আমি চাপ নিই, টিমের বাকিরা বরং মজা করুক
জানি, আমাকে দেখে অনেকেই ভাবেন, আমার নামের মতো আমি ছেলেটাও বেশ গম্ভীর। সত্যিটা কিন্তু অন্য। আরে বাবা, আমিও তো একজন ক্রিকেটার। ছোট থেকে একঝাঁক হুল্লোড়বাজ ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলে বড় হয়েছি। এখনও আমার চারপাশে যারা থাকে, তারাও কম ফুর্তিবাজ নয়। তা হলে আমিই বা গম্ভীর থাকব কী করে? জেনে কেউ খুশি হবেন, বা কেউ অবাক হবেন, আমিও ওদেরই মতো। তবে নিজের এই প্রবৃত্তিটাকে একটু চেপে রাখার চেষ্টা করি। শান্ত থেকেই সবসময় মজা করার চেষ্টা করি। তবে আমার দলের ছেলেরা একেবারেই আমার মতো নয়। হইহুল্লোড় করতে তারা প্রত্যেকেই এক একজন ওস্তাদ।
কেকেআরের সাজঘরে সব সময়ই তুমুল হইচই। কখনও সুনীল নারিনের চুলের স্টাইল নিয়ে ঠাট্টা-ইয়ার্কি হচ্ছে, কখনও আমার নকল করছে কেউ। কখনও আবার ইউসুফ পাঠান এমন জোকস বলছে, যাতে বেশ কষ্ট করে হাসতে হয়। তাই নিয়েও আবার পাল্টা ইয়ার্কি। কখনও ইকবাল আবদুল্লার শাহরুখ খানকে নকল করা দেখে আমরা সবাই মিলে হাসছি। ও দিকে আবার বিজয় দাহিয়া মাঝে মাঝেই যা এক একটা মন্তব্য করে, তা শুনে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাওয়ার উপক্রম হয়। সেরা ক্রিকেটারের দল হওয়ার পাশাপাশি কেকেআর-কে তাই আস্ত একটা কমেডিয়ানদের দল বললেও বোধহয় খুব একটা ভুল হয় না। বিশ্বাস করুন, আমাদের দলটা এরকমই পাগল।
এখনও যদি আপনার বিশ্বাস না হয়, তা হলে বরং একটা উদাহরণ দিই। সেদিন পচেস্ট্রুমে নেটে ব্যাপক পেটাচ্ছিল ইউসুফ পাঠান। বিশাল বিশাল সব শট। ওর ব্যাটে লেগে বল প্রায়ই আছড়ে পড়ছিল বেশ দূরে। ইউসুফের এই রুদ্রমূর্তি দেখে বিজয়ভাই আমাদের যোগ বিশারদ অরবিন্দকে তার নিজস্ব ভঙ্গিমায় জিজ্ঞাসা করল, “অরবিন্দজি, দিল্লি যানা হ্যায়?” অর্থাৎ দিল্লি যেতে চান? অরবিন্দ বুঝতেই পারল যে বিজয়ভাই একটা বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য তৈরি হচ্ছে। সে উত্তর দিল, “হাঁ জি, জাউঙ্গা” মানে, যাব। এর পরই বিজয় ভাইয়ের মন্তব্য, “বল পর ব্যায়ঠ যাও, ইউসুফ বহুত লম্বে লম্বে ছক্কে মার রহা হ্যায়। আপকো দিল্লি ভি পৌঁছা দেগা” মানে বলের ওপর বসে পড়, ইউসুফই তোমাকে দিল্লি পৌঁছে দেবে। বিজয় ভাইয়ের এমন আকস্মিক মন্তব্য শুনে আমাদের সবারই প্রায় হেসে লুটোপুটি খাওয়ার অবস্থা।
দলের মধ্যে এসব হয় বলেই তো খুব কঠিন সময়েও চট করে আমাদের কাউকে টেনশনে পড়তে দেখা যায় না। আমি মাঠের মধ্যে চাপে থাকি ঠিকই, কিন্তু আমি চাপে থাকি বলে যে দলের অন্যদেরও চাপে থাকতে হবে এমন কোনও কথা আছে না কি? বরং আমি চাই এই আঁচটা যেন ওদের গায়ে না লাগে। ওরা এভাবেই ক্রিকেটকে উপভোগ করে যাক। আমি চাই ইউসুফ ইউসুফই থাকুক, শান্তশিষ্ট বাধ্য ছেলের মতোই থাকুক সুনীল নারিন। মনোজ তিওয়ারি জামার হাতা গুটিয়ে তেড়েফুঁড়ে বল আকাশে উড়িয়ে যাক। যে কোনও কঠিন পরিস্থিতিতে ব্রেট লি-র মুখে লেগে থাকুক সেই কোটি টাকার হাসিটা। এটাই তো আসল কেকেআর।
এবার বরং একটু ক্রিকেটে ফিরে আসি। এবারের আইপিএলে আমরা জাক কালিসকে অনেকটা স্বস্তি দিতে পেরেছিলাম। ওকে আমরা ওর মতো থাকতে দিয়েছিলাম। আমাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এটাও অন্যতম কারণ বলতে পারেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫ হাজার রান ও ৬০০-র ওপর উইকেট আছে যার, তাকে আর নতুন করে বলার কী আছে? ওকে ওর মতো থাকতে দেওয়াই ভাল। ব্যাপারটা অনেকটা যে কোনও কর্পোরেট সংস্থার মতো। চাপটা বেশির ভাগই নিতে হয় সিইও-কে। অন্যদের তাদের মতো কাজ করতে দাও। যার যার নিজের কাজের দায়িত্ব নিজেরই। এক্ষেত্রেও নিয়মটা প্রায় একই।
আর একটা কথা, ইউসুফের ফর্মে ফেরার দিকেও তাকিয়ে রয়েছি আমি। বুধবার আমাদের প্রস্তুতি ম্যাচে যে ও ৪০-এর ওপর রান পেয়েছে, তা জানাতে তো প্রায় ভুলেই যাচ্ছিলাম। তাও আবার অপরাজিত। মনোজ তিওয়ারির ৫০-এর ওপর রান পাওয়ার খবর তো নিশ্চয়ই জেনেই গিয়েছেন আপনারা। মনবিন্দর বিসলাও ৪০-এর ওপর রান করেছে। ওদের তিনজনকেই সাজঘরে ফিরিয়ে আনতে হয় অন্যদের ব্যাট করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। না হলে আরও কত যে রান করত, তার কোনও ঠিক নেই। বালাজি যেভাবে নিজের স্বাভাবিক ফর্মে ফিরে আসছে, তা দেখেও আমি বেশ আশাবাদী হয়ে উঠছি। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে খুব ভাল বল করেছে বালা।
এই লেখা যখন আপনারা পড়ছেন, তখন অবশ্য আমরা আরও একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে ফেলেছি হাইভেল্ড লায়ন্সের বিরুদ্ধে। পরের লেখায় সেই ম্যাচটা নিয়ে আলোচনা করা যাবে। তত দিন পর্যন্ত ভাল থাকুন আর আমার লেখা নিয়ে কিছু মন্তব্য করার থাকলে অবশ্যই চিঠি লিখে জানাবেন। কেমন লিখছি, আমার কাছে আরও কী চান আপনারা, এসব জানলে আমারও সুবিধা হবে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.