পুজোর আগে নাশকতার ছক বানচাল
ডুয়ার্সের বাসে স্কুলব্যাগে টাইম-বোমা
পুজোর আগে নাশকতার ছক বানচাল করল গোয়েন্দা বিভাগ ও পুলিশ। তাদের তৎপরতায় প্রায় আড়াই কেজি ওজনের ‘টাইম-বোমা’ বিস্ফোরণের হাত থেকে রেহাই পেল ডুয়ার্সের যাত্রী বোঝাই বেসরকারি বাস।
বুধবার বিকেলে জলপাইগুড়ি জেলার শামুকতলা থানা এলাকার এই ঘটনায় আরও এক বার কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) নাম সন্দেহভাজনের তালিকায় উঠে এসেছে। গোয়েন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে বুধবার পুলিশ গোটা জেলায় তল্লাশিতে নামে। শামুকতলার গদাধর সেতুর কাছে জয়গাঁ-রায়ডাক রুটের ওই বাস থেকে একটি দাবিদারহীন স্কুলব্যাগ থেকে প্লাস্টিকে মোড়া বোমাটি উদ্ধার হয়। বোমার দু’টি ‘টাইমারে’ই রাত ১২টা সময় নির্দিষ্ট করা ছিল। সিআইডির ‘বম্ব স্কোয়াড’-এর বিশেষজ্ঞরা বোমাটি পরীক্ষার পরে রাত দেড়টা নাগাদ নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে সেটিকে নিষ্ক্রিয় করেন।
শামুকতলায় উদ্ধার হওয়া টাইমবোমা। বৃহস্পতিবার রাজু সাহার তোলা ছবি।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের বিশেষজ্ঞরা জানান, বোমাটি যথেষ্ট শক্তিশালী। স্কুলব্যাগটি অসতর্কভাবে নাড়াচাড়া করলে অথবা পড়ে গেলেও তা ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। সে ক্ষেত্রে বাসে থাকা প্রায় ৩৫ জন যাত্রীরই প্রাণসংশয় হতে পারত। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “বোমাটি ওই স্কুলব্যাগে ভরে অন্য কোথাও পাঠিয়ে নাশকতার ছক কষা হয়েছিল কি না, সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
এই ঘটনায় পুলিশ দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রকে বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রেফতার করেছে। তার বাড়ি শামুকতলা বস্তিতে। পুলিশের দাবি, স্কুলব্যাগটি তারই। কিন্তু, তার ব্যাগে কী ভাবে বোমাটি পৌঁছল তা অবশ্য রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। ছাত্রটিকে জেরা করা হচ্ছে। ওই ছাত্রের পরিবারের দাবি, সে চাকরির ইন্টারভিউয়ের নাম করে বুধবার আলিপুরদুয়ার গিয়েছিল। বুধবার রাতে সে কুমারগ্রামে আত্মীয়ের কাছে ছিল। এ দিন সেখান থেকেই পুলিশ ওই ছাত্রকে ধরে।
পুলিশের কাছে খবর আছে, অসম-সহ উত্তর পূর্বের একাধিক জঙ্গি সংগঠনের মদতে উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকায় ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কেএলও। তারাই পুজোর মুখে নাশকতা ছড়াতে ছক কষেছে কি না, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। বিশেষ করে কিছু প্রথম সারির আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গির হদিস নেই পুলিশের কাছে।
সংগঠনের স্বঘোষিত কমান্ডার জীবন সিংহ আজও অধরা। টাইম-বোমা উদ্ধারের ঘটনায় অসম পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে রাজ্য পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, যে বাসে বোমা মিলেছে, সেটি রোজ বিকেল ৩টে নাগাদ ভুটান সীমান্তের জয়গাঁ থেকে আলিপুরদুয়ার, শামুকতলা হয়ে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ অসম লাগোয়া রায়ডাকে পৌঁছয়। বুধবার দুপুরে গোয়েন্দা দফতরের কাছ থেকে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপারের কাছে খবর পৌঁছয়, ওই দুই জেলার কোথাও একটি বাসে বোমা রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে দুই জেলার পুলিশ সতর্কতা জারি করে তল্লাশিতে নামে। বিশেষত, ডুয়ার্সের ভুটান সীমান্ত ও অসম লাগোয়া এলাকায় অস্থায়ী ব্যারিকেড করে প্রতিটি বাস থামিয়ে তল্লাশি শুরু করে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ।
বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ গদাধর সেতুর কাছে ওই বাসটি থামানো হয়। তল্লাশি শুরু হওয়ার আগে আগেই এক স্কুল ছাত্র বাস থেকে নেমে যায়। পিছনের দিকের একটি আসনে স্কুলব্যাগটি পড়েছিল। এক তরুণী পুলিশকে জানান, ওই আসনে যে ছেলেটি বসেছিল, তাকে তিনি চেনেন। সেই সূত্রেই ধৃত স্কুলছাত্রের হদিস মেলে বলে পুলিশের দাবি। এর পরে পুলিশ প্রতিটি যাত্রীর নাম-ঠিকানা লিখে বাসটিকে গন্তব্যে যাওয়ার ছাড়পত্র দেয়।
জেলা পুলিশের প্রশিক্ষিত কুকুর স্কুলব্যাগটি শুঁকলেও অস্বাভাবিক আচরণ করেনি। পরে রেলের প্রশিক্ষিত কুকুর আনিয়ে ব্যাগটি পরীক্ষা করানো হলেও লাভ হয়নি। এর পরেই সিআইডি-এর বোমা বিশেষজ্ঞেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যাগে বোমা রয়েছে বলে জানিয়ে দেন। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার চেষ্টা বোমা থেকে ডিটোনেটর আলাদা করে ফেলেন বিশেষজ্ঞরা। রাত দেড়টা নাগাদ সেটিকে ফাটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়।
পুলিশের অনুমান, গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড ও ট্রেনে প্রশিক্ষিত পুলিশ কুকুর দিয়ে রাতের ট্রেনগুলিতে তল্লাশি চলে। তা এড়াতেই প্লাস্টিক দিয়ে টাইম-বোমাটি মোড়া হয়েছিল। যার জন্য প্রশিক্ষিত কুকুর শুঁকেও বিস্ফোরকের গন্ধ পায়নি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.