|
|
|
|
পাশ-ফেল সেই ব্রাত্যই |
২-৩ বছর অন্তর পরীক্ষা চাইছে কেন্দ্রের কমিটি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কেঁচে আধ-গণ্ডুষ!
পাশ-ফেল তুলে দেওয়ার ফল সুবিধের হচ্ছে না বুঝে আবার পরীক্ষা ফেরানো নিয়ে ভাবতে হচ্ছে কপিল সিব্বলদের। তবে কি না ফি-বছর নয়, দু’-তিন বছর অন্তর পরীক্ষা নিলে কেমন হয়! কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে এখন সেই ভাবনা। মন্ত্রকের কমিটিই এমন সুপারিশ করেছে। তাতেও অবশ্য প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেলের দিন ফেরার আশা নেই। কারণ ওই কমিটিও পরীক্ষাকে ব্রাত্য রাখারই পক্ষপাতী।
পাশ-ফেল না থাকলেই ছাত্রদের মঙ্গল, এই বিশ্বাস থেকেই সিব্বলরা শিক্ষার অধিকার আইনে সে বালাই রাখেননি। কিন্তু নানা মহল থেকে খবর আসছিল, এতে পড়াশোনায় গা-ছাড়া মনোভাব বাড়ছে পড়ুয়াদের। তাই গোটা ব্যবস্থাটি খতিয়ে দেখতে বলা হয় মন্ত্রকের কমিটিকে। তার প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছে মন্ত্রক। কমিটির বক্তব্য, পাশ-ফেল তুলে দেওয়া ইতিবাচক পদক্ষেপ। অবশ্য এতে পরীক্ষা-ভীতি দূর হলেও পড়াশোনার প্রতি একটা অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে পড়ুয়াদের। নিয়মিত পড়াশোনার অভ্যাস ও পাঠ্যক্রমের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে তাই তৃতীয়, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বার্ষিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হোক। সে সব পরীক্ষায় ব্যর্থ হলেও অবশ্য পরের ক্লাসে তুলে দেওয়ারই সুপারিশ করেছে কমিটি।
এতেই চিন্তায় পড়েছে সিব্বলের মন্ত্রক। তাদের মতে, এই সুপারিশ মানলে পড়ার চাপ কমানো ও পরীক্ষা-ভীতি দূর করার প্রচেষ্টাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, পরীক্ষা ফিরিয়ে আনাটা হবে মন্ত্রকেরই নীতির বিরোধিতা। ফলে কমিটি প্রস্তাব দিলেও ফের পরীক্ষা ব্যবস্থা আদৌও ফেরানো হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে মন্ত্রকের মধ্যে।
মন্ত্রকের কমিটি বলছে, শিক্ষার অধিকার আইন চালু হওয়ার আড়াই বছর পর পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, পাশ-ফেল তুলে দেওয়ায় পড়ুয়াদের মধ্যে ভাল ফল করার প্রবণতা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতা না থাকায় পড়াশুনো করার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলছে ছাত্র-ছাত্রীরা। চলতি বছরের মাঝামাঝি এক বৈঠকে ওই আশঙ্কা তুলে ধরেছিলেন বিভিন্ন রাজ্যে শিক্ষামন্ত্রী। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এই নীতিতে ভাল ফল করে নতুন শ্রেণিতে ওঠার ইচ্ছা হারিয়ে যাচ্ছে। তার উপরে আরও এক ধাপ এগিয়ে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই) তাদের সব স্কুলে মাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষাও ঐচ্ছিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিছু রাজ্যের অভিযোগ, মন্ত্রক ওই নীতি রাজ্যগুলিকেও রূপায়ণ করার জন্য পরোক্ষে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষা ব্যবস্থাকে চাপমুক্ত ও ছাত্র-মন থেকে পরীক্ষা-ভীতি কাটাতে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাৎসরিক পরীক্ষা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সিব্বল। তাঁর পরিকল্পনা ছিল, প্রাথমিক ভাবে ওই নীতি সিবিএসই বোর্ডে চালু হবে। পরে রাজ্যগুলিও ধীরে ধীরে ওই নীতি গ্রহণ করবে। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে সিব্বলের ওই নীতির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তা ছাড়া দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোনও পরীক্ষা না থাকলে একেবারে উচ্চ মাধ্যমিকে পৌঁছে প্রথম প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসতে হবে। সেটাও অস্বাভাবিক মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা জানান অনেক শিক্ষাবিদ। এই পরিস্থিতিতেই গোটা প্রক্রিয়াটির মধ্যে কোনও ত্রুটি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হরিয়ানার শিক্ষামন্ত্রী গীতা ভুক্ষলের নেতৃত্বে কমিটি গড়েছিল মন্ত্রক। বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা রয়েছেন ওই কমিটিতে। পরীক্ষা নিয়ে তাঁদের নিরীক্ষাই দোটানায় ফেলে দিয়েছে কপিল সিব্বলদের। |
|
|
|
|
|