যিনি আঁকেন, তিনি বন্ধুত্বও করেন।
ছবির সূত্রেই ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুসলিম দুনিয়ার সঙ্গে ইজরায়েলের বিরোধ জন্মগত। অন্য দিকে গত পঞ্চায়েত ভোট থেকে রাজ্যের সংখ্যালঘু শ্রেণির মধ্যে তৃণমূলের শিকড় ক্রমেই বিস্তার করেছেন মমতা। সংখ্যালঘু ভোটের একটা বড় অংশই এখন তাঁর ঝুলিতে। এহেন মমতার সঙ্গে যে দিন মহাকরণে দেখা করতে এসেছিলেন এ দেশে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত অ্যালন উশিফার, সে দিন রে রে করে উঠেছিল মুসলিম সংগঠনগুলি। বলেছিল, ইজরায়েলের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখা উচিত নয় মমতার সরকারের।
এমন একদেশদর্শী দাবিতে কান দেননি মমতা। উশিফারের সঙ্গে শুধু সে দিন বৈঠক করাই নয়, দিল্লিতে তাঁর কাছে নিজের আঁকা একটি তৈলচিত্রও পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফুলের ছবি। ছবিটি পেয়ে দারুণ উত্তেজিত উশিফার। বাসভবনের বিশেষ অতিথিগৃহে ছবিটি লাগিয়েছেন তিনি। যাতে সবাই সেটি দেখতে পান। অন্য দেশের রাষ্ট্রদূতদের তো বটেই, এ দেশের বেশ কিছু রাজনীতিককেও ছবিটি দেখিয়েছেন উশিফার। তাঁর মতে, ছবিটি খুবই উচ্চমানের। বিস্মিত উশিফারের প্রশ্ন, এ দেশে আর কোনও মুখ্যমন্ত্রী আছেন, যিনি এমন দক্ষ চিত্রশিল্পী?
মমতা অবশ্য ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূতের এ হেন প্রশংসায় কিঞ্চিৎ লজ্জিত। তিনি বলেন, “আরে না না! উনি মহাকরণে এসেছিলেন। তখনই ছবিটি দেখে ওঁর ভাল লেগেছিল। ওই ছবিটি তিনি কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি ওঁকে ছবি বিক্রি করব কেন! তাই উপহার হিসেবে পাঠিয়েছি।” মমতার বক্তব্য, এটা তো ন্যূনতম সৌজন্য। তাঁর কটাক্ষ, “সাংবাদিকদের সমস্যা হচ্ছে, সব কিছুতেই কূটনীতি দেখেন।” |
অ্যালন উশিফার |
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
মমতার এই উপহারের পিছনে কূটনৈতিক কৌশল কাজ করেছে কিনা, সেটা স্বতন্ত্র প্রশ্ন। কিন্তু সংখ্যালঘু সমাজের কাছের লোক হয়েও ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে তিনি যে বিচক্ষণতা দেখিয়েছেন, তাতে সন্দেহ নেই। এই ক্ষেত্রে ভারতের কূটনৈতিক ধারাকেই অনুসরণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
আরব দুনিয়ার সঙ্গে ভারতের যোগাযোগের ইতিহাস বহু পুরনো। সেই ইতিহাস মূলত সুসম্পর্কের। সেই সম্পর্ক রক্ষায় দিল্লির যত্নের অভাব নেই। আমেরিকার ভ্রূকুটি সত্ত্বেও ইরানের সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরায়নি তারা। কিন্তু তার পাশাপাশি গত ২০ বছর ধরে ভারত যে ইজরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, সেটা তার বিদেশনীতির সাবালকত্ব বলেই কূটনীতিকদের অভিমত।
গুজরাত, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ও রাজস্থানের সঙ্গে ইজরায়েলের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ার ব্যাপারে তারা আগ্রহী। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ইজরায়েল সফরে গিয়েছিলেন জ্যোতি বসু। তাঁর আমল থেকেই কলকাতায় ইজরায়েলের সাম্মানিক কনসাল জেনারেল শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া। উশিফারের সঙ্গে মমতার বৈঠকের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। সেই বৈঠকে ঠিক হয়, এক দিকে কৃষিপ্রযুক্তি অন্য দিকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গকে সব রকম সাহায্য করবে ইজরায়েল। বিস্তার ঘটানো হবে ব্যবসায়িক সম্পর্কেরও। উশিফার বলেন, “২০১৩ সালের মধ্যে ৫০০ কোটি ডলারের ব্যবসা হবে বলে আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।”
মমতা-উশিফার এই বৈঠক নিয়ে আপত্তি তুলেছিল রাজ্যের মুসলিম সমাজের একটি অংশ। তাদের বক্তব্য ছিল, ইজরায়েল মুসলিম বিরোধী রাষ্ট্র। তাদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখা মমতার উচিত নয়। মমতা অবশ্য সেই আপত্তি গ্রাহ্য করেননি। এবং সে জন্য কোনও রাজনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কাও তিনি করছেন না। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “মমতা সংখ্যালঘুদের জন্য কী করেছেন, সেটা সকলেরই জানা। তিনি এ রাজ্যের সংখ্যালঘুদের নয়নের মণি।” তাঁর মতে, অন্য কোনও কারণে নয়, রাজ্যের উন্নয়নের জন্যই ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী মমতা।
তাই, ছবি। তুমি কি কেবলই ছবি? |