বিকেল ৪টে নাগাদ কলেজ থেকে বাড়িতে ফিরেছিলেন উদয়বাবু। দরজা বাইরে থেকে ভেজানো ছিল। ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই তাঁকে ধাক্কা মেরে পালায় এক যুবতী-সহ চার জন। মুখে লাল কাপড় বাঁধা সকলের। উদয়বাবুর চিৎকারে ছুটে আসেন আশপাশের লোকজন। ঘরে তখন দুই অপরিচিত কিশোর-কিশোরী। তাদের ধরে পিটিয়ে তুলে দেওয়া হয়েছে পুলিশের হাতে। নবম শ্রেণির ওই দুই পড়ুয়াকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। পরে আরও দুই ছাত্র ধরা পড়েছে। কালীপুর নেতাজি মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক উদয় নন্দীর কিশোর পুত্রকে অপহরণ করতেই তাঁর প্রাক্তন ছাত্র সোমনাথ পান হানা দিয়েছিল বলে অনুমান পুলিশের। সঙ্গে ছিল বাকিরা। তবে অপহরণের কারণ নিয়ে তদন্তকারী অফিসারেরা এখনও ধন্ধে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগের ব্লক পাড়ার বাসিন্দা উদয়বাবু এ দিন সকালে কলেজে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী আরামবাগ হাসপাতালের নার্স। তিনিও বেরিয়েছিলেন কাজে। বড় ছেলে কম্পিউটার ক্লাসে ছিল। ঘরে ছিলেন শিক্ষকের শাশুড়ি, বছর পঁচাত্তরের বৃদ্ধা গীতা পণ্ডিত ও ছোট ছেলে বছর এগারোর মনোজ। উদয়বাবু জানান, তিন জনকে ছুটে পালাতে দেখে ভেবেছিলেন, বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। ঘরে ঢুকে দেখেন, দুই কিশোর-কিশোরী। তিনি চিৎকার চেঁচামিচি জুড়ে দেন। দেখা যায়, একটি ঘরে মনোজকে মুখে কাপড় বেঁধে আটকে রাখা হয়েছে। স্নানঘরে মুখে কাপড় বাঁধা অবস্থায় আটকে রাখা হয়েছে গীতাদেবীকে। উদয়বাবুর বাড়ির পাশেই থাকেন আরামবাগের সাংসদ শক্তিমোহন মালিক। তিনিই ঘটনাস্থলে এসে পুলিশকে খবর দেন।
পুলিশের দাবি, দুই কিশোর-কিশোরীকে জেরা করে জানা গিয়েছে, উদয়বাবুর প্রাক্তন ছাত্র সোমনাথ পান-সহ বাকিরা মনোজকে অপহরণ করতেই মোটর বাইকে চড়ে এসেছিল। কিন্তু ওই দুই কিশোর-কিশোরী কী করছিল শিক্ষকের বাড়িতে? তারা জানায়, সোমনাথ তাদের গৃহশিক্ষক। তিনি বলেছিলেন, উদয়বাবুর বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া আছে। কিছু না জেনে-বুঝেই সোমনাথের কয়েক জন ছাত্র হাজির হয় অপরিচিত উদয়বাবুর বাড়িতে।
উদয়বাবুর শাশুড়ি বলেন, “ওরা ঘরে ঢুকে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করছিল আমাকে ও নাতিকে। বাধা দিতে গেলে আমাকে ঠেলে ফেলে দেয়। কেন এমন করছে, জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেয়নি।” পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পেয়েছেন ওই বৃদ্ধা। মনোজ খুবই আতঙ্কিত বলে পরিবার সূত্রের খবর। তার সঙ্গেও কথা বলবে পুলিশ। উদয়বাবু বলেন, “আমি নির্বিবাদী মানুষ। সোমনাথের সঙ্গেও কখনও কিছু ঘটেছে বলে মনে করতে পারছি না। কেন ও এমন করল, কিছুই মাথায় ঢুকছে না।” |