হোর্ডিং থেকে বাজার-থলি, হাত বাড়ালেই প্রসেনজিৎ
পুরনো হোর্ডিং থেকে তৈরি হবে এ রকমই পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস।
রাতে টেবিল সাজিয়ে খেতে বসেছেন। হঠাৎ দেখলেন, থালার নীচে পাতা ম্যাটে উঁকি মারছে প্রসেনজিতের মুখ। অথবা ধরুন, পাশের বাড়ির দাশবাবু থলি নিয়ে বাজারে চলেছেন। সেই থলির গায়ে শোভা পাচ্ছে দেব বা জিতের মুখ।
নতুন ছবির প্রচার নয়, পুজোর মুখে বাঙালির জন্য ফিল্মি উপহার। পুরনো ছবির হোর্ডিং থেকে তৈরি পসরার সম্ভার সাজিয়ে পরিবেশ-বান্ধব হয়ে উঠতে চাইছে টলিউড।
গত কয়েক বছরে ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা’ শব্দটা কর্পোরেট সংস্থাগুলির অভিধানে ঢুকে পড়েছে। টলিউড কোনও কর্পোরেট সংস্থা নয় যদিও। কিন্তু সামাজিক দায়দায়িত্ব এড়াতে চাইছে না তারাও। তারই প্রথম পদক্ষেপ ‘পরিবেশ বাঁচাও অভিযান’।
কী ভাবে? বাংলা ছবি এবং সিরিয়ালের জন্যও আজকাল বিরাট বিরাট হোর্ডিংয়ে মুখ ঢেকে ফেলে শহর। নতুন ছবি এবং সিরিয়াল বাজারে এলে পাল্টে যায় ওই পুরনো হোর্ডিং। বাতিল হয়ে যাওয়া হোর্ডিংগুলোকে এত দিন পুড়িয়ে ফেলা হত। কিন্তু এ বার থেকে সেগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার কথা ভাবা হয়েছে। পুরনো হোর্ডিং না পুড়িয়ে সেগুলো দিয়ে তৈরি করা হবে নানা রকম কাজের জিনিস। টেবিলের ম্যাট, বাজারের থলি। একটি বেসরকারি চ্যানেলের উদ্যোগে শুরু হয়েছে এই কর্মকাণ্ড। সঙ্গে প্রথম সারির একটি প্রযোজনা সংস্থাও।
উদ্যোগী চ্যানেলটির তরফে শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “হোর্ডিংগুলো যে ধরনের জিনিস দিয়ে তৈরি হয়, সেগুলো পোড়ালে প্রচুর বায়ুদূষণ হয়। সেটা বন্ধ করতেই এগুলোকে পুনর্ব্যবহার করার প্রয়াস।” প্রযোজনা সংস্থার তরফে মহেন্দ্র সোনির কথায়, “প্রকল্পটি চমৎকার! বিভিন্ন সময়ে আমরা অনেক আন্দোলনকে সমর্থন করি বটে, কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে সেগুলি মেনে চলা হয়ে ওঠে না। এমন একটা উদ্যোগ খুবই গর্বের ব্যাপার।”
নায়ক-নায়িকাদের মুখ ছাপানো হোর্ডিং দিয়ে বানানো এই সব জিনিসের দাম কত পড়বে? উদ্যোক্তারা জানালেন, হোর্ডিং থেকে বানানো জিনিসগুলি দেওয়া হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। গড়িয়াহাট মোড়, নিউ মার্কেট, উল্টোডাঙার মোড়, সাউথ সিটি মলের সামনে পুজোর বাজার করতে গিয়ে আপনি নিখরচায় সংগ্রহ করে নিতে পারেন ব্যাগ, টেবিল ম্যাট বা ওয়াল-হ্যাংগিং। এই সপ্তাহ থেকেই চালু হয়ে গিয়েছে প্রকল্পটি।
কিন্তু বিনামূল্যে জিনিস বিলিয়ে প্রকল্পটি কত দিন চালু রাখা সম্ভব হবে? ট্যাংরার কারখানায় এই সব জিনিস তৈরির খরচ নিজেরা কত দিন টানতে পারবেন উদ্যোক্তারা? শুভঙ্করবাবুর মতে, এটা কিন্তু বিরাট কোনও সমস্যা নয়। এখন টলিউডে এক-একটি ছবির পার্টিতে নয়-নয় করেও কুড়ি লাখ টাকা খরচ হয়। “আমাদের চ্যানেল বছরে চার বার এই ধরনের পার্টি আয়োজন করে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বছরে তিনটির বেশি পার্টি করব না। তা হলেই প্রায় ২০ লক্ষ টাকা বেঁচে যাবে।” তা খরচ করা হবে প্রকল্পটিতে। শুভঙ্করবাবুর দাবি, অন্যান্য প্রোডাকশন হাউসও একই ভাবে পার্টির খরচ কমিয়ে এই প্রকল্পে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে।
শুধু কি সামাজিক দায়বোধ? টলিউডের প্রচারেও কি নতুন মাত্রা জুড়বে না? পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বললেন, “পরিবেশ বাঁচাতে সাহায্য করা হবে, সে কথা তো ঠিকই। পাশাপাশি ভক্তদের আরও কাছাকাছি পৌঁছতে পারব আমরা।” কারও বাড়িতে যদি তাঁর প্রিয় নায়ক বা নায়িকার মুখ-ছাপা থলি কিংবা টেবিল-ম্যাট থাকে, সেই জিনিসের গুরুত্ব বেড়ে যায়। “বহু বছর পরেও ওই জিনিসটায় চোখ পড়লেই কিন্তু নির্দিষ্ট ছবি বা সিরিয়ালের কথাটাও মনে পড়ে যাবে। এটাই সবচেয়ে বড় পাওনা।”
জিতও একমত। তিনি তো ঠিকই করে ফেলেছেন, তাঁর ছবির হোর্ডিং কেটে যা তৈরি হবে, তার কয়েকটি নিজের কাছেই রেখে দেবেন। স্মারকের মতো আর কী! এখন তিনি হায়দরাবাদে শুটিংয়ে ব্যস্ত। সেখান থেকেই বললেন, “আমার অভিনয় করা ছবির হোর্ডিং কেটে তৈরি কিছু হাতে পেলে আমি যত্ন করে রেখে দেব। আবার ওই জিনিসটাই যখন আমার কোনও ভক্ত বাড়িতে নিয়ে যাবেন, তখন আমি তাঁর অনেক কাছের হয়ে যাব।”
সুতরাং পরিবেশ বাঁচানোও হল, জনসংযোগও হল। সামাজিক দায়িত্বও হল, প্রচারও হল। বাজারের থলেতে ‘২২শে শ্রাবণে’র প্রসেনজিৎ বা টেবিল ম্যাটে ‘রোমিও’ দেবকে পেয়ে দর্শক খুশি নির্ঘাত! টলিউড জিন্দাবাদ!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.