|
|
|
|
বার্তা প্রধানমন্ত্রীর |
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষায় তথ্য আইনে রাশের ভাবনা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
তথ্যের অধিকার না ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা সরু সুতোয় ঝুলে থাকা এই বিতর্ককে এ বার সামনে নিয়ে এলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ স্বয়ং। তথ্যের অধিকার আইন কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষায় বাধা হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। একই সঙ্গে জানিয়ে দেন, এ বার গোপনীয়তা রক্ষার জন্য সংসদে আইন আনার কথা ভাবছে সরকার।
ইউপিএ জমানায় যে সব আইন পাশ হওয়া নিয়ে কংগ্রেস কৃতিত্ব দাবি করে, সেই তালিকায় তথ্যের অধিকার আইন অন্যতম। কিন্তু এই আইনটি বৃহত্তর সামাজিক অধিকার সুনিশ্চিত করলেও, কংগ্রেস নেতৃত্ব কার্য ক্ষেত্রে টের পাচ্ছেন, তাঁদের বিপদও কম হয়নি। কেন না, সনিয়া গাঁধীর বিদেশ সফর থেকে শুরু করে তাঁর শারীরিক অসুস্থতার ফলে খরচের খতিয়ান সংক্রান্ত তথ্য জানার জন্য তো বটেই, এমনকী ব্যক্তিগত স্তরে পাঠানো চিঠিপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েও আকছার আর্জি আসছে সরকারের কাছে। তার পর সরকারের কাছ থেকে পাওয়া সেই সব তথ্য রাজনৈতিক আক্রমণের অস্ত্র হয় উঠছে। ক’দিন আগে ঠিক এ ভাবেই সনিয়ার বিদেশযাত্রা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সেই প্রেক্ষাপটে আজ তথ্য কমিশনারদের এক সম্মেলনে উদ্বেগ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মনমোহন বলেন, “তথ্যের অধিকার আইনকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য থাকা উচিত।” কারণ, মনমোহন মনে করেন, “কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা তাঁর মৌলিক অধিকার।” তাঁর বক্তব্য, তাই যদি এমন কোনও তথ্য চাওয়া হয়, যা কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করছে, তা হলে সেই তথ্য প্রকাশ এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, “তবে লক্ষ্মণরেখা কোথায় টানতে হবে, তা নির্ধারণ করাও কঠিন কাজ।”
প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, এই সব কারণেই বিচারপতি এ পি শাহ-র নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে আইন প্রণয়নের বিষয়টি বিবেচনা করছে।
শুধু ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি নয়, প্রধানমন্ত্রীর কথায়, এই আইনকে সরকারি সংস্থার সমালোচনা, কটাক্ষ বা হেয় করার জন্য ব্যবহার করাও ঠিক নয়। বরং যাতে প্রশাসনের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করে স্বচ্ছতা আনা সম্ভব হয়, সেটাই এই আইন ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
বস্তুত, তথ্য আইনের অপব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে সরকারের অভ্যন্তরে কিছু দিন ধরেই উদ্বেগ ও আশঙ্কা বাড়ছে। আইন যে ক্রমশ রাজনৈতিক আক্রমণের হাতিয়ার হয়ে উঠছে, কংগ্রেস ও সরকারের শীর্ষ নেতারা ভাল ভাবেই বুঝতে পারছেন। সম্প্রতি টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের একটি নোট এ ভাবেই ফাঁস হয়। তাতে প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে সরকার। এমনকী, সেই ঘরোয়া নোট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবেও পেশ করা হয়।
এই বিপত্তি যাতে আর না ঘটে, তা নিয়ে সরকার এখন সতর্ক। আজ তথ্য কমিশনারদেরও প্রধানমন্ত্রী প্রকারান্তরে সেই বার্তাই দিয়েছেন। মনমোহন বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তথ্যের অধিকার আইনে এমন সব তথ্য চাওয়া হচ্ছে, তা জনস্বার্থে কোনও ভাবেই প্রয়োজনীয় নয়। আবার কখনও কোনও বিষয়ের ওপর দীর্ঘ সময়ের খতিয়ান চাওয়া হচ্ছে। সেই খতিয়ানে ফাঁকফোকর বা ধারাবাহিকতার অভাব দেখতে পেলেই তা নিয়ে সমালোচনা করা হচ্ছে। এই ধরনের প্রশ্ন বা কৌতূহল সামাজিক প্রয়োজনে তো লাগেই না, উল্টে এই সব তথ্য বের করতে গিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদের অহেতুক অপচয় হচ্ছে। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালতও সমালোচনা করেছে। কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, আসলে কোনও আইনই শুরু থেকে ত্রুটিমুক্ত হয় না। সমস্যাগুলি ধরা পড়ে আইনের ব্যবহারিক প্রয়োগের পরে। সে জন্য সময়ে সময়ে আইন সংশোধন করা হয়। তথ্যের অধিকার আইনের ক্ষেত্রেও তা হয়েছে। সময়ের সঙ্গে বোঝা যাচ্ছে, কোন কোন ক্ষেত্রে তার অপব্যবহার হতে পারে। আইনটি আরও কার্যকরী করে তুলতেই এ বার সংশোধনের কথা ভাবছে সরকার। |
|
|
|
|
|