|
|
|
|
|
আড্ডা, ঠাকুর দেখা, প্রেম, আর ‘সাজ’বেলা |
ষষ্ঠীতে সাদা ট্রাউজার্স পরছেন? কিন্তু যদি বৃষ্টি নামে? অষ্টমীর জামদানি প্যান্ডেলে ছিঁড়লে? চিন্তা নাস্তি।
পাঁচ দিন কেমন করে কাটাবেন ভেবে, পোশাক বাছুন। রইল একরাশ সাজেশন। চিরশ্রী মজুমদার |
যতই আয়না চকচকে শপিং মল’রা মাথা তুলুক, সেখানে যতই ভিনদেশি ব্র্যান্ড বাদশা বচ্ছরভর চোখধাঁধানো দরবার সাজিয়ে বসে থাকুক, আর সে চত্বরে আমরা যতই ৩৬৫ দিন ব্যাগ সামলাতে হিমশিম খাই, অন্তরে এখনও কী ভীষণ বাঙালি, এই পুজোটা এলেই দিব্যি টের পাওয়া যায়। যার ওয়ার্ড্রোবে সতেরোটা জামা না-ছোঁয়া প্যাকেটে দিব্যি ঘুমোচ্ছে, সেও পাঁচ দিন তিন বেলা সাজের জন্য কী কী কিনব বলে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ে। পশ্চিমি পোশাক তো অন্য দিনগুলোতেও যেখানে সেখানে মানিয়ে যায়। পুজোর পরে শাড়ির মতো ততটা আলমারিবন্দি থাকে না। কিন্তু, যে দেশি পোশাকই হোক, শুধু কিনে আনলেই হচ্ছে না, তার পরও প্ল্যানিং আরও খানিকটা বাকি থেকে যায়। ষষ্ঠীতে মিল্ক হোয়াইট ডেনিম, সপ্তমীতে লহেঙ্গা শাড়ি, এ ভাবে ভাগ করতে পারেন। কিন্তু দিনের দিনে ঠকে যাওয়ার অল্প একটু চান্স থেকে যাচ্ছে। ধরুন ষষ্ঠীতে ঝমঝমাঝম হয়ে প্যান্ডেলে কাদা আর মাঠের পুজোগুলোকে স্কি-গ্রাউন্ড বানিয়ে দিল, তখন? সাদা ট্রাউজার্স তো পরা যাবে না। আর
সপ্তমী যদি হঠাৎ সন্ধ্যেবেলা হোলনাইট প্ল্যান হয় তখন? প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে লেহঙ্গা শাড়ির ঢেউ তোলা আঁচল, মানানসই গয়নাদের সামলাবেন কী করে? তার থেকে
পুজোর বাজারে একবার চোখ বুলিয়ে নিন, কী কী এসেছে, কী কী পাওয়া যাচ্ছে, সবটা বুঝে নিন। তার পর, পুজোর কোন দিন কী করবেন প্ল্যান করেছেন, সেটাও একটু মাথা ঠান্ডা করে ভেবে নিন। তার পর সেই প্ল্যান অনুযায়ী কী পরবেন ঠিক করুন।
|
|
সকালে প্যান্ডেলে
সকাল হলে শেষ শরতের শানানো রোদটিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাকে ঠকিয়েই ঠাকুর দেখতে হবে। মেয়েরা নরম কটন বা লিনেনের ওভারসাইজড টপ পরুন। ওভারসাইজড হলেও এগুলো বেখাপ্পা দেখায় না। অনেকটা বেলুনের মতো দেখতে বলে কব্জির কাছটা ও কোমরের অংশে একটু চেপে বসে। খুব সুন্দর ফিট করে। কোমরের অংশে সরু বেল্ট লাগিয়ে নিলে আরও ভাল। এর সঙ্গে স্লিম ফিট অল্প রঙিন হাঁটু ঝুলের শর্টস পরুন। গাজর, গোলাপি, আকাশি, তুঁতে এ সব রঙের। তবে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না চাইলে একটু বড় ঝুলের কেপ্রি বা অ্যাংকেল লেংথ ক্রপড কটন কালার ট্রাউজার্স ভাল অপশন। অর্থাৎ যেগুলো গোড়ালির আধ ইঞ্চি ওপরে খতম। এ ছাড়া বড় টিউনিকের সঙ্গে থ্রি কোয়ার্টার লেগিংসও পরতে পারেন। নেট বসানো ডিজাইনার লেগিংস হলে দুর্দান্ত হয়। ছেলেদের জন্য সব থেকে ভাল ডেনিম সেলর প্যান্ট। ওপরে সঙ্গে হালকা ভেস্ট। খুব ঘাম না হলে তার ওপর একটা শার্ট বোতাম খোলা অবস্থায় গলিয়ে রাখুন।
সন্ধ্যে বা সারা রাতের ঠাকুর দেখা
সন্ধ্যে বা হোলনাইট ঠাকুর দেখার প্ল্যান থাকলে যতই ইচ্ছে করুক, সঙ্গে যতই বীরপুরুষ বন্ধুরা থাকুন, মেয়েরা পুজোর সময়ও সাহসী পোশাক পরার আগে এক বার ভেবে নেবেন। উজ্জ্বল রঙের জেগিংস ও একই রঙের বা ওই রঙের প্রিন্ট বসানো কাউল নেক ফুলস্লিভস টপ পরতে পারেন। বা একেবারে ডিপ নেভি রঙের স্কিনি ডেনিম পরে সঙ্গে নতুন ধরনের টপগুলো পরে নিন। সিক্যুইনড বা কাপড় জুড়ে প্যানেল করা টপগুলোয় নতুন অনেক ডিজাইন এসেছে। জার্সি কাপড়ের, গায়ে লেগে থাকা নিটেড কটন (সুতির বোনা সোয়েটারের মতো দেখতে)-এর বেজ বা অফ হোয়াইট টপ পরতে পারেন। বিপরীত রঙের খেলা সব সময়েই চোখ টানে। তবে কাপড় মুড়ে, পাকিয়ে নানান কায়দা করা টপগুলো কেনার সময় ড্রায়িং ইনস্ট্রাকশনস দেখে কেনা উচিত। কারণ ধোওয়ার পর ঠিক নিয়ম মেনে না শুকোতে পারলে পোশাকগুলির বিশেষ ফিটিংস আর থাকে না। ছেলেরা ঘোরাঘুরির জন্য অ্যাসিড ওয়াশড ডেনিম আর সঙ্গে রিঙ্কল ফ্রি ক্যাজুয়াল শার্ট পরে নিন। ভিড়ে কাপড়ের ভাঁজ নষ্ট হতে বাধ্য। তাই টাক ইন ভেস্ট (গুঁজে পরা) বা টি না পরাই ভাল।
ঠাকুর দেখতে বের হলে ছেলে মেয়ে সকলে, চলতে পারবেন এ রকম হিল বেছে, পা-ঢাকা জুতো পরবেন। ভিড়ে মাস্ট।
বৃষ্টি এলে
পুজোর কেনাকাটার সময়ই দু’একটা গাঢ় রঙের স্কার্ট বা গেঞ্জি কাপড়ের ঘেরওয়ালা শর্ট ড্রেস কিনে রাখুন। সঙ্গে রং মিলিয়ে ফ্লোরাল প্রিন্টের ফ্লিপফ্লপ স্যান্ডালস। ছোট জামার সঙ্গে খুব মিষ্টি দেখায়। ছেলেরা সে দিনটা ডেনিম, থ্রি কোয়ার্টার্স দিয়ে চালিয়ে দেবেন। পুজোর বাজারের লিস্টে একটা ট্রেন্ডি ফ্লোটার্স জুড়ে নিন শুধু। ব্যস, বৃষ্টি এলেও এ সব নতুন জামা-জুতোর কিছু যাবে আসবে না।
|
পুজোর দিনে আড্ডা |
সন্ধেবেলার সাজ |
প্যান্ডেল হপিং বয়ফ্রেন্ড-এর সঙ্গে |
এক কম্বিনেশনের পোশাক। মেয়ের হলুদ
ফ্লেয়ার্ড স্কার্ট, সাদা স্প্যাগেটি টপ।
গলায় মাল্টিকালারড স্কার্ফ। ছেলের
ডিসট্রেসড
লুক। লুজ ফিট প্যান্টস
ও
সাদা শার্ট ঝুলিয়ে পরা। |
ফুশিয়া পিঙ্ক সিল্ক চান্দেরি স্লিভলেস
ভেলভেট ব্লাউজ। কনট্রাস্ট নীল বা
ফিরোজা রঙের কুন্দন সেট। হাতে গোলাপি
নীল মেশানো কাচের চুড়ি।
ছেলের
সাজ- ডেনিমের সঙ্গে কটন সিল্কের
কুর্তা। শার্ট কলার। এই কুর্তার সঙ্গে
পাতিয়ালা বা জোধপুরি প্যান্টসও পরা যায়। |
মেয়ের মাল্টিকালারড
জাম্পস্যুট ও ছেলের ফিটেড
ডেনিম, রিংকলড শার্ট। |
|
আড্ডার দিনে
দু’দিনে উত্তর টু দক্ষিণ শহরতলির সব ঠাকুর কমপ্লিট করে ফেলে কারও বাড়ি ঢুকে পুজোবার্ষিকী আড্ডার পরিকল্পনাটি খুবই ভাল। পুজোটা তো সব রকম ভাবেই এনজয় করা উচিত। মেয়েরা জোয়াব, হারেম প্যান্টস, ফিউশন ড্রেস এই দিনটার জন্যই তুলে রাখুন। প্যান্ডেল বা পুজোর বাড়িতে আড্ডা হলে মেয়েরা আনারকলি, কলিদার স্যুট আর ছেলেরা কোমরবন্ধ, জ্যাকেট কুর্তা ইত্যাদি রাজসিক পোশাক-আশাক-এর কথা ভাবতে পারেন। আরও ক্যাজুয়াল থাকতে চাইলে, ছেলেদের আংরাখা শেরওয়ানি কাট কুর্তা আর ডেনিম মিলিয়ে মিশিয়ে পরার আইডিয়াও এই গল্পগুজবের মেজাজটির সঙ্গে মানিয়ে যাবে।
শুধু দু’জনের পুজো
মেয়েরা সাজবেন, ছেলেরা ঘুম থেকে উঠবেন। দু’জনে বের হতে হতে এগারোটা তো বাজবেই। সাত-আট ঘণ্টা টানা ঘোরার প্ল্যান থাকলে মেয়েরা হালকা কোনও স্কার্ট পরুন, হাঁটু ছোঁয়া মিডিয়াম লেংথ-এর। তার সঙ্গে নেট বা ক্রুশের দর্শনীয় টপ। কোথায় যাচ্ছেন বুঝে হল্টার নেকও পরতে পারেন। কিংবা অফশোল্ডার (হাতা ও কাঁধবিহীন জামা) জাম্পস্যুট। বিকেলের আলো পড়ে এলে বা লোকের ভিড়ে বের হতে হলে রঙিন শ্রাগ গলিয়ে নিলেই সান্ধ্যসাজের জন্যও রেডি হয়ে যাবেন। অথবা ট্যান অরেঞ্জ বা স্কুল ইউনিফর্ম কালার ডেনিম পরুন। সঙ্গে ভিক্টোরিয়ান কাট (সামনে হাতায় ফ্রিল, স্যাটিনের ওপর প্যানেল করে স্ট্রাইপ স্ট্রাইপ নকশা ইত্যাদি) টপ টাক ইন করে পরে নিন। সঙ্গে ছেলেরা সেমি ফর্মাল কিছু পরুন। যেমন স্টোন বা এনজাইম ওয়াশড ডেনিমের সঙ্গে সরু লম্বা লম্বা স্ট্রাইপ শার্ট বা বড় চেক প্রিন্ট-এর জামা। আবহাওয়ার আশকারা পেলে লেয়ারড লুকও ব্যবহার করতে পারেন। ভেতরে একটা ইনার ভেস্ট পরে ওপরে একটা সামার শার্ট। কিংবা বেসিক ডেনিমের সঙ্গে শুধুই একটা গ্লসি সেমি ফর্মাল শার্ট।
সন্ধ্যের ডিনারে গেলে মেয়েরা শাড়ি পরতে পারেন, নয়তো ড্রেস পরুন। এ বারে স্ট্রাইপ ও জিয়োমেট্রিক নকশার মিড থাই লেংথ-এর প্রচুর ড্রেস পাওয়া যাচ্ছে। বাটন্ড কোট ড্রেসও খুব আন্তর্জাতিক দেখতে। এ ছাড়া কভার আপ বা র্যাপার ড্রেস (অনেকটা আলখাল্লার মতো দেখতে, কাপড় জড়িয়ে জড়িয়ে পরতে হয়) কিনে নিন। খুব নমনীয় দেখায়। ছেলেরা ডেনিম না পরতে চাইলে প্লিটেড জোধপুর প্যান্টস পরুন। সঙ্গে ওয়েস্টকোট সহ ভাল ফেব্রিকড শার্ট।
সব শেষে মেয়েদের জন্য জরুরি মন্ত্রণা। ছেলেদের সঙ্গে বের হলে ছোট স্যাচেল, ক্লাচ এ সব নেওয়ার চেষ্টা করুন। কক্ষণও বড় হোবো টোট জাতীয় ব্যাগ নিয়ে ওদের সঙ্গে কোত্থাও যাবেন না। যেতে যেতে হাজারটা কোল্ড ড্রিঙ্ক-এর বোতল কিনবে আর আপনার বড় ব্যাগ দেখে তাতে ঢোকাবার চেষ্টা করবে। তার পর তাতে ক্যামেরা, বৃষ্টির কালো ছাতা ইত্যাদিও ধরবে কিনা ঘেঁটে দেখবে। একদম প্রশ্রয় দেবেন না। বের হবার আগে একটা এস এম এস করে দেবেন যেন একটা ওয়েস্ট পাউচ নেয়। ক্যামেরা ও অন্যান্য আবোলতাবোল জিনিস তাতেই ধরে যাবে। তার পরও যদি আপনার ব্যাগে কিছু পুরতে আসে, একটু ভারী হলেই ব্যাগটা স্রেফ ওকে ধরিয়ে দেবেন। হিরোমার্কা পোশাকের সঙ্গে ওই স্টাইলিশ লেডিজ ব্যাগ দিব্যি মানাবে কিন্তু!
|
মেক-আপ: অনিরুদ্ধ চাকলাদার, কেশবিন্যাস: নূর আলম, স্টাইলিং: স্যান্ডি,
শাড়ির মডেল: সম্পূর্ণা, সঙ্গে জয়, পশ্চিমি পোশাকের মডেল: অনিঙ্কিতা ও সায়ন, ছবি: আশিস সাহা |
|
|
|
|
|