কুঁড়ে ঘরে বাস, গড়েন মন্দির-প্রাসাদ
ওঁরা কেউ ঈশা খাঁ নন, ধীমান বা বীতপালও নয়। তবু ওঁদের হাতের কাজে ঘাস-আগাছায় ভরা জমিতেই তৈরি হয় তাজমহল, ঐতিহাসিক সৌধ। অজন্তা-ইলোরার ভাস্কর্য উঠে আসে পাড়ার মণ্ডপে, থার্মোকলের কারুকার্যে। শহর থেকে মফস্সলের পুজো মণ্ডপ কয়েক দশক ধরে এ ভাবেই দৃষ্টিনন্দন করে তুলছেন শিল্পীরা।
বাঁকুড়া শহরের কয়েকটি মণ্ডপে এ বার থার্মোকলের তাক লাগানো কাজ করছেন বেশ কয়েকজন যুবক। পুজো উদ্যোক্তাদের ভাবনা শিল্পের ছোঁয়ায় তাঁরা বাস্তবের রূপ দেওয়ার কাজে এখন ব্যস্ত। রবীন্দ্র সরণি সবর্র্জনীন দুর্গোৎসব কমিটির থিম-- ‘স্বপ্নের ছেলেবেলা’। সেই ভাবনাকে ফুটিয়ে তুলছেন বাঁকুড়া শহরের কমরারমাঠ এলাকার বাসিন্দা ৩০ বছরের যুবক পচাই লোহার। সকাল থেকে থার্মোকলের উপর পেন্সিল বুলিয়ে, ছুরি চালিয়ে নানা কারুকার্য তৈরি করছেন। তাঁর সঙ্গে হাত লাগিয়েছেন আরও কয়েকজন। সকলেই নিতান্ত দরিদ্র পরিবারের।
শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় প্রাণ পাচ্ছে ছোটা ভীম-রা। বাঁকুড়ায় ছবিটি তুলেছেন অভিজিৎ সিংহ।
পচাইয়ের এই পেশায় আসাটা বেশ আশ্চর্যের। তাঁর বাবা রিকশাচালক। স্কুলে বেশি ক্লাস পর্যন্ত পচাইয়ের পড়াশোনাও হয়নি। কিন্তু ছবি আঁকতে তাঁর খুব ভাল লাগত। কারুর কাছে ছবি আঁকা শেখেননি। তাঁর কথায়, “নিজের মনেই ছবি আঁকতাম। অন্য কাজ করতে ইচ্ছা করত না। তাই পাড়ার মণ্ডপে থার্মোকলের কাজ দেখে ঠিক করি, থার্মোকল নিয়েই কাজ করব। যা রোজগার হবে তা দিয়েই সংসার চালাব।” সেই ১২ বছর বয়েস থেকে তিনি দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, সরস্বতী পুজো থেকে বিয়ে, অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানের মণ্ডপ সাজিয়ে যাচ্ছেন। কাজ বাড়লেও এখন তাঁর সংসারের খরচও ঢের বেড়েছে। পচাই বলেন, “দুর্গাপুজোতেই যেটুকু রোজগার হয়। সেই টাকাতেই স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নতুন পোশাক কিনে দিই। পুজোর দিনগুলোয় কিছু ভাল খাবার ওদের দিতে পারি।” কিন্তু এই রোজগারে কি সারা বছর চলে? প্রশ্নটা ছুঁড়লেন পচাইয়ের সঙ্গী বছর ১৫-এর সঞ্জয় দাস। চতুর্থ শ্রেণিতেই পড়াশোনায় তার দাঁড়ি পরে যায়। সঞ্জয় বলে, “নুন আনতে পাতের ভাত শেষ হওয়ার সংসার। বাবা রিকশা চালায়। কিন্তু বয়সের ভারে ক্লান্ত। এক ভাইয়ের পড়াশোনা বন্ধ হতে দিইনি। পচাইদার হাত ধরে এই পেশায় চলে এসেছি।” ওঁদের সঙ্গে রয়েছেন মোলবনার গুরুপদ মণ্ডল। তিনি অবশ্য থার্মোকলের কাজ করেন না। তাঁর কথায়, “আমি প্যান্ডেল বাঁধার কাজ করি। এখন পুজো উদ্যোক্তরা বাজেট বাড়ানোয় আমাদেরও হাতে কিছু বাড়তি টাকা আসেছে।”
লালবাজার সবর্র্জনীনের মণ্ডপে থার্মোকলকে মাধ্যম করে কাজ করছেন বাঁকুড়ার দোলতলার সুখেন কর্মকার ও নুনগোলা রোডের সুনীল গোয়ালিয়া। এখানকার ‘থিম’ অক্ষরধাম মন্দির। সুখেন থার্মোকলের কাজের সঙ্গে আঁকা শেখান। সুনীলবাবু বছরের বাকি সময় সাইনবোর্ড লেখেন। তাঁদের বক্তব্য, “সারাটা বছর আমরা পুজোর অপেক্ষায় থাকি। পুজোর কাজ করে যে মজা রয়েছে, অন্য কাজে তা নেই।” শুধু বেশি রোজগার নয়, এই মানুষগুলোর কাছে পুজো তাঁদের শিল্পকৃতী আরও অনেকের কাছে পৌঁছে দেয়। তাঁদের কথায়, “মানুষ আমাদের কাজ দেখে খুশি হলে সেটাই আমাদের সব থেকে বড় পাওনা।”
তবে ওঁদের সুখে এ বার বাধ সেধেছে পেট্রোপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি। পচাই-সুনীলরা জানান, পেট্রোপণ্য থার্মোকলের দাম বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু আগে তাঁরা বরাত নেওয়ায় এখন বাড়তি খরচ মিটিয়ে কত টাকা নিয়ে ঘরে ফিরবেন, সে সংশয় রয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.