ষাঁড় দু’টিকেও। এক প্রত্যক্ষদর্শী অচিন্ত্য সাহা বলেন, “কী যে করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। শেষে ভাবলাম, যা হয় হোক, ওঁদের উদ্ধার করতেই হবে।”
খবর পেয়েই বেলুড় বাজার এলাকায় ছুটে আসেন অগ্নিপ্রভ ও ত্রিপর্ণের বাড়ির লোকেরা। চার জনকেই প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় হাওড়ার জয়সোয়াল হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠানো হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। পরে চার জনকেই স্থানান্তরিত করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। |