বিস্ময় সদর দফতর ব্রাসেলসে
নোবেল শান্তি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে
উরোপে ৫০ বছরেরও বেশি সময় শান্তিরক্ষার কাজ করায় নোবেল শান্তি পুরস্কার পেল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আর্থিক সঙ্কটে যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তখন এই পুরস্কার ঘোষণায় বিস্মিত ওই রাষ্ট্রগোষ্ঠীর নেতারাই।
সর্বসম্মত ভাবেই ইউরোপীয় ইউনিয়নকে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নোবেল কমিটি। নোবেল কমিটির প্রেসিডেন্ট থরবিয়র্ন ইয়াগলুন্ডের বক্তব্য, যুদ্ধে মত্ত ইউরোপকে শান্তির পথ দেখিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সত্তর বছরে তিন বার যুদ্ধে নেমেছিল ফ্রান্স ও জার্মানি। এখন ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে যুদ্ধের কথা ভাবাই যায় না। ইয়াগলুন্ডের দাবি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের শত্রুরা সহযোগীতে পরিণত হয়েছে। তারই স্বীকৃতি এই পুরস্কার। শেষ বার সংগঠন হিসেবে শান্তি পুরস্কার পেয়েছিল মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (১৯৯৯)। ২০০১ সালে এক বার এই পুরস্কার পেয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জও। যৌথ বিজেতা ছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাক্তন মহাসচিব কোফি আন্নান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ধীরে ধীরে বদলেছে ইউরোপের চালচিত্র। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে কোনও রাষ্ট্রের সীমায় আটকে থাকেনি পণ্য, পরিষেবা, মানুষ বা মূলধনের যাতায়াত। বিশ্বের সব চেয়ে বড় বাজারের সুবিধা থাকায় ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনা লোপ পেয়েছে। ক্রমে আত্মপ্রকাশ করেছে অভিন্ন মুদ্রা ইউরো।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়াকে স্বাগত জানাচ্ছেন
জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। শুক্রবার বার্লিনে তোলা এ এফ পি চিত্র।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার রক্ষা-সহ কয়েকটি শর্ত মানতে হয় যে কোনও দেশকে। সত্তরের দশকে একনায়কতন্ত্রের পতনের পরে এই রাষ্ট্রগোষ্ঠীতে স্থান পেয়েছে স্পেন, পর্তুগালের মতো দেশগুলি। আরও বাড়ছে এই রাষ্ট্রগোষ্ঠীর পরিধি। এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার অপেক্ষায় বলকান অঞ্চলের দেশ ক্রোয়েশিয়া।
কিন্তু, সম্প্রতি বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। মন্দা ও আর্থিক সঙ্কটে জেরবার এর বিভিন্ন সদস্য দেশ। তার প্রভাব পড়ছে ইউরোর উপরেও। বিপন্ন রাষ্ট্রগুলিকে
সাহায্য করার দায় এসে পড়েছে জার্মানির নেতৃত্বাধীন কয়েকটি সদস্য দেশের উপরে। তা নিয়েও জলঘোলা কম হচ্ছে না রাষ্ট্রগোষ্ঠীর অন্দরমহলে।
এই পরিস্থিতিতে নোবেল শান্তি পুরস্কারের মতো সম্মানে বিস্ময় জেগেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর ব্রাসেলসে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জোসে ম্যানুয়েল বারোসো টুইটারে বলেছেন,“এটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব নাগরিকের পক্ষেই বড় সম্মান।’’ ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হারমান ভন রামপুয়ের মতে,‘‘ এই রাষ্ট্রগোষ্ঠী বিশ্বের সবচেয়ে বড় শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ করেছে। পুরস্কার তারই স্বীকৃতি।” প্রায় একই সুরে শান্তি পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলও। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে ৯ লক্ষ ২১ হাজার ইউরো অর্থমূল্যের পুরস্কারটি কে নেবেন তা এখনও স্থির হয়নি। বিষয়টি নিয়ে হারমান, বারোসো ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন সুল্জের মধ্যে প্রতিযোগিতাও রয়েছে।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরোধীর সংখ্যাও কম নয়। ব্রিটেনের ইউকে ইনডিপেন্ডেন্স পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজের মতে, সাবেক যুগোস্লাভিয়া বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে নিজের সীমানার মধ্যে ধরে রাখতে পারেনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নও সে কাজে সফল হবে না। তাঁর বক্তব্য, জার্মানি ও গ্রিসের মধ্যে যে ধরনের অবিশ্বাস আর ঘৃণা তৈরি হয়েছে তাতে নোবেল শান্তি পুরস্কারের ঘোষণা সত্যিই বিস্ময়কর।
নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রাপক নিয়ে বিতর্ক অবশ্য নতুন নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বা চিনা লেখক লিউ জিয়াবাওয়ের পুরস্কার পাওয়া নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। শান্তির ধারণাও হয়তো দেশ-বিশেষে আলাদা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.