ময়দানে আজ নতুন এল ক্লাসিকো
সোনালি অঞ্চল জয় করাই আজ দুই কোচের মন্ত্র
স্বপ্নের ম্যাচে সোনালি মুহূর্ত দেখার জন্য মাঠের কোথায় চোখ রাখা উচিত?
স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনকে একবার এই প্রশ্ন করা হয়েছিল। ম্যান ইউ বসের উত্তর ছিল, “দুই প্রান্তের গোলকিপারের আশেপাশের এলাকা। ফুটবল মাঠের যাবতীয় সেরা মুহূর্ত তো ওখানেই তৈরি হয়।”
ফুটবল বিশ্বে ফার্গুসন যে গ্রহে অবস্থান করেন তার কয়েক হাজার মাইলের মধ্যে পড়েন না হোসে রামিরেজ ব্যারেটো। বৃহস্পতিবার সকালে মোহনবাগান অনুশীলনে ওডাফা ওকোলির গোলার মতো শটগুলো যখন দু’পাশে ঝাঁপিয়ে বাঁচাচ্ছিলেন অরিন্দম ভট্টাচার্য, তখন দূরে বসে দেখছিলেন ব্যারেটো। বলছিলেন, “ওডাফা-র‌্যান্টি-টোলগে নিয়ে এত হইচই হচ্ছে। কিন্তু দু’টো টিমের গোলে যারা দাঁড়াবে তারা কিন্তু বড় ফ্যাক্টর। যাবতীয় লড়াই কিন্তু ওদের সঙ্গেই।”
আজ শুক্রবার আই লিগের মোহনবাগান বনাম প্রয়াগ ইউনাইটেডের লড়াইকে ‘স্বপ্নের ম্যাচ’ বলছেন অনেকেই। ধারে-ভারে, শক্তির নিরিখে, টাকার অঙ্কে, তারকা সমাবেশে অনেকের কাছে আবার এটা ময়দানের ‘নতুন এল ক্লাসিকো’।
মারণাস্ত্র ও শেষপ্রহরী
গোলরক্ষক অরিন্দমের কোলে ওডাফা। সুব্রতর সঙ্গে র‌্যান্টি। বৃহস্পতিবার।
স্বপ্নের ম্যাচ বা ‘এল ক্লাসিকো’যেভাবেই দেখা হোক যুবভারতীর এই যুদ্ধকে, আসলে ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের এক নতুন দিক নির্দেশ করতে চলেছে। কোচেদের স্ট্র্যাটেজি, ট্যাকটিক্সের অঙ্ককে ছাপিয়ে যেখানে বারবার মাথা তুলে দাঁড়িয়ে পড়ছে ব্যক্তিগত নৈপুন্যের ঝলকের প্রসঙ্গ। এগারো বনাম এগারো ছাপিয়ে সামনে চলে আসছে র‌্যান্টি বনাম ওডাফার মহা-লড়াই। টোলগে ওজবে বনাম কেন ভিনসেন্টের যুদ্ধ। কোস্টারিকার বিশ্বকাপার কার্লোস হার্নান্ডেজের এশিয়া খ্যাত ফ্রিকিকের উপাখ্যান।
কিন্তু ওডাফা-টোলগে-র‌্যান্টি, কার্লোস ওঁরা তো সবাই গোল করবেন, কিন্তু ওঁদের আটকাবেন কে? আর সেখানেই উঁকি দিচ্ছে বারপোস্টের নীচে দাঁড়ানো শেষ ডিফেন্ডারের ক্যারিশমা। কোচের সাজানো এগারো ঘুঁটির মধ্যে ওই একটা জায়গা যেখানে একটা ভুল মানেইভরাডুবি। একটা অসাধারণ সেভ মানেই, টিমকে ভাসিয়ে রাখা। ফলে সন্তোষ কাশ্যপ বা সঞ্জয় সেনরা যে স্ট্র্যাটেজি নিয়েই আজ খেলতে নামুনম্যাচের সোনালি সব মুহূর্তই বন্দি হয়ে থাকবে গোলকিপারদের চৌহদ্দিতে। যেখানে যুদ্ধ চলবে অবিরাম। নিরন্তর। ওডাফা-টোলগে বনাম সুব্রত পাল বা র‌্যান্টি-কার্লোস বনাম অরিন্দম ভট্টাচার্যের।
ওডাফা-টোলগে যখন আপনার সামনে বল পায়, তখন আপনার হৃৎপিণ্ডের অবস্থাটা কেমন থাকে? প্রশ্ন শুনে হাসেন প্রয়াগ গোলকিপার সুব্রত পাল। “আসলে আমরা তো ওদের দেখি না। দেখি ওদের পা-গুলো। আর বল। হৃৎপিণ্ডটা সচলই থাকে, না হলে বল আটকাব কেমন করে।” দেশের এক নম্বর গোলকিপারের খেলা দেখে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি কাগজ একবার ‘স্পাইডারম্যান’ নাম দিয়েছিল আদর করে। বলছিলেন, “ও সব মনে রাখি না। গোলকিপারদের তো প্রতিদিনই চ্যালেঞ্জ। দেখা যাক কাল কে জেতে?”
আর র‌্যান্টি মার্টিন্সের বিরুদ্ধে অন্তত পঁচিশটি ম্যাচ খেললেও এখনও গোলমেশিনকে সে ভাবে বুঝে উঠতে পারেননি অরিন্দম ভট্টাচার্য। মোহন-গোলকিপার বলছিলেন, “ওর পায়ে বল পড়ার পর চোখ সরালেই বিপদ। কোথা থেকে যে গোলে মেরে দেবে কেউ জানে না।” পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, “কার্লোস শুনেছি খুব ভাল ফ্রিকিক মারে। একটা ফ্লাইট মিস করলেই কিন্তু সমস্যা। সতর্ক থাকতে হবে।” ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে পরিস্থিতি বুঝে ওডাফা-র‌্যান্টিদের পাশাপাশি তাই দুই কোচই শান দিয়েছেন তাদের শেষ প্রহরীকে। ‘সোনালি অঞ্চলের’ যুদ্ধে জেতার আশায় দীঘর্ক্ষণ পড়ে থেকেছেন।
কিন্তু গোলকিপার বনাম স্ট্রাইকার লড়াইয়ের বাইরে কী অঙ্ক কষছেন দু’দলের দুই কোচ? সন্তোষ কাশ্যপ বা সঞ্জয় সেনের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, দু’জনেই কেমন ভুলভুলাইয়ায় আটকে। হাতে প্রচুর ‘মারণাস্ত্র’। তা সত্ত্বেও জীবনে প্রথমবার তারকা-সমৃদ্ধ দল নিয়ে ধুন্ধুমার যুদ্ধে নামার আগে দু’জনেই বেশ চাপে। চাপটা মোহন-কোচেরই অবশ্য বেশি। এতটাই যে, তাঁর গত তিন মাসের হাসিখুশি মুখটা উধাও হয়ে গিয়েছে। এ দিন অনুশীলনে অরিন্দম-মণীশদের দিকে ‘তেড়ে’ গিয়ে যে ভাবে বকাঝকা করলেন, তাতে সন্তোষের রক্তচাপটা বেশ উর্ধ্বমুখী মনে হল। ধরেই নিয়েছেন, ম্যাচে অন্য রকম কিছু হলে চাকরি যাবেই।
কাশ্যপের স্ট্র্যাটেজি তৈরিতে অবশ্য চমক একটাইলেফট হাফে সাবিথের অন্তর্ভুক্তি! তাঁর সওয়া ঘণ্টার অনুশীলন দেখে মনে হল, ফুটবলারদের তাগিদের উপরই নির্ভর করে বসে রয়েছেন সন্তোষ। আরও পরিষ্কার করে বললে, রক্ষণ সংগঠনের চেয়ে ওডাফা-টোলগে যুগলবন্দির উপর মোহন-কোচ নির্ভর করছেন বেশি। বলেও দিলেন, “কঠিন ম্যাচ। গোল পেয়ে গেলে কিন্তু ম্যাচটা আমরা বের করে নেব।”
সঞ্জয় সেনের আবার ঘুম ছুটে গিয়েছে রক্ষণ সংগঠন করতে গিয়ে। বেলো রাজ্জাক কার্ডের জন্য বাইরে। বেলোর জায়গায় কাকে খেলাবেন তা নিয়েই চিন্তা প্রয়াগ কোচের। অনুশীলনে গৌরমাঙ্গি সিংহের সঙ্গে অনুপম সরকার এবং ধনচন্দ্র সিংহকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলালেন। বললেন, “ওই একটা জায়গা নিয়েই ভাবতে হচ্ছে। শক্তি না অভিজ্ঞতা কোনটাকে গুরুত্ব দেব তা নিয়েই ভাবছি।” কিন্তু র‌্যান্টির সঙ্গে জুটিতে কেন ভিনসেন্টের তো কালই প্রথম ম্যাচ? “ও সব অনুশীলনে করিয়ে নিয়েছি,” বলে দিলেন সঞ্জয়।
কিন্তু ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের ঝনঝনানির এই ম্যাচে জিতবে কে? হোসে ব্যারেটো বললেন, “বলা খুব কঠিন। বলতে পারেন ফিফটি ফিফটি।” পরিসংখ্যান অবশ্য এগিয়ে রাখছে প্রয়াগকেই। গত বছর এই ম্যাচে একবারও যে জেতেনি গঙ্গাপারের ক্লাব!

ছবি: উৎপল সরকার

শুক্রবারে আই লিগ

মোহনবাগান: প্রয়াগ (যুবভারতী ২-৩০)
স্পোর্টিং:ডেম্পো (মারগাঁও)
লাজং:সালগাওকর (শিলং)




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.