নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
গ্যাস মুখোশ ছাড়া কাজ করার সময়ে মৃত্যু হয়েছে এক কর্মীর। অসুস্থ হন আরও দু’জন। বৃহস্পতিবার রাতে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি পিগ আয়রন কারখানায় এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে। শুক্রবার সকালে সিটু এবং আইএনটিটিইউসি নেতারা কারখানায় গিয়ে এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান, এমন ঘটল তা খতিয়ে দেখা হবে।
পুলিশ ও কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা নাগাদ কারখানায় ফার্নেসের উপরে রোটারের একটি অংশ নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরে যাওয়ায় উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছিল। সেটি ঠিক করতে যান তিন কর্মী প্রতাপাদ্যিত চক্রবর্তী (৩৫), সুরজিৎ কোনার ও সন্তোষ দত্ত। প্রথম দু’জন কারখানার স্থায়ী কর্মী। অন্য জন ঠিকাকর্মী। তিন জনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালের পথে মৃত্যু হয় প্রতাপাদ্যিতবাবুর। বাকি দু’জনকে দুর্গাপুর ইস্পাত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শুক্রবার বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, উৎপাদনের কাজ চলার সময়ে ফার্নেসের মাথায় মাঝে-মাঝে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস বেরোয়। তা কারও শরীরে ঢুকলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে বলে শ্রমিক-কর্মীদের দাবি। এ দিন সকালে কারখানা চত্বরে যান আইএনটিটিইউসি জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়, সিটু নেতা তথা দুর্গাপুরের প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী। দু’জনেই কারখানায় ঢিলেঢালা কর্মী নিরাপত্তার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রভাতবাবু বলেন, “শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, নিরাপত্তার দিকটি একেবারে অবহেলিত। নির্দিষ্ট পোশাক, জুতো, হেলমেট, মুখোশ, দস্তানা কিছুই নেই।” একই অভিযোগ বিপ্রেন্দুবাবুরও।
সকাল ১১টা নাগাদ ইএসআই হাসপাতালে গিয়ে মৃতের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেন আইএনটিটিইউসি নেতা প্রভাতবাবু। কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যাপারে তিনি তাঁদের আশ্বস্ত করেন। পরে তিনি বলেন, “কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি, সাড়ে চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও নিকট আত্মীয়কে চাকরি দিতে হবে। চাকরি না দেওয়া গেলে মোট ৯ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।” প্রতাপাদিত্যবাবুর দাদা রাজাদিত্যবাবু বলেন, “বাড়িতে ভাইয়ের স্ত্রী ও সাড়ে তিন বছরের মেয়ে রয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না দিলে পরিবারটি ভেসে যাবে।”
কারখানার সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার অরুণ দাস বলেন, “কী ভাবে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ সব ক্ষেত্রে শাট ডাউন করে কাজ করা উচিত ছিল। যিনি রাতে দায়িত্বে ছিলেন তাঁর কাছে কৈফিয়ত তলব করা হবে।” মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে তিনি জানান, শ্রমিক সংগঠনের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তাঁরাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। |