|
|
|
|
দাবিতে অনড় পার্থ |
|
হলদিয়া নিয়ে সতর্কবার্তা
গোয়েন্দাদের
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
তৃণমূল আইএনটিইউসি-র আন্দোলনে হলদিয়া বন্দরের স্বাভাবিক পরিস্থিতি নষ্ট হচ্ছে বলে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরকে সতর্ক করল রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ। দফতরে একটি চিঠি পাঠিয়ে তারা বলেছে, রাজ্য সরকার হস্তক্ষেপ না-করলে ১০ বছরের চুক্তি ভেঙে এবিজি হলদিয়া ছেড়ে চলে যেতে পারে। তাতে হলদিয়া বন্দরের প্রভূত ক্ষতি হবে।
হলদিয়া বন্দরে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে বন্দর চেয়ারম্যান এক পক্ষ কালের মধ্যে দু’-দু’বার চিঠি পাঠিয়েছিলেন মহাকরণে। প্রথম বার স্বরাষ্ট্রসচিবকে। তার পর মুখ্যসচিবকে। তার ভিত্তিতেই রাজ্য সরকার গোয়েন্দা দফতরকে দিয়ে তদন্ত করিয়েছিল বলে স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর। রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান বাণীব্রত বসুর লেখা ৮ অক্টোবরের লেখা চিঠিটি স্বরাষ্ট্র দফতরে পৌঁছয় ৯ অক্টোবর। সে দিনই তার কিছু ক্ষণ আগেই অবশ্য হলদিয়া গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিয়েছেন, বন্দরে কোনও অশান্তি-গোলমাল নেই। সব স্বাভাবিক।
অথচ মহাকরণে পাঠানো তাঁর রিপোর্টে গোয়েন্দা প্রধান লিখেছেন, এবিজি যে ২৭৫ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করেছে তাদের আন্দোলনের জেরে হলদিয়া বন্দরে অচলাবস্থা কাটছে না। আইএনটিটিইউসি এই শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। খবর পাওয়া যাচ্ছে, এবিজি তাদের চুক্তি ভেঙে হলদিয়া বন্দর ছেড়ে চলে যেতে পারে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এখনই সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
গোয়েন্দা-প্রধানের রিপোর্ট জমা পড়ার পরে দু’দিন কেটে গেলেও হলদিয়া বন্দরের অচলাবস্থা কাটাতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ওই বন্দরের ২ এবং ৮ নম্বর বার্থে মাল ওঠানো নামানোর কাজ এখনও বন্ধ। গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ওই দুই বার্থে কোনও জাহাজই ঢুকছে না। বার্থ দু’টির দায়িত্বে থাকা সংস্থা এবিজি-র অভিযোগ, এখনও তাদের কর্মীদের উপর হামলা হচ্ছে। পাশাপাশি, বিক্ষোভ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এবিজি-র ছাঁটাই করা কর্মীরা। বুধবারও অনশনে বসেছিলেন তাঁরা। অচলাবস্থা কাটানোর দাবি জানিয়ে প্রচারপত্রও ছড়িয়েছে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন।
মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হলদিয়া গিয়ে একই মঞ্চ থেকে বন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে দাবি করেছিলেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই দাবিতে অনড় থেকে এ দিন
তিনি বলেন, “আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, হলদিয়া বন্দরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।”
তা হলে গোয়েন্দা প্রধান এমন রিপোর্ট দিলেন কেন? পার্থবাবুর ব্যাখ্যা, ওই রিপোর্ট ৮ তারিখের। তাঁরা হলদিয়ায় যান তার পরের দিন। সে দিন থেকে হলদিয়া বন্দরের পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি তুলে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের প্রচারপত্র বিলি করা প্রসঙ্গেও একই যুক্তি দিয়ে শিল্পমন্ত্রীর মন্তব্য, “ওটা ওরা আগে বিলি করেছিল। তার পরেই আমরা হস্তক্ষেপ করেছি।” কিন্তু ঘটনা হল, মঙ্গলবার তাঁদের সভার পরে বুধবারও ওই প্রচারপত্র বিলি হয়েছে বন্দরে।
তা ছাড়া, বন্দরের সব স্বাভাবিক থাকলে শ্রমিকদের একাংশ বুধবার অনশনে বসেছিলেন কেন? শিল্পমন্ত্রী বলেন, “আমাদের মতে, ওখানে একটিই অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে। তা হল ২৭৫ জন কর্মীকে ছাঁটাই করা। ওঁদের ফিরিয়ে নিতে হবে।” তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “ছাঁটাই হওয়ার পরেও কারও অনশন করার অধিকার থাকবে না?”
আন্দোলনরত শ্রমিকদের হয়ে পার্থবাবুর সাফাই, “ওঁরা তো শুধু অনশনে বসেছিলেন, কারও কাজে তো বাধা দেননি।” তবে তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর হস্তক্ষেপে বুধবার রাতে তড়িঘড়ি অনশন তুলে নেন শ্রমিকেরা। আজ, শুক্রবার হলদিয়ায় শুভেন্দুর সভা করার কথা ছিল। কিন্তু সেই সভাও বাতিল করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|