|
|
|
|
তৃণমূলের দলাদলিতে দুর্গাপুজোও দু’ভাগ |
অমিত কর মহাপাত্র • পটাশপুর |
তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ভাগ হয়ে গেল পটাশপুরের অন্যতম সেরা পুজোকমিটি টিকরাপাড়া রেনবো অ্যাথলেটিক ক্লাব। ক্লাব থেকে বেরিয়ে উদ্যোক্তাদের একাংশ পটাশপুর ২ ব্লকের সদর প্রতাপদিঘিতেই আলাদা করে পুজোর আয়োজন করছে। নাম, টিকরাপাড়া রবীন্দ্রনাথ ইউনাইটেড ক্লাব।
রাজনৈতিক কারণেই যে এই বিভাজন, তা মেনে নিয়েছেন রেনবো অ্যাথলেটিক পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা তথা তৃণমূলের পটাশপুর ২ ব্লকের যুব সভাপতি স্বপন মাইতি। ‘অধিকারী পরিবারে’র ঘনিষ্ঠ এই নেতার কথায়, “উদ্বোধক, অতিথির নাম নির্বাচন নিয়েই মতান্তর হয়। রাজনৈতিক কারণও কিছু আছে। তাই ওরা ক্লাব ছেড়ে নতুন ক্লাব করেছে। পুজোও করছে।” তাঁর সংযোজন “অসহযোগীরাই বেরিয়ে গিয়েছেন। মূল প্রতিষ্ঠাতারা আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। পদ ও ক্ষমতা নিয়ে ওঁরা দ্বন্দ্ব বাড়াচ্ছিল।”
আর যাঁর উদ্যোগে গঠিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ইউনাইটেড পুজোকমিটি, সেই আইএনটিটিইউসি-র স্থানীয় নেতা মানস রায়ের বক্তব্য, “পুজোর বিভিন্ন দিনে বিশিষ্টদের আমন্ত্রণ জানানোর নিয়ম ছিল দলমতনির্বিশেষে। সর্বজনীন পুজোর উদ্যোক্তা হয়েও শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে ওরা আমাদেরই দলীয় বিধায়ক জ্যোতির্ময় করকে আমন্ত্রণ করবে না বলে ঠিক করেছিল। যা আমরা মানতে পারিনি। তাই পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনে এ বার প্রকৃত সর্বজনীন উৎসব করছি।’’ তাঁর পাল্টা দাবি, “শুধু অধিকাংশই সমর্থকই নন, প্রতিমা-মণ্ডপ শিল্পী থেকে ঢাকি পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে। পুজোই বুঝিয়ে দেবে, মানুষ কাদের সঙ্গে আছেন।”
তা হলে কী অধিকারী পরিবারের সঙ্গে জ্যোতির্ময় অনুগামীদের পুরনো বিরোধের জেরেই এই বিভাজন। প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না কেউ। তবে, বিষয়টিতে মোটেই খুশি নন এলাকার তৃণমূল সমর্থকেরা। তাঁদের বক্তব্য, দুর্গাপুজো সর্বজনীন উৎসবযেখানে জাতি-ধর্ম-রাজনৈতিক দলের মিলন ঘটে। অথচ এ ক্ষেত্রে একই দলের দু’টি গোষ্ঠী ভাগ হয়ে গেল। আখেরে ক্ষতি হল দলেরই।
রেনবো অ্যাথলেটিকের পুজো এ বার দশম বছর। ইতিমধ্যে তিন বার জেলা প্রশাসকের বিচারে সেরা পুজোর স্বীকৃতি পেয়েছে। পুজো হয় টিকরাপাড়া হাইস্কুল মাঠে। সম্পাদক ঝন্টু পাত্র ও সভাপতি কৃষ্ণকলি পাত্র। তাঁরা জানান, পুজোর বাজেট ৬ লক্ষ টাকা। বিবেকানন্দের বাড়ির আদলে মণ্ডপ। মণ্ডপে বিবেকানন্দের ছেলেবেলা ফুটিয়ে তোলা হবে। হোগলা পাতার প্রতিমা। নবমীতে কুমারী পুজো। একাদশীতে গণবিবাহ। মণ্ডপের সামনে বিশেষ সৌন্দর্যায়ন ও আলোকসজ্জা। প্রতিবারের মতো এ বারও সমাজসেবামূলক কর্মসূচি থাকছে। আসবেন চলচ্চিত্র ও দূরদর্শনের শিল্পীরা।
অন্য দিকে, রবীন্দ্রনাথ ইউনাইটেডের পুজোর এ বার প্রথম বর্ষ। পুজো হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক সেবাসংস্থার মাঠে। সম্পাদক রিন্টু বেরা। সভাপতি সত্যেশ্বর নন্দী। তাঁরা জানান, পুজোর বাজেট ৯ লক্ষ টাকা। উত্তর ভারতের একটি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। সাবেক প্রতিমা। চন্দননগরের আলো। প্রধান অতিথি বিধায়ক জ্যোতির্ময় কর, যিনি আবার চণ্ডীপাঠ করবেন। অষ্টমীতে কুমারী পুজো। দশমীতে গণবিবাহ। পুজোর প্রতিটি দিন একগুচ্ছ সমাজসেবামূলক কর্মসূচি। বহিরাগত শিল্পীদের নিয়ে হবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। মণ্ডপের পাশের দু’টি বড় পুকুরে কাটআউট ফোয়ারা-সহ রবীন্দ্র ও বিবেকানন্দ উদ্যান অন্যতম চমক। দুই ক্লাবের মধ্যে চলছে জোর টক্কর। মণ্ডপে দর্শকের ভিড়ই অবশ্য ঠিক করবে ‘সেরা’র শিরোপা। |
|
|
|
|
|