ঘরের ঝগড়া বিদেশের মাটিতে তুলে এনে বিতর্ক বাড়ালেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র।
তিস্তার জলবণ্টন, ছিটমহল সমস্যার সমাধান-সহ ভারত-বাংলাদেশ বিভিন্ন চুক্তির ক্ষেত্রে টালবাহানার জন্য ঢাকায় দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া সমালোচনা করলেন মিশ্র। তাঁর অভিযোগ, এই চুক্তিগুলি হলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও জোরালো হত। কিন্তু মমতার উদ্যোগের অভাবে তা হচ্ছে না। তবে বিদেশে গিয়ে এ ভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরূপ সমালোচনা করাকে ভাল চোখে দেখছেন না অনেকেই। কূটনীতিকদের মতে, ভিন্ দেশেও ঘরের কোঁদলকে এ ভাবে তুলে ধরা শিষ্টাচার-বিরোধী।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন সূর্যবাবু। স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার সময়ে তিনি বলেন, “সিপিএম বরাবরই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পক্ষে। মমতা যখন বিধানসভায় ঘোষণা করলেন যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় যাচ্ছেন, আমরা তাঁকে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম। সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও আলাপ আলোচনা ছাড়াই তিনি ঢাকায় গেলেন না।” সূর্যবাবু বলেন, জলের ভাগ নিয়ে আপত্তি থাকলে তিনি ঢাকায় গিয়ে কথা বলতে পারতেন। কিন্তু তার বদলে গোটা বিষয়টিকেই ঝুলিয়ে রেখে দিলেন। বিরোধী দলনেতা বলেন, এমন নেতিবাচক বার্তা দেওয়ার পরে এ বার তিস্তা চুক্তির বিষয়ে রাজ্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
ফরাক্কা চুক্তির সময়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর উদ্যোগের উল্লেখ করে সূর্যবাবু বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক রক্ষার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বরাবরই বড় ভূমিকা নেয়। তাঁরা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, গঙ্গার জলবণ্টন নিয়ে দু’দেশের মতভেদ কাটাতে জ্যোতিবাবু তৎপর হন। কেন্দ্রে বিজেপির সরকার হলেও তারা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই বিষয়টি ছেড়ে দেন। সূর্যবাবু বলেন, এ বার মনমোহনের সফর নিয়েও তাঁরা আশাবাদী ছিলেন। দুই বাংলার মানুষের মধ্যেও আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু মমতার আচরণে সেই সফর ফলপ্রসূ হতে পারেনি। কেন তিনি এমন করলেন, তা নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে কোনও কথাই তিনি বলেননি। সূর্যবাবু বলেন, অথচ তিস্তার জলবণ্টন ও ছিটমহল সমস্যার সমাধান হলে ভারতই বেশি লাভবান হত।
ঢাকার মাটিতে দাঁড়িয়ে সূর্যবাবুর এই মমতা-বিরোধিতাই ভাঁজ ফেলেছে একাংশ কূটনীতিকের কপালে। তাঁদের কথায়, বিরোধী হলেও বিদেশিদের সামনে সরকারের সমালোচনা করা রীতি-বিরুদ্ধ। তাই দেশে নানা সমালোচনা করলেও বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী কিছু দিন আগে রাষ্ট্রপুঞ্জে গিয়ে সনিয়া গাঁধীর ১০০ দিনের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে এসেছেন। এমনকী কেউ কেউ সূর্যবাবুর এই কাজকে জাতীয়তা-বিরোধী বলতেও ছাড়ছেন না। |