বিধায়ক থেকে সাংসদ, পঞ্চায়েত সমিতিও সিপিএমের দখলে। তবুও চারদিন আগের সিপিএমের সভার ভিড়কে টপকে গেল তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর জনসভা। বান্দোয়ানের এএন ঝা হাইস্কুল সংলগ্ন মাঠে বৃহস্পতিবার শুভেন্দুর সভায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষ ভিড় করেছিলেন বলে দাবি পুলিশের। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করেছেন, সংখ্যাটা ২০ হাজারের কম নয়। অথচ এই মাঠেই বৃহস্পতিবার সভা করেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা পুরুলিয়ার জেলা সম্পাদক মণীন্দ্র গোপ ও ঝাড়গ্রামের সাংসদ পুলিনবিহারী বাস্কে। পুলিশের হিসেবে, সে দিন ভিড় হয়েছিল কমবেশি তিন হাজার। আর এই বাড়তি ভিড় দেখেই উচ্ছ্বসিত শুভেন্দুবাবু আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে এলাকা থেকে সিপিএমকে সরানোর ডাক দিলেন। |
কার্যত অনেকদিন পরে কোনও রাজনৈতিক নেতার সভায় এমন ভিড় দেখল বান্দোয়ান। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে অনিল বিশ্বাসের মতো সিপিএমের অনেক হেভিওয়েট নেতা এক সময় বান্দোয়ান ও সংলগ্ন এলাকায় সভা করে গিয়েছেন। বাসিন্দাদের মতে, তখনও এমন ভিড় হত। কিন্তু বাম বিরোধী শীর্ষনেতৃত্বকে সে ভাবে এই এলাকায় অতীতে খুব একটা সভা করতে দেখা যায়নি। বেশ কয়েক বছর আগে বিধানসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে সভা করেছিলেন। তারও আগে সভা করেছিলেন তৎকালীন পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি।
জেলা যুব তৃণমূলের উদ্যোগে আয়োজিত এই সভা দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১২টাতেই মাঠ কার্যত ভরে যায়। সেই ভিড় উপচে পড়ে বান্দোয়ান-বরাবাজার, বান্দোয়ান-বাঁকুড়া রাস্তার উপর। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকর্মীদের। মাঠের চারপাশে বাড়ির ছাদেও ছিল ভিড়। সশস্ত্র পুলিশ কার্যত সভাস্থল ঘিরে রেখেছিল। বান্দোয়ানের শেষপ্রান্ত কুইলাপাল থেকে বান্দোয়ান বাজার পর্যন্ত নিরাপত্তাবাহিনীর টহল ছিল চোখে পড়ার মতো। বান্দোয়ানের সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত বেসরা সন্ধ্যায় দাবি করেন, “তৃণমূল টাকা খরচ করে গাড়ি করে বাইরে থেকে লোক এনে মাঠ ভরিয়েছে। আমাদের সভায় শুধু বান্দোয়ানের লোকেরাই ছিলেন।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর পাল্টা দাবি, “বান্দোয়ানের বাইরের এক জনও ছিলেন না। মানুষ এখন কাদের সঙ্গে, পঞ্চায়েত ভোটেই তা সিপিএম নেতারা জানতে পারবেন।”
সভায় শুভেন্দু দাবি করেন, “আগে এই জেলায় সিপিএমের সশস্ত্রবাহিনী ও যৌথ বাহিনীর পাশাপাশি শিবির দেখেছি। তখন সিপিএম নেতারা সাধারণ মানুষকে মাওবাদী তকমা দিয়ে গ্রেফতার করাত। সিপিএমের মন্ত্রীরা কোনও দিনও জঙ্গলমহলে আসেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়ে জঙ্গলমহল ও পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়েছেন। সিপিএম সেই শান্তি নষ্ট করতে চায়। সেই আতঙ্কের দিন আবার ফিরে আসুক আমরা চাই না।” পাশের থানা বোরোতে এ দিন একই সময়ে সভা করে সিপিএম। মণীন্দ্রবাবু ছাড়াও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র ছিলেন। |