ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। অথচ জলদাপাড়া জঙ্গল ভ্রমণের জন্য বরাদ্দ কুনকি হাতির সংখ্যা কমে ছয়টি থেকে পাঁচটি করা হয়েছে। বন দফতর ওই সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগী না-হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে বিভিন্ন পর্যটন সংস্থার। তাঁদের আশংকা হাতি কম থাকায় এ বার পর্যটকদের হয়রানি বাড়বে। অনেকে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হবেন। যদিও বনকর্তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বন সুরক্ষার কথা ভেবে এই মূহুর্তে ভ্রমণের জন্য হাতির সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব নয়। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) সিতাংশুবিকাশ মণ্ডল বলেন, “ভ্রমণের জন্য পাঁচটির বেশি হাতি দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, বাকি হাতিগুলি জঙ্গল পাহারা দেয়। তবে ভাড়া কমানোর প্রস্তাব রয়েছে।” বনকর্তাদের ওই বক্তব্যে পর্যটন সংস্থার কর্তাদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। তাঁরা জানান, জলদাপাড়ার পিলখানায় ৫০টি কুনকি আছে। তার মধ্যে মাত্র পাঁচটি হাতি বরাদ্দ করা হচ্ছে এটা কেমন কথা! প্রশ্ন উঠেছে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী যখন উত্তরবঙ্গে পর্যটন শিল্প বিকাশের উপরে গুরুত্ব দিচ্ছেন তখন কেন হাতির সংখ্যা না বাড়িয়ে কমানো হল! পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য ৮টি হাতি বরাদ্দ করা হলেও জঙ্গল সুরক্ষায় তেমন কোনও সমস্যা হবে না বলে পর্যটন সংস্থাগুলির দাবি। উত্তরবঙ্গের একটি পর্যটন সংস্থার প্রধান রাজ বসু বলেন, “ভ্রমণের জন্য হাতির সংখ্যা বাড়লে জঙ্গল সুরক্ষায় সমস্যা হবে এটা ঠিক কথা নয়। অথচ বন দফতর ওই যুক্তি তুলে হাতির সংখ্যা না-বাড়িয়ে ভাড়া বেশি করেছে। বিষয়টি পর্যটকরা ভাল ভাবে নিচ্ছেন না।” শুধু তাই নয়। সরকারি লজের পাশাপাশি বেসরকারি লজে হাতির পিঠে চেপে জঙ্গলে বেড়ানোর টিকিটের কোটা তুলে দেওয়া নিয়েও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পর্যটন সংস্থার কর্তারা জানান, এর ফলে জলদাপাড়া লাগোয়া এলাকার হোটেল ও রিসর্টগুলি ব্যবসা কমবে। কারণ, হাতির পিঠে চেপে বেড়ানোর সুযোগ মিলবে ওই নিশ্চয়তা না পেলে কেন পর্যটকরা জলদাপাড়ার ওই সমস্ত হোটেল ও রিসর্টে যাবেন! বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের গরুমারা এবং জলদাপাড়া জঙ্গলে হাতির পিঠে চেপে ভ্রমণের ব্যবস্থা আছে। গরুমারায় বন দফতরের তিনটি পর্যটক আবাসের আবাসিকরা হাতিতে চেপে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পেয়ে থাকেন। জলদাপাড়ায় সরকারি পর্যটক আবাস ছাড়াও বিভিন্ন রিসর্টে থাকা পর্যটকরা ওই সুযোগ পান। দু’বছর আগে এখানে ৬টি হাতি ছিল ভ্রমণের জন্য। এ বার সেটা কমে হয়েছে পাঁচটি। বনকর্মীরা জানান, ভোর থেকে একটি হাতি তিনবার পর্যটকদের পিঠে চাপিয়ে এক ঘণ্টা জঙ্গলে নিয়ে যায়। মোট ৬০ জন পর্যটক একদিনে হাতির পিঠে ভ্রমণের সুবিধা পেয়ে থাকেন। তার মধ্যে ২০ জনের আসন বরাদ্দ বন দফতরের হলং লজের পর্যটক এবং ১৬টি আসন পর্যটন দফতরের অতিথিদের জন্য। বাকি মাত্র ২৪টি আসনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে পারবেন সরকারি দুই লজের বাইরের পর্যটকরা। ওই ঘটনায় জলদাপাড়কে ঘিরে গড়ে ওঠা ২৯টি বেসরকারি লজ মালিকদের মাথায় হাত পড়েছে। তাদের অভিযোগ, বন দফতরের ওই সিদ্ধান্তের জন্য বাইরের পর্যটকরা জলদাপাড়া বেড়াতে এসে বেসরকারি লজে থাকতে আগ্রহ দেখাবে না। জলদাপাড়া হোটেল মালিক সংগঠনের সম্পাদক স্বপন রায় বলেন, “হাতির পিঠে চেপে জঙ্গলে বেড়াতে পর্যটকরা জলদাপাড়ায় আসেন। পিলখানায় অনেক হাতি আছে। কিন্তু হাতির সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। অথচ ভাড়া ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। ফলে এ বার লোকসানের মুখে পড়তে হবে।” উত্তরবঙ্গের বন পাল বিপিন সুদ অবশ্য জানান, হাতির পিঠে ভ্রমণের ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৪০০ টাকা করার নির্দেশ এসেছে। |