চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে একটি ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থার কর্ণধার সুভদ্রা কর তাঁর সেলওয়ান মোবাইল ফোন থেকে জরুরি কথা বলছিলেন। কথা বলতে বলতে হঠাৎই লাইনটা কেটে গেলে ওই নম্বরটি তিনি আর ধরতে পারলেন না। কেন? রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল-এর সেলওয়ান মোবাইল পরিষেবার দুর্বল পরিকাঠামোর জন্যই সুভদ্রাদেবীর ওই দুর্ভোগ।
একটি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার দুর্বার মহাপাত্র ঠিক করেছিলেন, ট্রেনে ব্যারাকপুর থেকে দমদম আসার পথেই এক ব্যবসায়ী গ্রাহকের সঙ্গে ফোনে কিছু কথা সেরে নেবেন। কিন্তু সকাল ১১টা ১০ মিনিটে ট্রেনে উঠে দেখলেন সিগন্যালই নেই। তাঁর হয়রানির কারণও সেই এক।
কখনও ভালো করে কথাই শোনা যায় না। মেসেজ করতে গেলেও নানা সমস্যায় পড়তে হয়। কোনও কোনও অঞ্চলে রাস্তায় সিগন্যাল থাকে তো বাড়ির ভিতরে ঢুকলে সিগন্যাল হাওয়া! সেলওয়ানের মোবাইল নিয়ে সমস্যার অন্ত নেই। অথচ গ্রাহক সংখ্যার হিসেবে বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলির চেয়ে বিসএনএল অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও কলকাতা সার্কেলে এখন প্রায় ২৪ লক্ষেরও বেশি সেলওয়ান গ্রাহক। বেসরকারি সংস্থাগুলির মান যেখানে বাড়ছে, সেখানে সেলওয়ান পরিষেবার মান পড়তি কেন?
সার্কেলের কর্তারা জানাচ্ছেন, গ্রাহক সংখ্যার নিরিখে ভাল পরিষেবা দেওয়ার উপযোগী পরিকাঠামো সম্প্রসারণ করতে পারছেন না তাঁরা। কারণ, গত দেড়-দু’বছর ধরে কলকাতা টেলিফোন সার্কেলের জন্য নতুন কোনও টাওয়ার বা যন্ত্রপাতি বিএসএনএল-এর সদর দফতর বরাদ্দ করতে পারেনি। কোনও সংস্থাই পূর্বাঞ্চলের সার্কেলগুলির জন্য টাওয়ার সরবরাহ করতে রাজি হচ্ছে না বলেই ওই কর্তাদের একাংশের দাবি। কলকাতা সার্কেলের চিফ জেনারেল ম্যানেজার সোমনাথ মাইতি জানাচ্ছেন, “গ্রাহকদের কিছু সমস্যা হচ্ছে জেনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোও হয়েছে। কিন্তু নতুন টাওয়ার না আসা পর্যন্ত আমরা কিছু করতে পারছি না।”
এই মুহূর্তে কলকাতা টেলিফোন এলাকায় সেলওয়ান পরিষেবা দেওয়ার জন্য ১২০০ টাওয়ার রয়েছে। কিন্তু তা দিয়ে সার্কেলের সব গ্রাহককে সমান পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। টাওয়ারগুলির ব্যাটারি ব্যাক-আপ খারাপ বলে এক বার লোডশেডিং হলে ফের টাওয়ারগুলি সচল হতে অনেকটা সময় লেগে যায়। এ দিকে প্রতি মাসে গ্রাহকও বাড়ছে। টাওয়ারগুলি চাপ নিতে পারছে না। এখনই নতুন ৫০০ টাওয়ার না বসাতে পারলে পরিষেবার মান আরও খারাপ হবে। কোথায়-কোথায় টাওয়ারগুলি বসবে, তার সেই জায়গাও চিহ্নিত রয়েছে, কিন্তু নতুন টাওয়ার আসছে না বলে সমস্যা বেড়েই চলেছে।
বিএসএনএল-এর এক কর্তার কথায়, মোবাইল পরিষেবার পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের সার্কেলগুলিতে টাওয়ার-সহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে বছরখানেক আগে দরপত্র ডাকা হয়েছিল। তাতে বেশ কয়েকটি দেশি-বিদেশি সংস্থা অংশগ্রহণ করে। দরপত্রের দামের নিরিখে যে সংস্থাটি প্রথম হয়, তারা টাওয়ার সরবরাহ করার জন্য দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলের সার্কেলগুলিকে বেছে নয়। তালিকা অনুযায়ী দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংস্থাকে পূর্বাঞ্চলে টাওয়ার সরবরাহের বরাত দেওয়া হলেও তারা কেউ রাজি হয়নি। ওই কর্তাদের দাবি, প্রথম সংস্থাটির দেওয়ার দর অনুযায়ী ওই সংস্থাগুলিকে যন্ত্র সরবরাহ করার কথা বলা হয়েছিল বলেই তারা পিছিয়ে যায়। তবে পূর্বাঞ্চলের জন্য নতুন করে দরপত্র ডাকার তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। |