|
|
|
|
নির্মাণ নিয়ে নালিশ |
প্রশ্ন পুর-ভূমিকায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
সেবক রোডে বিধি ভেঙে ‘গ্যাংওয়ে’ তৈরির বিষয়টি নিয়ে হইচই হতেই বেআইনি বাণিজ্যিক ভবন তৈরির অভিযোগের বহর ক্রমশ বাড়ছে শিলিগুড়িতে। পুরসভা সূত্রের খবর, সেবক রোডের মেয়র হোটেল ও শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে ‘ল্যান্ডমার্ক’ নামে একটি বাণিজ্যিক ভবন তৈরির ক্ষেত্রে যথেচ্ছ হারে পুর বিধি অমান্য করার অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, বর্ধমান রোডে একটি পাঁচতলা বাণিজ্যিক ভবনেও বিধি ভেঙে নির্মাণ চলছে বলে অভিযোগ মিলেছে। এমনকী, মহানন্দাপাড়ায় কোনও প্ল্যান অনুমোদন ছাড়াই একটি তিনতলা বাড়ি তৈরি হচ্ছে বলে বাসিন্দাদের তরফে পুরকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। বিধান রোড লাগোয়া একটি খাবারের হোটেল মালিকদের তরফেও অবৈধ ভাবে পঞ্চম তলা নির্মাণের কাজ করানোর অভিযোগও পুরসভায় পৌঁছেছে। দিনের পর দিন জনসমক্ষে ওই ধরনের অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ নিয়ে হইচই হলেও সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর কিংবা পুরসভার ইঞ্জিনিয়ররা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছেন না কেন তা নিয়ে বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন। |
|
৬ মাস ধরে এভাবেই সেবক রোডের ফুটপাত দখল করে নির্মাণের
কাজ চালাচ্ছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
পুরসভার একাংশের যোগসাজশ ছাড়া বেআইনি নির্মাণ গড়েও একশ্রেণির প্রোমোটার পার পেয়ে যাচ্ছেন কি না তা নিয়ে জল্পনা চলছে। ঘটনাচক্রে, যে সব প্রোমোটার, নির্মাতাদের বিরুদ্ধে বিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠছে, তাঁরা আমজনতার প্রশ্ন, জল্পনাকে গুরুত্ব দিতে চাননি। যেমন সেবক রোডের মেয়র হোটেলে প্রায় ছ’মাস ধরে রাস্তা আটকে নির্মা কাজ করানো হচ্ছে। হোটেলের সরাই লাইন্সেস বাতিল করে দিয়েছে প্রশাসন। অথচ হোটেল কর্তৃপক্ষের তরফে কাজল সরকার বুধবার দাবি করেন, “ফের সরাই লাইসেন্স হয়ে গিয়েছে।” বৃহস্পতিবার কাজলবাবু সুর পাল্টে বলেন, “নতুন করে সরাই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। তা হয়ে যাবে।” দিনের পর দিন শহরের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকার রাস্তায় বালি-পাথর-আবর্জনা জমিয়ে পথচারী, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অসুবিধে করে নির্মাণ চালাচ্ছেন কেন? জবাবে কাজলবাবু জানান, পুরসভার তরফে ছাড়পত্র রয়েছে বলেই তিনি তা করাতে পারছেন। সেবক রোডের ব্যবসায়ী সংগঠনের অভিযোগ, একাধিক দলের প্রভাবশালী নেতা-নেত্রীদের একাংশের মদতে হোটেলে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের অভিযোগ সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এমনকী, হার্ডওয়ার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের একাংশের অভিযোগ, একজন প্রভাবশালী নেতা তাঁদের ফোন করে ওই হোটেলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে নিষেধ করেছেন। পাশাপাশি, শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে ‘ল্যান্ডমার্ক’-এর নির্মাতা অনিল অগ্রবালের বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি ‘ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট’ তৈরির সময়ে পুরসভার অনুমতি ছাড়া ‘গ্যাংওয়ে’ বানিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। পুরসভার তরফে নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও ওই গ্যাংওয়ে খোলার কাজ তিনি শুরু করেননি বলে অভিযোগ। উপরন্তু, শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে পার্কিংয়ের জায়গা এতটুকুও না-ছেড়ে ঘিঞ্জি এলাকায় কী ভাবে ওই বাণিজ্যিক ভবন গড়লেন, সেই প্রশ্নে অনিলবাবু বলেন, “বিল্ডিং তো হয়ে গিয়েছে। এ সব নিয়ে এখন আর হইচই করে লাভ হবে না।” ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বহুবার পার্কিং দখল করে দোকানের বিষয়ে জানালেও ‘অজ্ঞাত কারণে’ কাউন্সিলর কিংবা কেউ ব্যবস্থা নিতে আগ্রহ দেখাননি। এলাকার কাউন্সিলর তথা পুর চেয়ারম্যান নান্টু পাল সেবক রোডের মেয়র হোটেলে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন। অথচ তাঁর এলাকায় কী করে আস্ত একটা বাণিজ্যিক ভবন পার্কিং ছাড়াই হল? নান্টুবাবুর জবাব, “যত দূর জানি ল্যান্ডমার্কের প্ল্যান পাস হয়েছিল। কী ভাবে তা পাস হয়েছে সেটা কর্তৃপক্ষ দেখুক। বাণিজ্যিক এলাকায় পার্কিং দখল হয়ে থাকলে পুরসভার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর কমল অগ্রবাল, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর সুজয় ঘটক এক সুরে বলেছেন, “মেয়র হোটেলসহ সব অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ভেঙে দিতে হবে। না হলে মানুষের কাছে কাউন্সিলর, পুরকর্তা, ইঞ্জিনিয়রদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ জোরদার হবে।” এ ব্যাপারে পুর চেয়ারম্যান বলেন, “মেয়র হোটেল সহ নানা এলাকায় অবৈধ নির্মাণ বন্ধ, ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।” সুজয়বাবু জানান, সম্প্রতি বরো কমিটির বৈঠকে উপস্থিত সমস্ত কাউন্সিলররাই মত দেন হোটেলে অবৈধ ভাবে নির্মাণ কাজ চলছে। তা বন্ধ করা দরকার। তিনি বলেন, “এর পরেও নির্মাণ কাজ বন্ধ না হওয়ার পিছনে কী রহস্য রয়েছে? অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে যুব কংগ্রেসের তরফে রাস্তায় নেমে আন্দোলন হবে।” পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত, মেয়র পারিষদ সীমা সাহা প্রায় একই সুরে জানান, তাঁরা ফের বেআইনি নির্মাণ ভাঙার অভিযানে নামবেন। |
|
|
|
|
|